রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের ভেতরে অধ্যক্ষকে চড় মেরেছেন এক সহকারী অধ্যাপক। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষক জয়নাল আবেদিন নগরীর বোয়ালিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযুক্ত শিক্ষক সিরাজুল ও জয়নাল আবেদিন রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালীর আদর্শ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে নগরীর সোনাদিঘীর মোড় এলাকার শিক্ষা অফিসে এই ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর থেকে জয়নাল আবেদিন কলেজে অনুপস্থিত। আর অভিযুক্ত সিরাজুল হক কলেজের ভূগোল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি নিজেকে অধ্যক্ষ দাবি করলেও কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাকে এই দায়িত্ব দেননি। তবে জয়নাল আবেদিন ও সিরাজুল হক দুজনই নিজেদের অধ্যক্ষ দাবি করছেন।
লিখিত অভিযোগে জয়নাল আবেদিন নিজেকে অধ্যক্ষ হিসেবেই পরিচয় দিয়েছেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, বুধবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার (মাউশি) রাজশাহী আঞ্চলিক পরিচালকের কার্যালয়ের চতুর্থ তলায় কর্মচারীদের কক্ষে অবস্থান করছিলেন। তখন সহকারী অধ্যাপক সিরাজুল হক তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এসময় তাকে প্রাণনাশেরও হুমকি দেয়া হয়।
ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, পরিচালকের কার্যালয়ের এক কর্মচারীর কক্ষের দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন জয়নাল আবেদিন। সিরাজুল হক ভেতরে ঢুকে তাকে দেখেই চড় মারেন। এরপর তাকে দেয়ালের সঙ্গে গলা চেপে ধরেন। তারপর সিরাজুল হককে কক্ষ থেকে বের করে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে জয়নাল আবেদিনের মুঠোফোনে কল করা হলে বন্ধ পাওয়া গেছে। তাই এ বিষয়ে তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সিরাজুল হককে ফোন করা হলে তিনি সড়কে যানজটে আছেন। কিছুক্ষণ পরে কল করার কথা বলে কেটে দেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে বোয়ালিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী মাসুদ বলেন, জয়নাল আবেদিন অভিযোগ করতে আসবেন, এটা জানতাম। অভিযোগ দিয়েছে কি না জানি না। অভিযোগ দিয়ে থাকলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গভর্নিং বডির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহরাব হোসেন বলেন, কলেজে এখন কে অধ্যক্ষ সেটা নিয়েই জটিলতা চলছে। জয়নাল আবেদিন অনুপস্থিত থাকলেও তিনি আবার আলাদা কমিটিও অনুমোদন করিয়ে এনেছেন আমাকে না জানিয়ে। এসব ব্যাপারে করণীয় জানতে চেয়ে আমি জেলা প্রশাসক স্যারকে লিখেছিলাম। জেলা প্রশাসন আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতামত চেয়ে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি।
শিক্ষা ভবনে জয়নাল আবেদিনকে আরেক শিক্ষকের মারধরের ঘটনায় ইউএনও বলেন, এ রকম ঘটনা ঘটে থাকলে তো সেটা ফৌজদারি অপরাধ। এ জন্য পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। তবে দীর্ঘ সময় ধরে কলেজে উপস্থিত ছিলন জয়নুল আবেদিন। সেই সময়ে নিজের ইচ্ছে মত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন সিরাজুল হক। কলেজের বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।