ঢাকার আদাবর থানার একটি হত্যা মামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এক যুবদল নেতাকে আসামি করা হয়েছে। মামলাটির প্রধান আসামি আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্য আসামিদের মধ্যে সাবেক কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রীসহ এমপি ও পুলিশ কর্মকর্তারা রয়েছেন।
আদাবরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আলী মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে মামলাটি হয়েছে। এতে নাসিরনগর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ভলাকুট ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি মো. তৌহিদুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে এই যুবদল নেতাকে কৃষকলীগ নেতা হিসেবে মিথ্যা পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে।
আদাবরের শেখেরটেকের ৫ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা মো. তোহা খান (৩৯) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গত ২০ নভেম্বর মামলাটি দায়ের করেন। সিআর মামলা নং-১৩৩২/২৪ (আদাবর), স্মারক নং ৩১২৫, তারিখ: ২০/১১/২৪ ইংরেজি মূলে গত ৩০ নভেম্বর আদাবর থানায় এটি এফআইআর হয়।
এই মামলায় শেখ হাসিনার পর ২ নম্বর আসামি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ৩ নম্বরে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ৪ নম্বর আসামি সাবেক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। ৫ নম্বর আসামি করা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনের সাবেক এমপি বদরুদ্দোজা মো. ফরহাদ হোসেন সংগ্রামকে।
মামলায় ১২৭ জনকে এজাহারনামীয় এবং ১০০ থেকে ২০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। এরমধ্যে ৩৯ নম্বর আসামি নাসিরনগরের ভলাকুট গ্রামের চৌকিদার পাড়ার হাজী হুরন আলীর ছেলে যুবদল নেতা মো. তৌহিদুল ইসলাম। মামলার এজাহারে গত ১৯ জুলাই আদাবর থানাধীন হাউজিং গেটের সামনের পাকা রাস্তায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিলে হামলা এবং গুলি চালালে শেখেরটেকের আলী মিয়া (৪৬) নিহত হন বলে অভিযোগ করা হয়।
মামলাটিতে তৌহিদুল ছাড়াও নাসিরনগরের চাতলপাড় ইউনিয়নের আরও কয়েকজন এবং সরাইল ও নবীনগর উপজেলার কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলায় আসামি যুবদল নেতা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, যেখানে এই ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ঢাকায় গেলেও আমার জীবনে আদাবর যাইনি। ঘটনার তারিখে আমি ভলাকুট গ্রামেই ছিলাম। দলে আমার প্রতিপক্ষের লোকজন প্রতিহিংসাবশত এটি করেছে বলে ধারণা করছি। আওয়ামী লীগ আমি জীবনে করিনি। ১৯৮৯ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় নিজ ইউনিয়নে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হয়েছি। পরে হয়েছি ইউনিয়নের সভাপতি এবং উপজেলায় যুগ্ম আহ্বায়ক।
ভলাকুট ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাজী বরকত উল্লাহ বলেন, ষড়যন্ত্র করে এসব মিথ্যা মামলায় নাম ঢোকানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সময়ও তৌহিদুলের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। এখনো দেওয়া হচ্ছে। প্রশ্ন তাহলে আমরা বিএনপি করে আর কী করব।
নাসিরনগর উপজেলা বিএনপি সভাপতি আবদুল হান্নান বলেন, এটা খুব দুঃখজনক। তৌহিদুল ইসলাম আমার সঙ্গে আন্দোলন–সংগ্রামে ছিল। কোনো অদৃশ্য শক্তি এই কাজ করেছে। আমরা তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য দল থেকে প্রত্যায়নপত্র দেব। দলের জেলা ও কেন্দ্রকে বিষয়টি অবহিত করব। যারা নেক্কারজনক এই কাজে জড়িত তাদেরও বিচার দাবি করছি।
এ ব্যাপারে জানতে মামলার বাদী মো. তোহা খানের সেলফোন নম্বরে কল করে সাড়া পাওয়া যায়নি। নম্বরটি ফরোয়ার্ড করে রাখা হয়েছে।
ঢাকার আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজ ইমতিয়াজ ভূইয়া বলেন, মামলাটি আদালত থেকে এসেছে। আদালত আমাকে মামলা নিতে বলেছেন। মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের অনেককে এবং নিরীহ মানুষকে আসামি করা হয়েছে– বিষয়টি আমি জানি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একজন আইনজীবী মামলাটি করিয়েছেন বলে আমি জানতে পেরেছি। বাদী হয়ত ঘটনা জানেও না। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে বাদীর কথা হয়েছে। তবে তিনি কথা বলতে চান না। আসামিদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখছি। মামলার সঠিক তদন্তই হবে।