বাংলাদেশে মানবাধিকার হরণের যে মহোৎসব চলছে তার প্রতিবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগ বিবৃতি দিয়েছে। আওয়ামী লীগ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে এ বিবৃতিটি প্রকাশ করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়- বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার রক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। এ ঘোষণাপত্রে উল্লেখ আছে, জন্মস্থান, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বিশ্বাস নির্বিশেষে মানবাধিকার সর্বজনীন। মানুষ জন্মগতভাবেই বিশ্বজনীন স্বীকৃত মানবাধিকারগুলো ভোগ করার অধিকার প্রাপ্ত। এক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে এসব অধিকার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করতে পারে না। এবারের মানবাধিকার দিবসের প্রতিপাদ্য ‘আমাদের অধিকার, আমাদের ভবিষ্যৎ এখনই’। কিন্তু সর্বজনীন মানবাধিকার দিবসকে সামনে রেখে উঠে আসা তথ্য-উপাত্ত বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে হতাশাজনক চিত্রের পরিস্ফুটন ঘটায়। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট এই সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর থেকে বাংলাদেশ এক গভীরতর সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মানবিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে নিদারুণ বিপর্যয় ঘটেছে। রাজনৈতিক মতাদর্শ বিবেচনায় একটি জনগোষ্ঠীকে রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন করার সুস্পষ্ট পাঁয়তারা চালাচ্ছে। সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ প্রগতিশীল চেতনাসম্পন্ন ব্যক্তিদের উপর নজিরবিহীন অত্যাচার নির্যাতন চালানো হয়; এমকি তাদের হত্যা করা হয় এবং তাদের বাসাবাড়ি, অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। রাষ্ট্রীয় মদদে ঘৃণা উৎপাদন করে বিভেদের রাজনীতির ছক একে নির্বিচারে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়। তাদের রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার লক্ষ্যে হেন কোনো পন্থা নাই যে তা অবলম্বন করা হচ্ছে না।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়- বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের নামে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা, ভিত্তিহীন,বানোয়াট ও হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হচ্ছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শত শত মনগড়া হত্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে প্রহসনমূলক বিচারের আয়োজন করা হয়েছে৷ যা সম্পূর্ণভাবে মানবাধিকারের লঙ্ঘন ও আইনের শাসনের পরিপন্থি। আবার বাছ-বিচারহীনভাবে গণগ্রেফতার চলছে; যা থেকে নারী, বৃদ্ধ, কিশোর পর্যন্ত রেহাই পায়নি। এছাড়া জাতি ও ধর্ম বিবেচনা করে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। ফলে, সনাতনী ধর্মাবলম্বী-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষের উপর আক্রমণ করে হত্যা করা হচ্ছে। যা গণহত্যার শামিল। তাদের উপাসনালয় ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর চালানো হচ্ছে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে এ সকল মানুষকে প্রান্তিক করে ফেলা হচ্ছে এবং তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যতের মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার বাংলাদেশে ঐতিহ্যগতভাবে বিদ্যমান সামাজিক সংহতি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মর্মমূলে আঘাত করেছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পথযাত্রায় একটি কলঙ্কিত পদচিহ্ন এঁকে দিচ্ছে এই সরকার।
সব শেসে উল্লেখ করা হয়- বাংলাদেশকে এই মানবিক বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা থেকে প্রেরণা নিয়ে এই অপশক্তিকে রুখে দিতে না পারলে এই সংকট আরও ঘনীভূত হবে, আমরা তা হতে দিতে পারি না। বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে নিজের অধিকারের প্রতি সোচ্চার হোন; পাশাপাশি অন্যের অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন। বিভেদের রাজনৈতিক কূটচালকে ছুঁড়ে ফেলে মানুষে মানুষে সম্পর্ক ও বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে আমরা মানবিক সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণ করব, ইনশাল্লাহ।