রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন কবি হেলাল হাফিজ। শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের মূল দরজার বাম পাশে বুদ্ধিজীবীদের জন্য নির্ধারিত কবরস্থানে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে।
এর আগে সকালে বাংলা একাডেমিতে কবি হেলাল হাফিজের প্রথম জানাজা এবং দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে দ্বিতীয় জানাজা হয়।
শুক্রবার দুপুরে পরীবাগের সুপার হোম নামে হোস্টেলের শৌচাগারের মেঝেতে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায় বরেণ্য এই কবিকে। হোস্টেলের অন্য রুমের বাসিন্দারা তাকে দরজা ভেঙে সেখান থেকে উদ্ধার করেন। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কবি হেলাল হাফিজ দীর্ঘদিন ধরে গ্লুকোমায় আক্রান্ত ছিলেন। পাশাপাশি কিডনি জটিলতা, ডায়াবেটিস ও স্নায়ু জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনায় জন্মগ্রহণ করেন হেলাল হাফিজ। বেড়ে ওঠা সেখানেই। ১৯৬৭ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ১৯৭২ সালে তিনি তৎকালীন জাতীয় সংবাদপত্র দৈনিক পূর্বদেশে যোগ দেন।
১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন দৈনিক পূর্বদেশের সাহিত্য সম্পাদক। ১৯৭৬ সালের শেষদিকে তিনি দৈনিক দেশ পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক পদে যোগ দেন। সর্বশেষ তিনি দৈনিক যুগান্তরে কর্মরত ছিলেন।
হেলাল হাফিজের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৬ সালে। কবিতাগুলো লেখা হয় ১৯৬৯ থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে। তার কবিতায় প্রেম-বিরহ, দ্রোহ দারুণভাবে ফুটে ওঠে।
২০১২ সালে ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ কাব্যগ্রন্থের কবিতার সঙ্গে আরও কিছু কবিতা যুক্ত করে প্রকাশ করা হয় হেলাল হাফিজের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতা একাত্তর’। সর্বশেষ ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় তৃতীয় কবিতার বই ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’।
২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান হেলাল হাফিজ। এছাড়া, যশোহর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার, নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজ পুরস্কার ও কবি খালেদদাদ চৌধুরী সাহিত্য পদকসহ আরও অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।