আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে অভিযুক্ত করে গুম কমিশনের ঢালাওভাবে করা প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আজ সোমবার আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এ বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়।
বিবতিতে বলা হয়- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনে করে, এই প্রতিবেদন সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মেনে করা হয়নি। প্রচলিত কল্পকথা ও তথাকথিত শ্রুত কাহিনীর উপর ভিত্তি করে মনগড়া এই প্রতিবেদন করা হয়েছে। যার টেম্পলেট সরকারের উচ্চমহল থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। আর কমিশনের কাজ ছিল পূর্ব নির্ধারিত ফ্রেমে কিছু বয়ান তৈরি করা। সেটা যদি না-ই হবে তাহলে তথাকথিত এই গুম-খুনের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা অভিযুক্ত হন কীভাবে? এটাকে তথাকথিত বলার কারণ হলো, এমন অনেক গুমের গল্প পূর্বে রচিত হয়েছিল, যার অনেকগুলো পরবর্তীতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় প্রথম এ ধরনের গুমের অভিযোগ তোলা হয়েছিল। পরবর্তীতে দেখা যায় যে, তারা খুনের শিকার হয়েছিল এবং যারা খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে। আবার কুষ্টিয়ার এক যুবক ৪-৫ বছর নিখোঁজ থাকায় এটাকে গুমের ঘটনায় রূপ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে দেখা যায়, দেশের অন্য একটি জেলায় সে বসবাস করছে এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে।
এছাড়া দেখা যায়, ভিন্ন মতের কেউ কোনো কারণে নিখোঁজ হলেই সেটাকে রাজনৈতিক রঙ দেওয়ার জন্য সরকারের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ তোলা হত। অথচ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও নিখোঁজ হয়েছে। যাদের খুেঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে যুবলীগের নেতাকর্মী নিখোঁজ হয়েছিল, যাদের হদিস পরবর্তীতে পাওয়া যায়নি। এমনকি গত জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডে অনেককে মৃত দেখিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা হত্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে দেখা যায়, তারা জীবিত আছে। জুলাই-আগস্টে তথাকথিত আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশবাহিনীর সদস্যদের হত্যা করা হয়েছে। ১৫ই জুলাই থেকে যারা ভাঙচুর, হত্যাযজ্ঞ, অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসযজ্ঞ তাদেরকে দায়মুক্তি দিয়েছে এই সরকার। যে সরকার সংঘটিত এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দায়মুক্তি প্রদান করে তাদের কোনো প্রতিবেদন জনগণের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। এছাড়াও আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত নির্বিচারে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী, হিন্দুসহ অন্যান্য সম্প্রদায়, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ হাজার হাজার মানুষ গুম, নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে, পুলিশ ও আনসার সদস্য গুম হয়েছে, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য এই প্রতিবেদনে কেন দেওয়া হয় নাই? ঐ কমিশন যদি নিরপেক্ষ ও নির্মোহভাবে তালিকা করত, তাহলে এসব তথ্য ও উল্লেখ করা হতো। যেহেতু ফরমায়েশি তথ্য দিয়ে তৈরি করা হয়েছে তাই সত্য কথাটা বলার সাহস হয় নাই।
জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারের সময় দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে ভালো ছিল।উগ্র-সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ছিল শূন্যের কোঠায়। মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা স্বাভাবিক ছিল এবং জানমালের নিরাপত্তা ছিল। যে কারণে আমাদের আর্থ-সামাজিক সবক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছিল। জঙ্গিবাদ দমন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন-অগ্রগতির কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশংসিত হয়েছিল। দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে অনেককে গ্রেফতার করে থাকে। তবে সেটা প্রচলিত আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নয় এবং আইনানুযায়ী
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার নিয়ম রয়েছে। সুতরাং বানোয়াট গুম খুনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা অভিযুক্ত করাটা রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দুরভিসন্ধিমূলক। সুতরাং বিভিন্ন ভিত্তিহীন গল্প ও কল্পকথার উপর ভিত্তি করে গুমকমিশনের করা মনগড়া প্রতিবেদনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একসাথে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ফ্যাসিস্ট ইউনূসের নেতৃত্বে অবৈধ দখলদার সরকারকে এসব প্রতিবেদন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির কণ্ঠরোধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করার দাবি জানাচ্ছি।