কমলনগরে মাকে বেঁধে রেখে এক তরুণীকে গণধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে নির্যাতনের শিকার ওই তরুণীর হতদরিদ্র পরিবার এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। এরপর থেকে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য অপচেষ্টা করছেন বলে ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ।
গত ৯ ডিসেম্বর রাতে উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর পরিবারের। এমতাবস্থায় তার পরিবারকে নিরাপত্তা প্রদানসহ ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত ও উপযুক্ত বিচারের দাবি করেছেন মানবাধিকার কর্মী রেবেকা মহসিন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মেঘনা নদীর ভাঙনের শিকার হয়ে কয়েক বছর আগে ওই তরুণীর পরিবার চরকাদিরা ইউনিয়নে বসতি গড়ে। বাবা ফেনী শহরে অবস্থানের কারণে মা ও ছোট দুই ভাইসহ তরুণী বাড়িতে থাকেন। ৯ ডিসেম্বর রাতে পাঁচ যুবক হাঠৎ করে তরুণীর বসতঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে প্রথমে তার মাকে হাত ও মুখ বেঁধে ফেলে। পরে তাদের মধ্যে থেকে একজন তরুণীকে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে তাদের (মা-মেয়ে) সঙ্গে থাকা স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নিয়ে তারা পালিয়ে যায়।
তরুণীর মা জানান, ঘটনার দিন বিকালে অপরিচিত কিছু যুবক বাড়িতে এসে পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর নিয়ে যায়। স্বামী বাড়িতে না থাকায় প্রতিদিনের মতো রাতের খাবার খেয়ে মেয়ে ও দুই শিশুপুত্রকে নিয়ে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ২টার দিকে হঠাৎ করে ঘরের দরজা ভেঙে পাঁচ যুবক ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় রনি নামে প্রতিবেশী এক যুবককে চিনতে পেরে চিৎকার করলে তারা তার মুখে কাপড় গুঁজে দেয়। পরে তিন জন তার হাত বেঁধে রাখে এবং দুজন মেয়ের কক্ষে যায়। একপর্যায়ে মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়। এ সময় মেয়েকে রক্ষায় তিনি বারবার আকুতি করলেও তারা শোনেনি।
তরুণীর মা আরও জানান, ঘটনা জানতে পেরে পরদিন সকালে তার স্বামী ফেনী থেকে বাড়িতে এসে এলাকাবাসীর কাছে ঘটনার বিচার দাবি করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযুক্ত রনি সহযোগীদের নিয়ে বাড়িতে এসে তাদের হুমকি-ধমকি দিলে স্থানীয়রা তাকে আটক করে। এ সময় কামাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি নিজেকে সেনাসদস্য পরিচয় দিয়ে রনিকে ছাড়িয়ে নেয়। পরবর্তীতে বিএনপির স্থানীয় এক নেতাসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বিচারের নামে কালক্ষেপণ করতে থাকে। কিন্তু অভিযুক্তদের লোকজন তাদের বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসায় দিশেহারা হয়ে সোমবার তার স্বামী বাদী হয়ে রামগতিতে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
তরুণীর বাবা জানান, নদীভাঙনের শিকার হয়ে তিনি সর্বস্ব হারিয়ে এখন রিকশা চালিয়ে কোনও রকম জীবিকা নির্বাহ করছেন। নিরীহ হওয়ায় অর্থ সঙ্কটসহ স্থানীয়দের বিচারের আশ্বাসের কারণে থানা পুলিশের কাছে যাননি। পরে প্রভাবশালীদের কালক্ষেপণের বিষয়টি বুঝতে পেরে সেনাক্যাম্পে অভিযোগ দিয়েছেন।
এদিকে হতদরিদ্র পরিবারের তরুণীকে ধর্ষণ ও অভিযুক্তদের লোকজনের হুমকি-ধমকিতে পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার সংগঠনের নেতারা। এশিয়া ছিন্নমূল মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের কমলনগর উপজেলা সভাপতি রেবেকা মহসিন বলেন, ‘বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা প্রদানসহ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি করছি।’
চরকাদিরা ইউপি সদস্য ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ জানান, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন এবং আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ভুক্তভোগী পরিবারকে পরামর্শ দিয়েছেন।
রামগতি সেনা ক্যাম্পের কমান্ডার ক্যাপ্টেন ইয়ামান জানান, সোমবার তারা অভিযোগটি পেয়েছেন। সেনাবাহিনীর একটি গোয়েন্দা দল এ নিয়ে কাজ করছে। এ ছাড়া ভিকটিমকে থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ তহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। এখনও অভিযোগ পাইনি। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’