নাচোলে মঙ্গলবার রাতে দুইজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। দুজনই ছাত্রলীগ করতেন৷ পুলিশ এ হত্যাকাণ্ডে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক দেখছে না। তবে এক নিহতের বাবা বলেছেন, ‘আপনারা এসে দেখে যান কী ঘটেছে।’ মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মামলা কী করবো? আমি এখন বিপদে আছি।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে নিহতদের একজন ছাত্রলীগ এবং অন্যজন কিশোর ছাত্রলীগের সাধারণ কর্মী ছিলেন বলে জানা গেছে। তারা একই গ্রামের বাসিন্দা এবং আত্মীয়।
নিহতরা হলেন মাসুদ রানা (২১) এবং রায়হান আলী(১৪)। বিজয় দিবসের পরদিন ১৭ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) রাত ১১টার দিকে নাচোলে মল্লিকপুর বাজারে বিজয় দিবসের একটি অনুষ্ঠান চলাকালে সেই অনুষ্ঠানের পাশেই তাদের হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় আরো অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন।পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল স্থানীয় শহিদ জিয়া স্মৃতি সংঘ। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন নাচোল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। তবে ঘটনারসঙ্গে জড়িত সন্দেহে দুই জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
কয়েকটি সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টে বলা হয়েছে ওই অনুষ্ঠানে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ায় তাদের কুপিয়ে ও ছরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। আবার কোনো খবরে বলা হয়েছে তারা দেয়ালে জয় বাংলা লেখায় তাদের হত্যা করা হয়েছে। তারা ছাত্রলীগ হওয়ায় তাদের হত্যা করা হয়েছে- এমন দাবি করে কেউ কেউ ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন।
যে মল্লিকপুর বাজারে মঙ্গলবার রাতে হত্যার ঘটনা ঘটে, সেই বাজারটি নাচোল উপজেলা সদর থেকে ১৫-১৬ কিলোমিটার দূরে। নিহত মাসুদ রানার মাসুদ রানার বাবা এজাবুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘কেন আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে, তা আমি এখন বলতে পারব না। আমি টেলিফোনে কিছু বলতে পারব না। আপনারা এসে দেখে যান কী ঘটেছে।’ তার ছেলের রাজনৈতিক পরিচয় ও জয় বাংলা স্লোগান সম্পর্কেও তিনি কিছু বলতে রাজি হননি। মামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, ‘মামলা কী করবো? আমি এখন বিপদে আছি।’
তবে মাসুদ রানার ভাই মোহাম্মদ মোস্তাকিম বাবু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমার ভাইকে পেটে ছুরি চালিয়ে হত্যা করা হয়। বাজারে একটি অনুষ্ঠান চলছিল। তার পাশেই রাতে আমার ভাই এবং চাচাতো ভাই রায়হানকে হত্যা করা হয়। আরো কয়েকজনকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে।’
কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্রামের নাম খলসি। পাশের গ্রাম মল্লিকপুর। ১৫ দিন আগে একটি পেয়ারা বাগানে মল্লিকুকুপুরের একজনের ভিডিও করে তা ফেসবুকে দিলে দ্বন্দ্ব হয়। ভিডিও দিয়েছিল খলসি গ্রামের একজন। তারই জেরে ওই রাতে খলসি গ্রামের যাকে পেয়েছে, তাকেই কুপিয়েছে। আহত ও নিহত সবাই খলসি গ্রামের।’
তিনি বলেন, ‘অনুষ্ঠানে কোনো ঝামেলা হয়নি। জয় বাংলা স্লোগানের কোনো ঘটনাও হয়েছে কিনা জানি না। আমার ভাই ছাত্রলীগ করত কিনা তা-ও জানি না। আগের ঝামেলার জেরে আমার ভাই এবং চাচাতো ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। খলসি গ্রামের যাকে পেয়েছে তার ওপরই ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করা হয়েছে।’
তিনি জানান, তার ভাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র।তিন দিন আগে তিনি বাড়িতে এসেছিলেন। বুধবার সন্ধ্যার আগেই খলসি গ্রামে নিহত দুইজনকে দাফন করা হয়।