জার্মান আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) জার্মানির কোলন শহরে মহান বিজয় দিবস উদযাপন ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে। উক্ত সভায় বাংলাদেশের বর্তমান অগণতান্ত্রিক ইউনুস সরকারের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা উক্ত জনাকীর্ণ সভায় বলেন, ‘প্রতিবাদ অনেক হয়েছে, এখন থেকে প্রতিরোধ করা হবে।’
আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপর দেশজুড়ে যে হত্যা, নির্যাতন, নিপীড়ন চলছে, তা ইউনূস সরকারের নির্দেশেই হচ্ছে উল্লেখ করে এর বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমার একটাই কথা, এরা সকল সীমা ছাড়িয়ে গেছে, এখন আর বসে থাকার সময় নাই। আঘাত আসলে প্রতিরোধ করতে হবে। এই অবৈধ সরকারের হাত থেকে, এই অত্যাচার নির্যাতনের হাত থেকে দেশের মানুষকে মুক্ত করতে হবে।’
পূর্বনির্ধারিত সভায় জার্মান প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের এই রাজনৈতিক সভায় শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। সভায় শেখ হাসিনা বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলেন ও প্রবাসী নেতা-কর্মীদের দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। বক্তব্যের শুরুতেই মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদ, মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের আত্মত্যগের কথা স্মরণ করার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকন্যা বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানান দেশবাসীকে এবং একইসাথে ইউরোপের প্রবীণ রাজনীতিবিদ, সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শ্রী অনিল দাশগুপ্তের অকাল প্রয়ানে গভীর শোক প্রকাশ করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেন।
রাষ্ট্র পরিচালনাকালে দেশের মানুষের কল্যাণে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও আঞ্চলিক সমৃদ্ধির জন্য কাজ করেছেন শেখ হাসিনা, তা আবারও তুলে ধরলেন তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে। সেই সাথে মনে করিয়ে দিলেন, ভাতের অধিকারের জন্য দেশের মানুষ কীভাবে জীবন দিয়েছিল পাকিস্তানি শাসনামলে, ঠিক একইভাবে এখন মানুষ অকাতরে প্রাণ হারাচ্ছেন, সে কথা।
বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ গড়ার জন্য যে কর্মপরিকল্পনা ছিল শেখ হাসিনার, সে অনুসারে যত প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছিলেন, যার সুফল দেশবাসী ভোগ করছিল, সবই আজ ধ্বংস হয়ে গেছে, মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা আজ ধূলিস্যাৎ করে দিয়েছে অবৈধ ইউনূস সরকার, বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, ড. ইউনূসের উসকানিতেই আজ দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে লেখাপড়া পুরোপুরি ধ্বংসের পথে। আওয়ামী লীগ পরিবারের এবং ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীরা আজ পড়াশোনা করতে পারছে না, এ নিয়ে তীব্র নিন্দা জানালেন শেখ হাসিনা।
ছাত্রলীগের ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৪৮ সালে এ সংগঠনের জন্ম। দেশের প্রতিটি আন্দোলন, সংগ্রামে এ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে অকাতরে। দেশের জন্য, মানুষের জন্য এ সংগঠনের রয়েছে অনেক আত্মত্যাগ। ড. ইউনূসের উস্কানিতে সেই ছাত্রলীগের কর্মীদের জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত মিলে।
ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার সাহস ড. ইউনূসের কীভাবে হয়, কে দিয়েছে তাকে এই অধিকার- এমন প্রশ্ন তোলেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের দুই হাজারের অধিক নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ প্রসঙ্গে ড. ইউনূস সরকার ও তার আজ্ঞাবহদের মিথ্যাচার ও অপপ্রচার তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে মিথ্যাচার চালানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি কিন্তু পদত্যাগ করিনি। সাংবিধানিকভাবে আমি এখনও বাংলাদেশের জনগণের ম্যান্ডেটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী।
ড. ইউনূসের মেটিক্যুলাসলি ডিজাইনড প্ল্যানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি জনগণের ম্যান্ডট ছাড়া জোরপূর্বক মেটিক্যুলাসলি প্ল্যানে এসে ক্ষমতা দখল করেছেন। গুন্ডামি করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছেন। কাজেই ইউনূস সরকার যত সিদ্ধান্ত দিবে, সবই অবৈধ বলে গণ্য হবে। বাংলার মাটিতে ড. ইউনূস ও তার দোসরদের বিচার করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে।
বক্তব্যের একপর্যায়ে শেখ হাসিনা দেশবাসীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দেন। তিনি প্রশ্ন করেন- আওয়ামী লীগ সরকারের পরিবর্তনের পর কি দেশে জিনিসপত্রের দাম কমেছে? আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কি ইউনূস সরকার ধরে রাখতে পেরেছে? জনগণের জীবনমানের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা কি বজায় রাখতে পেরেছে?
আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার সামর্থ ইউনূস সরকারের নেই, তারা ব্যস্ত লুটপাট আর সম্পদ বানানোর কাজে, বলেন শেখ হাসিনা। দেশজুড়ে ব্যাপক ধরপাকড়, নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার কাণ্ঠে জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এসব অত্যাচার-নির্যাতন আর চলতে পারে না। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে, আমাদের নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিতে হবে।
দুর্নীতি ও অর্থপাচারের প্রসঙ্গে ড. ইউনূসকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি আর আমার পরিবার নাকি শত শত কোটি টাকা পাচার করে নিয়ে গেছি। আমি চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, ইউনুসের তো এত চেনাজানা আর ক্ষমতা সারা বিশ্বজুড়ে, আমি চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি খুঁজে বের করুক, আমি কোথায় টাকা পাচার করেছি। তারা দেখাক আমি একটা টাকা দুর্নীতি করেছি।
পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়কার ভুয়া দুর্নীতির সেই উদাহরণ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতুর সময়েও তারা এমন অভিযোগ করেছে, পরে আন্তর্জাতিক আদালতে তা মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর চলমান নৃশংসতা ও নিপীড়নের বিষয়টি শেখ হাসিনার কাছে তুলে ধরেন জার্মান আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। এসময় তারা করণীয় জানতে চান।
জবাবে শেখ হাসিনা পাল্টা প্রতিরোধের নির্দেশ দিয়ে নেতাকর্মীদের বলেন, ‘তোমরা নির্দেশনা চাচ্ছিলে না? এটাই তোমাদের প্রতি আমার নির্দেশনা। পড়ে পড়ে আর মার খাওয়া যাবে না, দেশের মানুষকে উদ্ধার করতে হবে, মুক্ত করতে হবে।’
উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন জার্মান আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর হক খান ও সঞ্চালনা করেন জার্মান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোবারক আলী ভূঁইয়া ও জার্মান আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নুরজাহান খান নুরি । বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।