২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সড়কপথে চরম নৈরাজ্য-বিশৃঙ্খলা আর আইন না মেনে বাহন চলাচলের কারণে ছোট-বড় ৩৮ হাজার ৫৪০ দুর্ঘটনায় আহত ৩৭ হাজার ১১৩ এবং নিহত হয়েছেন ৬ হাজার ৪৪৪ জন। ৩০ ডিসেম্বর ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে সেভ দ্য রোড-এর বাৎসরিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে সেভ দ্য রোড-এর মহাসচিব শান্তা ফারজানা আরো জানান, বাইক লেন না থাকা, সেভ দ্য রোড-এর নিয়মিত প্রতিবেদন-সচেতনতা ক্যাম্পোইনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির পরও রাইড শেয়ারিং এবং ৩৫০ সিসিসহ দ্রুতগতিসম্পন্ন মোটরসাইকেলের কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে ১০৯৮১টি। ছোট-বড় এই দুর্ঘটনাগুলোতে আহত হয়েছেন ৯৮৬৬ এবং নিহত হয়েছেন ১৩০৩ জন। ৮৩১৩টি ট্রাক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৬৯৫০ এবং নিহত হয়েছেন ১৩১৬ জন।
নির্ধারিত গতিসীমা না মেনে, বিশ্রাম না নিয়ে টানা ১২ থেকে ২০ ঘন্টা বাহন চালানোসহ নির্ধারিত ট্রাফিক আইনসহ প্রয়োজনীয় নিয়ম না মানায় ৯৪৩৯টি ছোট-বড় বাস দুর্ঘটনায় আহত ৯২৯১ এবং নিহত হয়েছেন ২০২৮ জন; সেই সাথে দায়িত্বে অবহেলা, স্থানিয় পুলিশ-প্রশাসনের দুর্নীতিসহ বিভিন্নভাবে সড়ক-মহাসড়কে অবৈধ বাহন নাসিমন-করিমন এবং অন্যান্য তিন চাকার বিভিন্ন ধরণের বাহনে ৯৮০৭ টি ছোট-বড় দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১১০২৪ এবং নিহত হয়েছেন ১৭৯৭ জন
সেভ দ্য রোড-এর চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনাম, প্রতিষ্ঠাতা মোমিন মেহেদী, ভাইস-চেয়ারম্যান বিকাশ রায়, সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিদুল মল্লিকসহ সংশ্লিষ্ট গবেষণা সেল সদস্যদের তত্ত্বাবধানে ১৭টি জাতীয় দৈনিক, ২০টি টিভি-চ্যানেল এবং ২২টি নিউজ পোর্টাল এবং স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী-সেভ দ্য রোড-এর স্বেচ্ছাসেবীগণের দেয়া তথ্যানুসারে এই প্রতিবেদনতৈরি করা হয়েছে।
সেভ দ্য রোড-এর দাবি অনুযায়ী প্রতি ৩ কিলোমিটারে পুলিশ বুথ বা ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন না করা ও হাইওয়ে পুলিশসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের পুলিশ-প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলার কারণে সড়কপথে চলতি বছরে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৯৬টি। এতে ডাকাতদের হামলায় আহত ১৫৫ এবং নিহত হয়েছেন ১ জন। এছাড়াও নারী শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে ৬১৪টি, ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১১টি। যার অধিকাংশই থানা-পুলিশের শরণাপন্ন হয়ানি বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও সেভ দ্য রোড-এর স্বেচ্ছাসেবীদের তথ্যে উঠে এসেছে। নৌপথে কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশের দায়িত্ব অবহেলার সুযোগে অন্যান্য বছরের তুলনায় ডাকাতি বেড়েছে। ১৬১টি ডাকাতির ঘটনায় সর্বশেষ ৭ জনসহ ১১ জন নিহত হয়েছেন। রেলপথে মহাখালীতে দুষ্কৃতিকারীদের ছোড়া ইট-পাটকেলে ৩১ জনসহ মোট ৫৩ জন আহত হয়েছেন।
১ জানুয়ারি থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত নৌপথে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৭১১টি। আহত ১৪৫১ জন, নিহত হয়েছেন ১১২ জন। ১ জানুয়ারি থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত রেলপথে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৮০৬টি। আহত হয়েছে ১১৭৬ জন, নিহত হয়েছে ১২৪ জন।
১ জানুয়ারি থেকে ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে আকাশপথে ৯ মে সকালে ৩২ বছর বয়সী যুদ্ধবিমানের পাইলট বিমানবাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ বিমান দুর্ঘটনায় শাহাদাত বরণ করেন। এই ঘটনা ব্যতিত আর কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলেও বিমানবন্দরের অব্যবস্থাপনার কারণে অসুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৭৬৬ জন মানুষ।
সড়কপথ, নৌপথ ও রেলপথের দুর্ঘটনামুক্ত পথ চলাচলের অধিকার রক্ষায় মালিক-শ্রমিক-প্রশাসনিক এবং সাধারণ জনগষের সমন্বয়ের কোন বিকল্প নেই বলে সেভ দ্য রোড মনে করে। পাশাপাশি সেভ দ্য রোড-এর পক্ষ থেকে গত ১৭ বছর যাবৎ ৪ পথ দুর্ঘটনামুক্ত করতে সেভ দ্য রোড-এর ৭ দফা দাবি নিয়ে কাজ করছে।
এক. মিরেরসরাই ট্র্যাজেডিতে নিহতদের স্মরণে ১১ জুলাইকে ‘দুর্ঘটনামুক্ত পথ দিবস’ ঘোষণা করতে হবে। দুই. ফুটপাত দখলমুক্ত করে যাত্রীদের চলাচলের সুবিধা দিতে হবে। তিন. সড়ক পথে ধর্ষণ-হয়রানি রোধে ফিটনেস বিহীন বাহন নিষিদ্ধ এবং কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ ও জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যতিত চালক-সহযোগি নিয়োগ ও হেলপারদ্বারা পরিবহন চালানো বন্ধে সংশ্লিষ্ট সকলকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। চার. স্থল-নৌ-রেল ও আকাশ পথ দুর্ঘটনায় নিহতদের কমপক্ষে ১০ লাখ ও আহতদের ৩ লাখ টাকা ক্ষতি পূরণ সরকারীভাবে দিতে হবে। পাঁচ. ‘ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স রুল’ বাস্তবায়নের পাশাপাশি সত্যিকারের সম্মৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে ‘ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন’ বাস্তবায়ন করতে হবে। ছয়. পথ দুর্ঘটনার তদন্ত ও সাজা ত্বরান্বিতকরণের মধ্য দিয়ে সতর্কতা তৈরি করতে হবে এবং ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠনের পূর্ব পর্যন্ত হাইওয়ে পুলিশ, নৌ পুলিশ সহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা-সহমর্মিতা-সচেতনতার পাশাপাশি সকল পথের চালক-শ্রমিক ও যাত্রীদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। সকল পরিবহন চালকের লাইসেন্স থাকতে হবে। সাত. ইউলুপ বৃদ্ধি, পথ-সেতুসহ সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যাতে ভাঙা পথ, ভাঙা সেতু আর ভাঙা কালভার্টের কারণে আর কোন প্রাণ দিতে না হয়।
সেভ দ্য রোড-এর প্রতিষ্ঠাতা মোমিন মেহেদীর সভাপতিত্বে প্রতিবেদন পাঠ ও সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন নৌ-পরিবহন বিশেষজ্ঞ মো. আনিছুর রহমান, এ্যাডভোকেট এএফএম ফরহাদ, ভাইস চেয়ারম্যান সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিদুল মল্লিক, রেজাউল করিম, উজ্জ্বল শেখ, মো. মাসুম প্রমুখ।