হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি ৯৫২ পুলিশ

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ৩ মাস আগে

৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে ভারতে যাওয়ার পর ছাত্র-জনতার তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে পুলিশ। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করলে ভুক্তভোগী ও তাদের স্বজনেরা মামলা করা শুরু করেন। হত্যা ও হত্যাচেষ্টার এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরাও আসামি হন। পুলিশের সাবেক ও বর্তমান শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কনস্টেবলরাও আসামির তালিকায় আছেন।

পুলিশ সদরদপ্তরের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত পুলিশের সাবেক ও বর্তমান মিলে ৯৫২ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার মামলা হয়েছে। এদের মধ্যে ৪৭ জন সাবেক আইজিপি ও সাবেক অতিরিক্ত আইজপি। সর্বোচ্চ সংখ্যক ১৭১ মামলার আসামি হয়েছেন সাবেক ডিবি প্রধান ডিআইজি হারুন অর রশিদ। মামলার সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ১৫৫টি মামলা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঘিরে হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন মাত্র ২৮ পুলিশ সদস্য। এদের মধ্যে সাবেক আইজিপি একেএম শহিদুল হক ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন রয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের তৎকালীন বিতর্কিত বেশরিভাগ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারে ব্যর্থ হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিষয়টি নিয়ে বৈষ্যমবিরোধী আন্দোলনকারী সমন্বয়কেরও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, পুলিশের যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ঘটনার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে আইনের অওতায় আনা হচ্ছে।

জানতে চাইলে পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, মামলা হওয়ার পর যাদের বিরুদ্ধেই সুনির্দিষ্ট তথ্য পাচ্ছি, সম্পৃক্ততা পাওয়া যাচ্ছে, তাদেরকেই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত পুলিশের ২৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

৭ সাবেক আইজিপির নামে মামলা :

সূত্র বলছে, সারাদেশে হওয়া হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলায় পুলিশের ছয় জন সাবেক আইজিপি রয়েছেন। তাদের বেশিরভাগের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। এর মধ্যে হাসান মাহমুদ খন্দকারের বিরুদ্ধে সাতটি, একেএম শহিদুল হকের বিরুদ্ধে ২৩টি, জাবেদ পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে ২টি, বেনজির আহমেদ এর বিরুদ্ধে ১১টি, চৌধুরি আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে ১৫৫টি ও সাবেক ভূতাপেক্ষা আইজিপি এম সানাউল হকের বিরুদ্ধে ১টি মামলা হয়েছে। এছাড়া বর্তমান ৫ অতিরিক্ত আইজিপিও আসামি হয়েছেন। তারা হলেন-মল্লিক ফখরুল ইসলাম, কামরুল আহসান, আবু হাসান মুহাম্মদ তারিক, ওয়াই এম বেলালুর রহমান ও সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর।

আসামি সাবেক ৩৬ অতিরিক্ত আইজিপি হলেন, নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, শেখ হেমায়েত উদ্দিন, মোখলেসুর রহমান, মো. মোখলেসুর রহমান, আবদুস সালাম, বিনয় কৃষ্ণ বালা, নওশের আলী, আছাদুজ্জমান, মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, মো. ইকবাল বাহার, ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান, ইব্রাহিম ফাতেমী, মাহবুব হোসেন, রুহুল আমিন, খন্দকার গোলাম ফারুক, শেখ মোহাম্মদ মারুফ হাসান, হুমায়ুন কবির, জামিল আহম্মেদ, আতিকুল ইসলাম, এম খুরশিদ হোসেন, বনজ কুমার মজুমদার, মনিরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার হারুন অর রশীদ, মীর রেজাউল আলম, মোহাম্মদ আলী মিয়া, মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, দিদার আহমেদ, খন্দকার লুৎফুল কবির, কৃষ্ণপদ রায়, বশির আহমেদ, হাবিবুর রহমান, আনোয়ার হোসেন, একেএম হাফিজ আক্তার, ড. খ. মহিদ উদ্দিন, মো. আব্দুল বাতেন।

আসামির তালিকায় নাম থাকা সাবেক ডিআইজিরা হলেন মো. এসএম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান, আব্দুল জলিল মন্ডল, মো. হুমাইউন কবির, এসএম মনিরুজ্জামান, নিবাস চন্দ্র মাঝি, শৈবাল কান্তি চৌধুরী, শেখ নাজমুল আলম, ইমাম হোসেন, মো. মনিরুজ্জামান, মো. আসাদুজজামান, রিপন সরদার ও খালিদ হাওলাদার। এছাড়া বর্তমান ডিআইজিরা হলেন, ইমতিয়াজ আহমেদ, আমিনুল ইসলাম, মাহফুজুর রহমান, একেএম নাহিদুল ইসলাম, মোল্লা নজরুল ইসলাম, নূরে আলম মিনা, মো. জাকির হোসেন খান, মো. সাইফুল ইসলাম, সৈয়দ নুরুল ইসলাম, আনিছুর রহমান, হারুন অর রশিদ।

সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি চৌধুরী মঞ্জুরুল করিব ও আব্দুল কাহার আকন্দের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে। আসামি হওয়া বর্তমান অতিরিক্ত ডিআইজিরা হলেন-টুটুল চক্রবর্তী, শামসুন্নাহার, মারুফ হোসেন সরদার, বিপ্লব কুমার সরকার, মো. মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁইয়া, কামরুজ্জামান, রশিদুল হক, মো. আনোয়ার হোসেন, খন্দকার নুরুন্নবী, মুঃ মাসুদ রানা, মো. জায়েদুল আলম, এসএম মেহেদী হাসান, এহসান উল্লাহ, ফারুক আহমেদ, উত্তম কুমার পাল, লিটন কুমার সাহা, সঞ্জিত কুমার রায়, নাসিয়ান ওয়াজেদ, মো. ফরিদ উদ্দিন, মো. মোখলেছুর রহমান, মোহাম্মদ সিরাজ আমীন, মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন, মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, মো. আলমগীর হোসেন, মো. জাফর হোসেন, আজবাহার আলী শেখ, রিফাত রহমান শামীম, মশিউর রহমান, নাবিদ কামাল শৈবাল, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, মো. শহীদুল্লাহ, মোস্তাফিজুর রহমান, মো. আশরাফ আলী ভূইয়া, সুদ্বীপ কুমার চক্রবর্তী, প্রলয় কুমার জোয়াদ্দার, আয়েশা সিদ্দিকা, মোক্তার হোসেন, সুনন্দা রায়, ইলতুতমিশ, হায়াতুল ইসলাম, কাজী আশরাফুল আজিম, জসিম উদ্দিল মোল্লা, সামসুল ইসলাম আকন্দ।

পুলিশ সুপার (এসপি) :

আসামির তালিকায় থাকা সাবেক পুলিশ সুপারেরা হলেন মো. আলতাফ হোসেন, মো. মিজানুর রহমান, এইচএম আজিজুল হক। এছাড়া চাকরিতে বহাল থাকা যেসব এসপি আসামি হয়েছেন তারা হলেন-সৈয়দ বজলুর করিম, মো. মহিউদ্দিন ফারুকী, এসএম তানভীর আরাফাত, এসএম শফিউল্লাহ, কাজী মনিরুজ্জামান, মো. আবু মারুফ হোসেন, গোলাম মোস্তফা রাসেল, তারিক বিন রশিদ, মানষ কুমার পোদ্দার, আব্দুল আহাদ, মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন, রাজিব আল মাসুদ, মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া, মোহাম্মদ হাবীবুন নবী আনিছুর রশিদ, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন, মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান আল মামুন, আফম আল কিবরিয়া, মোহাম্মদ আশরাফ ইমাম, মো. শহীদুল ইসলাম, মিশুক চাকমা, ইমাম মোহাম্মদ শাদিদ, মো. আসাদুজ্জামান, রহমত উল্লাহ, আহমেদুল ইসলাম, ইয়াসিন আরাফাত, মো. শাহজাহান, আব্দুল জলিল, মো. জসিম উদ্দিন, শাহরিয়ার আল মামুন, মাহবুব উজ জামান, তাহিয়াত আহমেদ চৌধুরী, মো. হুমায়ুন কবির, মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম, ইকবাল হোসাইন, মোসা. লাকি, আনসার উদ্দিন, মাহবুব আলম খান, মো. মামুন, মাহফুজুল আল রাসেল, তানভীর সালেহীন ইমন, জাহিদ তালুকদার, আরিফুল ইসলাম, নাজমুল ইসলাম, সুমন দেব, মীর্জা সালাউদ্দিন, মোহাম্মদ মাইনুল ইসলাম, শাহেন শাহ মাহফুজ, গোবিন্দ চন্দ্র, সনাতন চক্রবর্তী, আজাদ রহমান, রাজিব ফারহান, হাসান আরাফাত, জুয়েল রানা, মো. আরিফুজ্জামান, নুরুল আমিন, আব্দুল্লাহ আল কাফি, হাফিজ আল ফারুক, মো. শাহ নুর আলম পাটোয়ারীসহ ডিএমপির শাহবাগ ও বাড্ডা বিভাগের সাবেক দুই ডিসি (শাহবাগ ও বাড্ডা নামে ডিএমপির কোনো বিভাগ নেই। তবে এ দুটি এলাকা যথাক্রমে রমনা ও গুলশান বিভাগের অন্তর্ভুক্ত)।

আলোচিত কর্মকর্তাদের মধ্যে পলাতক আছেন সাবেক এসবি প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, অ্যাডিশনাল ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ারদার, ঢাকা জেলার সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম প্রমুখ। এসব কর্মকর্তাসহ পুলিশের শীর্ষ অনেকের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা হয়েছে।

সূত্র : যুগান্তর
  • আসামি
  • পুলিশ
  • মামলা
  • হত্যা-হত্যাচেষ্টা
  • #