ময়মনসিংহে আনন্দ মোহন কলেজে ছাত্রাবাসের সিট বরাদ্দ নিয়ে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে বিরোধ দেখা দিয়েছে হলে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীদের। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হলে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কয়েক দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই পক্ষের অন্তত পাঁচজন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয় কলেজ এলাকায়। রবিবার (১২ জানুয়ারি) বিকেলে ও সন্ধ্যায় দফায় দফায় এ সংঘর্ষ হয়।
পরে এ ঘটনায় ছেলেদের ছাত্রাবাস বন্ধ ঘোষণা করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম আগামী তিন দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়াও সোমবার সকাল ৮টার মধ্যে ছেলেদের ছাত্রাবাস ত্যাগের জন্য বলা হয়েছে। রবিবার রাত আটটার দিকে কলেজের অধ্যক্ষ মো. আমান উল্লাহ এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
এদিকে বিকেল থেকে শুরু হওয়া পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলতে থাকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত। রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত কলেজ গেটের বাইরে ছাত্রদল-বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকর্মীরা এবং ভেতরে ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন ছিলেন।
এ বিষয়ে আনন্দ মোহন কলেজের অধ্যক্ষ আমান উল্লাহ বলেন, কলেজের ছাত্রাবাসের সিট বণ্টন চাচ্ছে বিভিন্ন দল; কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীরা তা মানতে চাচ্ছেন না। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক আশিকুর রহমান, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ছাত্রদলের তানজিল আহমেদ এবং ছাত্রশিবিরও সিট চাচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা কারও দাসত্ব করবেন না, কোনো দলকে যেন সিট দেওয়া না হয় সেই দাবি জানাচ্ছিলেন। ছাত্রলীগের সময় যা হয়েছে, এখন তা হতে দেবেন না- এই দাবি ছাত্রাবাসে থাকা শিক্ষার্থীদের।
অধ্যক্ষ আরও বলেন, শিক্ষার্থী আসা-যাওয়া করবে, নবায়ন করবে কে কোন দল করে, তা দেখে সিট দেব না। এতে তারা বাধা দিচ্ছে এবং কিছু সিনিয়র শিক্ষার্থী এতে ইন্ধন দিচ্ছে। যার কারণে সমস্যাটি হয়েছে। আজ দুপুর ৩টার দিকে ছাত্রাবাস পরিচালনা কমিটির সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি সভা শুরু হয়। সেই সভায় ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের লোকজন এলে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে মারামারি শুরু হয়। তাৎক্ষণিক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালে তারা পুলিশ পাঠান। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।’
এ ঘটনার পর সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, আনন্দ মোহন কলেজে মেয়েদের জন্য ৫টি এবং ছেলেদের ৩টি ছাত্রাবাস রয়েছে। হোস্টেলগুলো পূর্বে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণ করত। ছাত্রলীগের মতো নিয়ন্ত্রণ আর যেন ফিরে না আসে, সেই দাবি জানায় হোস্টেলে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গত ৮ জানুয়ারি ছাত্রাবাসে সিট নবায়নের জন্য নোটিশ দেওয়া হয়। ছাত্রাবাসে সিট বরাদ্দের জন্য বাৎসরিক ৫ হাজার টাকা থেকে বিগত ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণের সময় ৭ হাজার টাকা করা হয়েছিল। এখন শিক্ষার্থীরা সেটি কমিয়ে ৫ হাজার টাকা করার দাবি জানাচ্ছিলেন। হলের নিয়ন্ত্রণ ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নিতে চাচ্ছে- এমন খবর ছড়াতে থাকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এ নিয়ে দুটি পক্ষ তৈরি হয়ে উত্তেজনা শুরু হতে থাকে।