পরিচ্ছন্নতাকর্মী ছাঁটাই : বরিশালে ময়লা অপসারণ বন্ধ, ভোগান্তিতে নগরবাসী

: বরিশাল ব্যুরো
প্রকাশ: ১ মাস আগে

বরিশাল নগরীতে দুই দিন ধরে ময়লা-আবর্জনা অপসারণ বন্ধ করে রেখেছেন সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। বিভিন্ন সড়কের পাশে বর্জ্যের স্তূপ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এমনকি বসতবাড়ি থেকেও গত রবিবার রাতের পর থেকে আর পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ময়লা-আবর্জনা নিচ্ছেন না। এতে অস্বস্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।

বিসিসির ১৬০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে ছাঁটাই করার প্রতিবাদে তারা ময়লা অপসারণ বন্ধ রেখেছেন। আজ সোমবার ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের নিয়ে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে সমঝোতার বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, বরিশাল নগরীর প্রতিদিনকার বর্জ্য সাধারণত রাতের মধ্যেই ট্রাকে করে নিয়ে কাউনিয়া এলাকার পুরানপাড়া ডাম্পিং স্টেশনে নেওয়া হয়। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এই কাজটি করেন।

কিন্তু রবিবার রাত থেকে নগরীর প্রতিটি সড়কে স্তূপাকারে ময়লা-আবর্জনা পড়ে আছে।
আজ সোমবার সকালে নগরীর কাঠপট্টি, বটতলা, নবগ্রাম রোড, বি এম কলেজের সামনের এলাকা, সিঅ্যান্ডবি রোডসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সড়কের পাশে বর্জ্যের স্তূপ দেখা যায়। সিঅ্যান্ডবি রোডটি ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের অংশ। এই মহাসড়কের দুই পাশে আবর্জনার স্তূপ থাকায় মানুষের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।

বি এম কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দা আল মামুন হাওলাদার বলেন, বি এম কলেজের সামনে প্রফেসর গলির মুখে দুই দিন ধরে বর্জ্যের স্তূপ। ময়লার দূষিত পানি ছড়াচ্ছে। মানুষের পায়ে পায়ে ছড়িয়ে পড়ছে ঘরে ঘরে। দুর্গন্ধে এলাকায় টেকা দায় হয়ে পড়েছে। এই সড়কে হাঁটাচলাও কষ্টকর।

অন্যদিকে বাসাবাড়ি থেকে ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহের কাজ বন্ধ রেখেছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। নগরীর বটতলা, চৌমাথা, আলেকান্দা, ভাটিখানা, গির্জা মহল্লা এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, প্রতিদিন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বাসায় এসে ময়লা নিয়ে যেত, রবিবার থেকে তা বন্ধ। এরপর বাধ্য হয়ে রাস্তায় ময়লা ফেলে এসেছেন অনেকে।

সিটি করপোরেশন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হোসেন ঢালি জানান, গত ১ জানুয়ারি ১৬০ শ্রমিককে আকস্মিক ছাঁটাই করা হয়েছে। তার আগে, কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের কারণ দর্শানো কিংবা কোনো ধরনের লিখিত নোটিশ দেয়নি। শুধু মাত্র মৌখিক নির্দেশে আমাদেরকে ছাটাই করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ অন্যায় ও বে-আইনি। তাই এই ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে শ্রমিকরা ময়লা অপসারণ বন্ধ রেখেছেন।

হোসেন ঢালি আরো বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে ছাঁটাইকৃত (ষাটোর্ধ্ব) ১৬০ জন শ্রমিককে চাকরিতে পুনর্বহাল করা। কোনো শ্রমিককে ছাঁটাই করা চলবে না, করপোরেশনের কর্মরত সব শ্রমিককে শ্রম আইন অনুযায়ী স্থায়ীকরণ করতে হবে। শ্রমিকদের পরিচয়পত্র, নিয়োগপত্র, সার্ভিস বুক দিতে হবে। পাশাপাশি বেতন বৈষম্য নিরসন করতে হবে। শুধু তাই নয়, আমাদের প্রাপ্য সব ভাতা পরিশোধ করতে হবে। শ্রমিকদের এই দাবিগুলো মেনে না নেওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত রাখার কথা বলেন তিনি।

সিটি করপোরেশনের সহকারি পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা ইউসুফ আলী বলেন, নগরীতে প্রতিদিন গড়ে ২০০ টন ময়লা-আবর্জনা অপসারণে ৪৩২ জন কর্মী কাজ করেন। এর বাইরে আরো ৩২৩ জন ঝাড়ুদার রয়েছেন। সম্প্রতি ৬২ জন অস্থায়ী শ্রমিক এবং ৪০ জন ঝাড়ুদারকে ছাঁটাই করা হয়েছে। তারাই রবিবার থেকে ময়লা অপসারনে বাঁধা দিয়ে আসছেন। তাই রবিবার থেকে ময়লা অপসারণ বন্ধ রয়েছে। সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কাওছার, তার কার্যালয়ে আজ সোমবার বিষয়টি সমাধানের জন্য সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারি সাংবাদিকদের বলেন, যাদের বয়স ৬০ পেরিয়েছে, তাদেরকে নিয়ম মেনেই ছাঁটাই করা হয়েছে। আন্দোলনরতদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক চলছে। তারই অংশ হিসেবে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে সোমবার সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

  • পরিচ্ছন্নতাকর্মী ছাঁটাই
  • বন্ধ
  • বরিশাল সিটি করপোরেশন
  • ময়লা অপসারণ
  • #