পরীমণির পক্ষে যা বললেন তসলিমা নাসরিন

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ২ দিন আগে

অভিনেত্রী পরীমণি তার ফেসবুক টাইমলাইনে এক আবেগঘন পোস্টের মাধ্যমে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এরই মধ্যে তসলিমা নাসরিন চিত্রনায়িকা পরীমণির পক্ষে রবিবার (২৬ জানুয়ারি) ফেসবুক পেইজে পোস্ট দিয়ে এক বিবৃতি দিয়েছেন। 

বিবৃতিতে তসলিমা নাসরিন বলেন, চিত্রনায়িকা পরীমণির ওপর আবার শুরু হয়েছে অন্যায় অত্যাচার। টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় হারল্যান স্টোর নামের একটি কসমেটিক শোরুম উদ্বোধন করতে তাঁর যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এলেঙ্গার হেফাজতি ইসলামি দলের গুণ্ডারা তা হতে দেবে না। তারা হামলার হুমকি দিয়েছে, অগত্যা স্টোরের মালিক উদবোধনী অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। জিতে গেল হেফাজতে ইসলামি, এলাকার সব মসজিদ মাদ্রাসার পরজীবী মোল্লারা, জিতে গেল নারীবিদ্বেষ। টাঙ্গাইলে পরীমণির যাত্রাভঙ্গ করা ছাড়াও পরীমণির বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। পরীমণি আওয়ামী লীগের কর্মী নন, তিনি বরং হাসিনা-পতনের আন্দোলনে আর সবার মতো সমর্থন জানিয়েছিলেন। ২৪এর স্বাধীন দেশে তাঁর পায়ে কেন শিকল পরানো হচ্ছে, তাঁকে কেন মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে? এর একটিই কারণ, তিনি নারী।
জুলাই আন্দোলনের নেপথ্যে ছিল জামাত-শিবির, সন্ত্রাসী সংগঠন হিজবুত তাহরীর, এবং সমস্ত ইসলামী, জিহাদি, সন্ত্রাসী দল। এরা নিঃসন্দেহে সকলেই ভয়ঙ্কর নারীবিদ্বেষী। তারা, আজ বা কাল নারীর বিরুদ্ধে যাবেই, সে নারী তাদের মিছিলে থাকলেও, হাসিনা সরকারের পতনের জন্য তাদের দ্ব্যর্থহীন সমর্থন দিলেও। ইসলামের নীতি আদর্শ জিহাদিরা মাথা পেতে বরণ করেছে। হাসিনাকে তাড়ানোর পেছনে তাদের একটাই উদ্দেশ্য ছিল, দেশে ইসলাম কায়েম করা, নারী নেতৃত্বের ইতি টানা , নারীকে ঘরবন্দি করা। স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদ দূর করা তাদের আসল উদ্দেশ্য ছিল না, কারণ তারা নিজেরাই এখন স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে। সারা দেশে খুন ধর্ষণ রাহাজানি, আগুন, লুণ্ঠন, জমি দখল ইত্যাদি অরাজকতা অবাধে চলছেই, সরকার ফিরেও তাকায় না। বরং ইসলামী বহুবিবাহের পক্ষে আইন তৈরি করা হয়েছে, এরপর আইন করে বাল্য বিবাহের অত্যাচারকে বৈধ করা হবে, ইতিমধ্যে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা মুছে ফেলা হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতা না থাকা মানে ধর্মীয় আইন থাকা, ধর্মীয় আইন থাকা মানে পুরুষের আধিপত্য থাকা আর নারীর বিরুদ্ধে বিকট বৈষম্য থাকা।

তিনি আরও বলেন,  তিরিশ বছর আগে যখন ইসলামী দলগুলো আমার লেখা পছন্দ হয় না বলে আমার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিল, আমার শাস্তি দাবি করেছিল, আমার মাথার দাম ঘোষণা করেছিল, তখন সরকার গ্ণতন্ত্র বিরোধী, বাকস্বাধীনতাবিরোধী নারীবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে না গিয়ে, আমি, যে আমি মানবতার পক্ষে লিখি, আমার বিরুদ্ধে গিয়েছিল। কারওর মাথার দাম ঘোষণা করা আইন বিরুদ্ধ, তারপরও আইনঅমান্যকারী মোল্লাদের শাস্তি না দিয়ে সরকার আমাকে শাস্তি দিয়েছিল, একজন সৎ এবং সত্যবাদী লেখককে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছিল। বিজয়ী করেছিল মূর্খ ধর্মান্ধ, ইসলামি সন্ত্রাসীদের। সেদিনই কিন্তু দেশকে ১০০ বছর পিছিয়ে দিয়েছিল দেশের শাসকগোষ্ঠী। সেই থেকে শাসকগোষ্ঠীকে ধর্মব্যবসায়ীদের সামনে মাথা নোয়াতেই হচ্ছে। তাদের দাবি মেনে নিতেই হচ্ছে। শেষ অবধি তাদের হার মানতে হচ্ছে, জিহাদি জঙ্গিদের হাতে দেশ সমর্পন করে দেশ থেকে বিদেয় নিতে হচ্ছে।

পোস্টে আরও বলা হয়- ইসলামী গোষ্ঠী এখন জানিয়ে দিচ্ছে দেশে তারা শরিয়া আইন আনবে। শরিয়া আইনের অধীনে নারীর কোনও স্বাধীনতা বা অধিকার থাকবে না। এই যে পরীমণির পায়ে আজ প্রকাশ্যে শিকল পরানো হয়ে গেল, এখন আর জনে জনে শিকল পরাতে হবে না। প্রতিটি নারীর পায়ে পরানো হয়ে গিয়েছে অদৃশ্য শিকল। কোথাও আর কিছু উদবোধন করতে কোনও নারীকে ডাকতে ভয় পাবে উদ্যোক্তারা। কোনও নারীশিল্পীকে নাচগানের জন্য, যাত্রানাটকের জন্য ডাকবে না আয়োজকরা। ডাকলেও হামলার ভয়ে নারীশিল্পীরাও মঞ্চে উঠতে ভয় পাবে। নারীদের পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এভাবেই বিস্তার করে ইসলামের রাজনীতি, এভাবেই নারীবিদ্বেষী সর্বগ্রাসী থাবায় আক্রান্ত হয় সব শ্রেণির, সব ধর্মের , সব সংস্কৃতির নারী। জুলাই-আগস্টে ইসলামী বিপ্লব ঘটেছিল দেশে। এর ফল এখনই দেখতে পাচ্ছি। জিহাদিদের আস্ফালন বন্ধ না করা হলে নারীর জন্য দেশটি বাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে, দেশটি পরিণত হবে শ্বাসরুদ্ধকর এক জ্বলন্ত নরকে।

প্রসঙ্গত,  টাঙ্গাইলে একটি প্রসাধনপণ্যের শোরুমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরীমণির যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেখানে তাঁর যাওয়া বাতিল হয়। বিরূপ পরিস্থিতির কারণে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পরীমনির টাঙ্গাইল যাওয়ার খবরে গত শুক্রবার হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ টাঙ্গাইল জেলা শাখার যুববিষয়ক সম্পাদক  মুফতি সুলাইমান হাবিব তাঁর ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। অপরদিকে, ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের করা হত্যাচেষ্টা মামলায় পিরীমণির অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

  • তসলিমা নাসরিন
  • পরীমণি
  • #