বরিশাল নগরের কাশীপুর এলাকায় গত তিন দিনে একটি পুকুর, দিঘি ও ডাস্টবিন থেকে মানুষের শরীরের সাত টুকরো খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলো কোনও একজন নারীর খণ্ডিত লাশ বলে ধারণা করছে পুলিশ। যাকে হত্যার পর লাশ টুকরো টুকরো করে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও নিহতের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর আলামত গোপন করতে দেহের বিভিন্ন অংশ বিচ্ছিন্ন করে পুকুর, দিঘি ও ডাস্টবিনে ফেলা হয়েছে। মাথার অংশ পাওয়া গেলে নিহতের পরিচয় শনাক্ত করা যেতো। কিন্তু তা এখনও পাওয়া যায়নি। তবে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত আছে। সেইসঙ্গে হত্যায় জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
সর্বশেষ মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে নগরের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাশীপুরের উত্তর ইছাকাঠি এলাকার হাতেম মীরার দিঘি থেকে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় একটি হাত উদ্ধার করা হয়। এর আগে সোমবার সকালে ওই দিঘির ১৫ গজ দূরে ময়লার ডাস্টবিন থেকে শরীরের আরেকটি অংশ উদ্ধার করা হয়। তার আগের দিন রবিবার সকালে একই দিঘি থেকে একটি খণ্ডিত পা ও দিঘির ১০ গজ দূরে একটি পুকুর থেকে কলিজাসহ আরও চার টুকরো লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, রবিবার সকাল ১০টার দিকে হাতেম মীরার দিঘির পাড়ে মানবদেহের খণ্ডিত অংশ দেখতে পান স্থানীয় লোকজন। পরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর-৯৯৯-এ ফোন করলে বিমানবন্দর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং একটি খণ্ডিত পা উদ্ধার করে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এরপর ওই দিঘির পার্শ্ববর্তী পুকুরে তল্লাশি চালানো হয়। এ সময় হাত-পা, কলিজাসহ আরও চারটি টুকরো উদ্ধার করা হয়। পুকুরে আরও খণ্ডিত অংশ থাকার আশঙ্কায় বেলা আড়াইটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলকে পুকুরে নামানো হয়। তবে পুকুরে আর কোনও খণ্ডিত অংশ পাওয়া যায়নি। পরে জেলেরা জাল টেনেও কোনও কিছু পাননি।
বরিশাল নদীবন্দর ফায়ার স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা মো. এনামুল হক বলেন, ‘ওই পুকুর ও দিঘিতে আরও কোনও খণ্ডিত অংশ রয়েছে কিনা, তা তল্লাশি করে উদ্ধারের জন্য আমাদের ডুবুরি দলকে নামিয়েছিলাম। কিন্তু তারা কিছুই পায়নি। পরে জেলেদের বড় জাল এনে তল্লাশি করেও আর কিছু পাওয়া যায়নি।’
বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন শিকদার বলেন, এখনও নিহতের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। পরিচয় শনাক্ত ও হত্যার রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, তাদের ধারণা এক নারীকে হত্যার পর লাশ টুকরো টুকরো করে বিভিন্ন স্থানে ফেলা হয়েছে। খণ্ডিত লাশ উদ্ধারের পর থেকে ইছাকাঠি এলাকার বাসাবাড়ি এবং ঝোপঝাড়ে অভিযান চালানো হচ্ছে।
এ নিয়ে ইছাকাঠিতে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা জামাল হোসেন, ইউনুস সিকদার ও টুটুলসহ একাধিক ব্যক্তি। তারা জানান, তাদের এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রতিদিন সকালে খণ্ডিত অংশ পাওয়ার চিৎকার কানে আসছে। আশপাশের কোনও স্থানে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। খুনিরা হয়তো দূরে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে। নিহতের পরিচয় শনাক্ত এবং ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানান তারা।
বরিশাল মহানগরের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) রুনা লায়লা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত তিন দিনে সাত টুকরো লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এটি হত্যাকাণ্ড তা স্পষ্ট। এসব খণ্ডিত অংশ দেখে ধারণা করছি, হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এক নারী। তবে এখনও পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। বিষয়টি অধিকতর গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত চলছে। পুলিশের একাধিক টিম নিয়ে ইছাকাঠি এলাকার বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে বাসাবাড়ির গাড়ির গ্যারেজ, ফ্রিজ, পানির ট্যাংক এবং ঝোপঝাড়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। নিহত নারীর পরিচয় শনাক্ত ও হত্যায় জড়িতদের ধরতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা।