গতবছর সারাদেশে অগ্নিকাণ্ডে ৪৪৬ কোটি ২৭ লাখ ২৮ হাজার ৬৯৭ টাকা সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস আগুন নির্বাপণের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৭৪ কোটি ৪৪ লাখ ৭২ হাজার ৮৭৫ টাকার সম্পদ রক্ষা করে। এ ছাড়া অগ্নিকাণ্ডে সারা দেশে ৩৪১ জন আহত ও ১৪০ জন নিহত হন।
এদিকে আগুন নেভানোর সময় ৩৭ জন বিভাগীয় কর্মী আহত এবং অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজ করতে গিয়ে ২ জন কর্মী নিহত হন। অগ্নিনির্বাপণকালে উচ্ছৃঙ্খল জনতা কর্তৃক ফায়ার সার্ভিসের ৩৪টি গাড়ি ভাঙচুর ও ৮টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স মিডিয়া সেল থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
কারণভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২৬ হাজার ৬৫৯টি আগুনের মধ্যে বৈদ্যুতিক গোলযোগে ৯ হাজার ৬৯টি (৩৩ দশমিক ৯৮ পারসেন্ট), বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরা থেকে ৪ হাজার ১৩৯টি (১৫ দশমিক ৫২ পারসেন্ট), চুলা থেকে ৩ হাজার ৫৬টি (১১.৪৬ পারসেন্ট), উচ্ছৃঙ্খল জনতা কর্তৃক ৭৮৯টি (২ দশমিক ৯৫ পারসেন্ট), ছোটদের আগুন নিয়ে খেলার কারণে ৭৫৯টি (২ দশমিক ৮৪ পারসেন্ট), উত্তপ্ত ছাই থেকে ৭৩৫টি, গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে ৭০৪টি, গ্যাসের লাইন লিকেজ থেকে ৪৬৫টি, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে ৪৪টি (০ দশমিক ৪৫ পারসেন্ট), কয়েল থেকে ৪৫৫টি এবং আতশবাজি-ফানুস-পটকা পোড়ানো থেকে ৬৪টি আগুনের ঘটনা ঘটে।
সম্পদের ক্ষয়ক্ষতিভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে বাসাবাড়ি ও আবাসিক ভবনে সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সারা দেশে বাসাবাড়িতে মোট ৭ হাজার ১৩১টি আগুন লাগে, যা মোট আগুন লাগার ঘটনার ২৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এ ছাড়া খড়ের গাঁদায় ৪ হাজার ৫১৩টি (১৬ দশমিক ৯২ পারসেন্ট), রান্নাঘরে ২ হাজার ৪১১টি (৯ দশমিক ০৪ পারসেন্ট), দোকানে ১ হাজার ৮৮৭টি, হাট-বাজারে ৯১১টি, শপিং মলে ৪৮১টি, পোশাকশিল্প ছাড়া কলকারখানায় ৪৯৪টি, পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ২৩৬টি, বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে ২১১টি, বহুতল ভবনের আগুন (৬ তলার ওপরে) ১৫৩টি, রেস্টুরেন্ট ও হোটেলে ১৫০টি, কেপিআই ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে ১২৯টি, হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ১২৬টি, পাটগুদাম-পাটকলে ১২৩টি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ৮৫টি, বস্তিতে ৮৪টি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৭৮টি আগুনের ঘটনা ঘটে।
পরিবহনে আগুনের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে সারা দেশে বাস ছাড়া যানবাহনে ২৬৮টি, বাসে ১১৪টি, ট্রেনে ১৩টি ও লঞ্চে ৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
এ ছাড়া অগ্নিকাণ্ডে আহত-নিহত ব্যক্তিদের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আহত ও নিহতদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি। সারা দেশে ৩৪১ জন আহতের মধ্যে পুরুষ ২৩৭ ও নারী ১০৪ জন এবং নিহত ১৪০ জনের মধ্যে ১০৭ পুরুষ ও ৩৩ জন নারী। এ ছাড়া আহত ও নিহত হওয়ার ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাসাবাড়ি-আবাসিক ভবনে (আহত ৭২, নিহত ৩৬), গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ (আহত ৫৩, নিহত ৮) এবং রেস্তোরাঁ ও হোটেলে (আহত ৭৮, নিহত ৪৭) আগুনের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি হতাহত হয়েছে।
এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ২০২৪ সালে সারা দেশে ডুবুরি কার্যক্রমের মাধ্যমে ১৫৬ আহত ও ৭৫০ জন নিহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে। আরও ৩০৩টি পশু, ৫০টি পাখি, ২২৭টি প্রাণী উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।
২০২৪ সালে সারা দেশে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ৯ হাজার ১২৮টি দুর্ঘটনায় উদ্ধারকাজ পরিচালনা করে ১০ হাজার ৮২৬ আহত ও ২ হাজার ৪৩৭ জন নিহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে। এর মধ্যে ৬ হাজার ৪০৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ হাজার ৩১৯ আহত ও ১ হাজার ৪৮৪ জন নিহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।
সারা দেশে অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ২০২৪ সালে ১৪৭টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে। এই মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১৪৯টি প্রতিষ্ঠানকে ২ কোটি ৫৮ লাখ ৩২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া ৩টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
অগ্নিদুর্ঘটনা কমানোর জন্য সারা দেশে জনগণকে সচেতন করতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ২০২৪ সালে ১৮ হাজার ৯৮৩টি মহড়া, ৩ হাজার ৩৬টি সার্ভে, ১৫ হাজার ৬৮৩টি গণসংযোগ করেছে। এ ছাড়া সারা দেশে অগ্নিদুর্ঘটনায় করণীয় বিষয়ে ৭ হাজার ৭৬৯টি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৭১৭ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। অন্যদিকে ২০২৪ সালে শুধু পোশাকশিল্প কারখানায় ৩ হাজার ৯২১টি প্রশিক্ষণ কোর্সের মাধ্যমে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৪০ জন পোশাকশ্রমিককে অগ্নিদুর্ঘটনায় করণীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।