চট্টগ্রামে ফেসবুক লাইভে এসে বায়েজিদ থানার ওসিকে নগ্ন করে পেটানোর হুমকি দিয়েছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ। এ ঘটনায় ওই পুলিশ কর্মকর্তা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর অপরাধ জগতে আলোচনায় আসেন সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন। কথায় কথায় গুলি ছোড়ার স্বভাব তাঁর। এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত তিন মাসের ব্যবধানে তিনটি হত্যাকাণ্ড সংঘটন ও ১০ মামলার আসামি সাজ্জাদ চট্টগ্রাম নগরীতে শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত।
গত মঙ্গলবার রাত ১০টা ৩৯ মিনিটে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমানকে হত্যার হুমকি দেন সাজ্জাদ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি আরিফুর রহমান বলেন, পুলিশ জনগণের জানমাল রক্ষায় নিয়োজিত। ইতিপূর্বে এই সন্ত্রাসী ও তাঁর দল বায়েজিদের বিভিন্ন এলাকায় অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়েছে। সে গুলি করে তিনজনকে হত্যা মামলার আসামি।
জনগণের জানমাল রক্ষার্থে ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধে তাঁকে ধরতে পুলিশ একাধিক অভিযান চালিয়েছে। অভিযানে সাজ্জাদের গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ডসহ অনেক সহযোগীকে আমরা গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। তাঁকেও ধরার চেষ্টা চলছে। সেই ক্ষোভ থেকে এই ধরনের হুমকি সে দিয়ে থাকতে পারে। হুমকিতে আমরা দায়িত্ব পালনে পিছপা হব না। তাঁকে যেকোনো মূল্যে ধরা হবে।
এর আগে সন্ত্রাসী সাজ্জাদ বায়েজিদ থানার এসআই জগৎ জ্যোতি ও এসআই মনিরকেও ফেসবুকে হুমকি দিয়েছিলেন উল্লেখ করে ওসি জানান, এর মধ্যে একজন সাজ্জাদের বিরুদ্ধে হওয়া হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
এর আগে ১৯ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের ফেসবুক লাইভে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় সাজ্জাদ বলেন, ওসি আরিফ দেশের যেখানেই থাকুক না কেন, তাকে আমি ধরে ন্যাংটা করে পেটাব। ওসি আরিফ থানায় দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সে আমার সন্তানকে হত্যা করেছে। আমার স্ত্রীকে আটক করে জেলে নিয়ে গেছে। তাকে আমি ছাড়ব না। পুলিশ না হলে তাকে আমি অনেক আগেই মারধর করতাম। পুলিশের প্রতি শ্রদ্ধা করি বলেই চুপ করে আছি।
সাজ্জাদ বলেন, সারোয়ার বাবলা ও আসলাম চৌধুরী টাকা দিয়ে আমার বিরুদ্ধে এসব মামলা করিয়েছে। তারা মামলা করে আমাকে এলাকা ছাড়া করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারে থাকা অবস্থায়ও আমার নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল। অক্সিজেনে যে দুইটি খুন হয়েছে সেখানে আমি ছিলাম না। আমাকে কেউ দেখেনি। তবুও মামলায় আমাকে আসামি করা হয়েছে। তাহসিনকে আমি খুন করিনি। তার সঙ্গে ঢাকাইয়া আকবরের ঝামেলা ছিল।
এ সময় সিএমপি কমিশনারকে উদ্দেশ করে সাজ্জাদ বলেন, ওসি আরিফকে আপনি বদলি করেন। তার বিরুদ্ধে আপনারা তদন্ত করেন।
পুলিশ জানায়, গণ-অভ্যুত্থানের পর বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ। জুলাই ও সেপ্টেম্বরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তিন মাসের ব্যবধানে প্রকাশ্যে গুলি করে তিনজনকে হত্যা ও প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নগরীতে এখন শীর্ষ সন্ত্রাসীর তকমা পেয়েছেন তিনি।
এই তিন খুনে আলোচিত বিদেশে পলাতক ‘শিবিরের শীর্ষ ক্যাডার’ সাজ্জাদ হোসেনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছোট সাজ্জাদ। বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতার অনুসারী হিসেবেও পরিচিত এই ছোট সাজ্জাদ।