‘ছাত্র আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশবিরোধী শক্তি ক্ষমতায় এসেছে’

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ৭ ঘন্টা আগে

দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর শিল্পকলা একাডেমিতে তার নাটক মঞ্চস্থ করতে দেয়া হয়নি। সেই প্রতিবাদ জারি রেখেছেন নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, নাট্য নির্দেশক মাসুম রেজা। জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াঙ্গনের নানাজনের অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে কথা বলেছেন এই নাট্যকার।

প্রশ্ন : শিল্পকলায় আপনার নাটক নিয়ে ঝামেলা হলো। সেখানেই থেমে নেই। একই রকমের ঘটনা আরো ঘটেছে। আপনি ঘটনাগুলোকে কীভাবে দেখছেন?

মাসুম রেজা : আমার নাটকের একটি ছেলের ফেসবুকে লেখালেখির কারণে ঢাকায় শিল্পকলার গেটে তার বিরুদ্ধে একটি ব্যানার টানিয়ে বলা হয়, ‘তাকে আমরা চাই’। এটা তো মনে করি সমগ্র শিল্পচর্চার ওপর চপেটাঘাত। তাকে আমরা তাদের দাবির মুখে বের করে দিলাম। তারপরও নাটকটা বন্ধ করতে হলো কেন? যারা এসেছিলেন ওই দিন, তারা ওই ছেলের নামটি ভুল লিখেছেন ব্যানারে। এসেছেন শিল্পকলায়, বলছেন শিশু একাডেমি। তারা জানতেনই না কোথায় এসেছেন। জানতেন না কোন দলের নাটক, কী নাটক। তাহলে তারা কীভাবে আসলেন? আমার কাছে মনে হয়েছে- এমন একটি গ্রুপ যারা এই মবদের পাঠিয়েছে, যারা চান নাযে শিল্পকলায় নাটক মঞ্চস্থ হোক।

প্রশ্ন : ঢাকার বাইরেও তো হয়েছে…

মাসুম রেজা : জ্বী, হয়েছে। ঢাকার বাইরে ২২টি শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে আগুন দেয়া হয়েছে। ঢাকার কেন্দ্রীয় শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে যেহেতু সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে, সে কারণে হয়তো বা এখানে আমরা আগুন দেখিনি।

প্রশ্ন : যারা এই কাজটা করলো, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে?

মাসুম রেজা : না, না, ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যখন আমরা দ্বিতীয় দিনে প্রতিবাদ করি, সংবাদ সম্মেলন করি, তখনো কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে বাইরে স্লোগান দেয়া হয়। তারা ব্যানার লাগানোর চেষ্টা করেছে, মাইক এনে রেখেছে। ওখান থেকে দুইজনকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু পরের দিন আবার ছেড়ে দেয়। তাদের বিরুদ্ধে কোনো রকম ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কেনো তদন্ত হলো না। ফলে বাংলাদেশটা কার নির্দেশে পরিচালিত হচ্ছে সেটা নিয়ে আমি দ্বিধায় আছি।

প্রশ্ন : আপনাদের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা তো একজন শিল্পের মানুষ। নাটকের মানুষ। তার কাছে কি আপনারা এখন কোনো প্রতিকার চাইছেন না? তিনি কি কোনো অ্যাকশন নিচ্ছেন না?

মাসুম রেজা : না। তিনি যখন দায়িত্ব নিলেন, তখন আমাদের ছেলেটি ফেসবুকে যা লিখেছে তার তিনি নিন্দা জানালেন। কিন্তু নাটক বন্ধ হয়ে গেল- যা শিল্পকলার ইতিহাসে আগে কখনো হয়নি, সেটার ব্যাপারে তিনি কোনো পদক্ষেপ নিলেন না। মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী তো আমাদের সাথের মানুষ। তার ক্যারিয়ার শুরু আমাদের পরে। আমাদের প্রোডাকশন হাউজ দিয়ে তিনি শুরু করেছেন। উনি কি ছোট্ট একটা টেলিফোনও করতে পারতেন না! আমাকে বা মামুন ভাইকে? তিনি কিছুই করেননি। এটা একধরনের ধামাচাপা দেয়া হলো।

প্রশ্ন : আপনাদের কি ‘ট্যাগ’ দেয়ার চেষ্টা করেছে?

মাসুম রেজা : আমাকে করেনি। কিন্তু মামুন (মামুনুর রশীদ) ভাইকে চেষ্টা করেছে। আমাকে করেনি, কারণ, আমি সুনির্দিষ্টভাবে প্রতিবাদ করেছি। জামিল ভাই (জামিল আহমেদ, ডিজি, শিল্পকলা) একা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছেন।

প্রশ্ন :  বাস্তবে জামিল আহমেদ কী করেছেন?

মাসুম রেজা : তার ওখানে সেনাবাহিনী ছিল। তাদের সহযোগিতা তিনি নিতে পারতেন। কিন্তু কেন তিনি নেননি সেটা তার সেই সময়কার সিদ্ধান্ত। হয়তো তিনি পরে বুঝেছেন, সেই সময়ে তার ব্যবস্থা নেয়া দরকার ছিল।

প্রশ্ন : আমরা দেখছি অপু বিশ্বাসকে রেস্টুরেন্ট উদ্বোধন করতে দেয়া হয়নি। পরীমনিকের শো রুম উদ্বোধন করতে দেয়া হয়নি। এসব কিসের আলামত?

মাসুম রেজা : আমার উপলব্ধিটা বলি… আমরা এখন যে সরকারের অধীনে, এই সরকারের ম্যান্ডেট হলো বৈষম্যবিরোধী বা বৈষম্যহীনতার প্রতিশ্রুতি। তাহলে পরীমনি একটি শোরুম উদ্বোধন করতে গিয়ে কি কোনো বৈষম্য করছেন? বা অপু বিশ্বাস বা মেহজাবিন কি বৈষম্য করেছেন শোরুম বা রেস্টুরেন্ট উদ্বোধন করতে গিয়ে? মেয়েরা ফুটবল খেলতে যাওয়ায় কি বৈষম্য হয়েছে? তারা কী বৈষম্য করেছেন, যে খেলা বন্ধ করতে হবে? শোরুম উদ্বোধন করতে দেয়া হবে না। এটা তো আসলে মব ভায়োলেন্স। এটার বিরুদ্ধে আমাকে কেন বলতে হবে? আমি তো মনে করি, এটা যারা করছে, তাদের গ্রেপ্তার করা সরকারের প্রথম এবং প্রধান কাজ। কিন্তু আমি তো কোনো উদ্যোগ দেখছি না।

প্রশ্ন : নারী ফুটবলারদের প্রতি আঘাত তো নতুন। এটা কি নারীর প্রতি বিদ্বেষ আরো বাড়ার লক্ষণ?

মাসুম রেজা : আমরা যে ছাত্রদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করেছিলাম, বৈষম্য দূর করার কথা বলেছিলাম, তার সুযোগ নিয়ে এমন এক শক্তি চলে এসেছে, যা সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশবিরোধী। বাংলাদেশের যে স্বাধিকার, স্বাধীনতা- মূল ভিত্তি যেগুলো, সেইগুলোর বিরোধী। এগুলোকে যদি আমরা প্রশ্রয় দিতে থাকি, আমরা তাহলে সামনে বাংলাদেশকে হারিয়ে ফেলা ছাড়া আর কিছু দেখি না আমি।

প্রশ্ন : ধর্ম উপদেষ্টার অনুষ্ঠানে নারী সাংবাদিককে ঢুকতে দেয়া হয়নি-এটাকে কীভাবে দেখেন? যদিও তিনি দাবি করেছেন বিষয়টি তিনি জানেন না।

মাসুম রেজা : এটা ভাবা যায় না। উনি যখন অন্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে মিটিং করেন, সেখানে কি নারী উপদেষ্টা থাকছেন না? ওই নারী সাংবাদিক ফেসবুক পোস্ট দিয়ে জানানোর পর উপদেষ্টা যদি এখন বলেনও যে, তিনি কিছু জানেন না, তারপরও সমস্ত দায়দায়িত্ব ওই উপদেষ্টার ওপরেই পড়ে।

প্রশ্ন : একটি ইসলামি রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানোর পরও নারী সাংবাদিকদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। এটা কিসের আলামত?

মাসুম রেজা : আমি তো পরিস্কার বলেছি, আমরা যারা মনে করছি যে, সংস্কারের জন্য একটা সরকার আমরা পেয়েছি, আসলে এই পরিবর্তনের জোয়ারে অন্য একটি জোয়ার ঢুকে গেছে এবং সেটাই এখন প্রাধান্য বিস্তার করছে। একটি ছাত্র সংগঠন (ইসলামী ছাত্র শিবির) তাদের পত্রিকায় লিখেছে, যেসব মুসলমান মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন তাদের ভুল বুঝিয়ে নেয়া হয়েছে। আজকে আবার দেখলাম তারা সেটা আবার তুলে নিয়েছে। তাহলে যে কথাটি সত্য নয়, যেটা এই দেশের ব্যাপারে পুরোপুরি একটা অপপ্রচার, সেটা বলার সাহস তারা পায় কীভাবে! সেটাকে কিন্তু আমাদের ধরতে হবে, আমাদের বুঝতে হবে।

প্রশ্ন : নারী ফুটবলারদের খেলায় বাধা দেয়ার পর প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে নিন্দা জানানো হয়। এর আগেও ঘটনা ঘটার পর এরকম নিন্দা দেখেছি। আবার মাজারে হামলা, বাউলদের অনুষ্ঠান বন্ধের পরও নিন্দা জানানো হয়। এটা কি সরকারের একটা কৌশল? সবাইকে হাতে রাখার চেষ্টা? হামলাও হবে, নিন্দাও হবে?

মাসুম রেজা : একটি ব্যাপার হলো, আমার নাটক যখন বন্ধ করা হলো, তখন আমি প্রতিবাদ জারি রেখে ওই মঞ্চেই আবার নাটক করেছি। এখন সরকারের নিন্দা, ফুটবল ফেডারেশনের নিন্দা তখনই যথার্থ হবে যদি তারা ওই মাঠে গিয়ে সব ব্যবস্থা নিয়ে নারীদের ফুটবল খেলার আয়োজন করে; যারা বন্ধ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা নেয়। সেটা তো করছে না। ফলে এটা জাস্ট ‘আইওয়াশ’।

  • ক্ষমতা
  • ছাত্র আন্দোলন
  • বাংলাদেশবিরোধী শক্তি
  • #