কোন পথে আ. লীগের রাজনীতি

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ৮ ঘন্টা আগে

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। দেশে থাকা কর্মীদের মনোবল চাঙা করার জন্য ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে নানা কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। এদিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, বাড়ি-ঘরে হামলাসহ নানা জটিল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলতে হচ্ছে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের। অপরদিকে, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে বর্তমান সরকার শিগগিরই পদক্ষেপ নেবে। এছাড়া ভারতে বসে শেখ হাসিনার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুর স¥ৃতিবিজড়িত ধানমন্ডির গুঁড়িয়ে আগুন দেওয়াসহ সারাদেশে আওয়ামী লীগে হেভিওয়েট নেতাদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। এক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার কঠোর বিবৃতি দিয়েও উত্তেজিত বিক্ষুব্ধদের নিভৃত করতে পারছে না। অন্তর্বর্তী সরকার মনে করেÑ শেখ হাসিনার বিবৃতির কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে।

ভারতে বসে আ. লীগ চালাচ্ছে নেতৃবৃন্দ :

ভারতে বসেই দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছেন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। ভারতে থাকার বিষয়টিকে ‘সাময়িকভাবে আত্মগোপনে’ থাকা হিসেবেই দেখছেন দলটির নেতারা। তারা বলছেন, ভারতে বসেই দল চালানোর চেষ্টা চালাতে হচ্ছে।
কতজন আওয়ামী লীগ নেতা ভারতে রয়েছেন? কীভাবে তারা যোগাযোগ করছেন নিজেদের মধ্যে? এসব বিষয়ে শুক্রবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা। কে কোথায় আছেন? আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের একটা বড় অংশ ভারতে পালিয়ে গেছেন। এটা এখন একটা ‘ওপেন সিক্রেট’ অর্থাৎ সবারই জানা-অথচ কেউ তা খোলাখুলি বলেন না।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম জানান, পালিয়ে নয়, কৌশলগত কারণে তারা সাময়িকভাবে আত্মগোপনে আছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের নেতাদের একটি বড় অংশ পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিয়েছেন। এ ছাড়া বাসা ভাড়া নিয়ে অনেক নেতাই কলকাতা, উত্তরবঙ্গ, দিল্লি, ত্রিপুরায় আছেন। দলটির সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে অন্তত ২০০ জন পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করছেন। যার মধ্যে সাবেক সরকারের শীর্ষ পদাধিকারী, মন্ত্রীরা এবং অন্তত ৭০ জন সংসদ সদস্য রয়েছেন। তবে ইউরোপসহ আরও কয়েকটি দেশে আওয়ামী লীগের নেতারা পালিয়ে গেছেন। এসব নেতাদের মধ্যে কেউ ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পরে ভারতে গিয়েছেন আবার কেউ কয়েক মাস পরে গিয়েছেন।

বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া নেতাদের মধ্যে রয়েছেন, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের অনেক জেলা সভাপতি-সম্পাদক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, মেয়র এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা ৫ আগস্ট থেকেই ভারতে রয়েছেন। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি বিমান তাদের নিয়ে দিল্লির উপকণ্ঠে হিন্দোন বিমানঘাঁটিতে পৌঁছে দেয়।

শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, নিরুপায় হয়ে ভারতে আসতে বাধ্য হয়েছেন শেখ হাসিনা। একটা চক্রান্তকারী, অশুভ শক্তি তাকে ভারতে যেতে বাধ্য করে। আবার ভারতই আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী এবং বন্ধু রাষ্ট্র। খুব কম সময়ে আমাদের দেশ থেকে এখানে এসে বসবাস করা যায়।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়েও লাখো মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে গিয়েছিলেন। ভারত অনেকদিন সেসব মানুষের খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিল। সে জন্য রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ ছাড়তে হলে ভারতই প্রথম পছন্দ।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ হয়। তবে শেখ হাসিনার সঙ্গে কেউ দেখা করতে পেরেছেন কি না, সেটা জানা যায়নি। ভারত এবং অন্য দেশে যেসব নেতা পালিয়ে গেছেন, তারা সাধারণত হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখেন।

আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের রাজনীতি নিষিদ্ধ :

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা। বিগত ১৮০ দিনে অন্তর্বর্তীকালীন কি করতে পেরেছে তা সম্পর্কে তিনি জানতে চেয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) বিকেলে আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ও জাতীয় কাউন্সিল গঠন ও জাতীয় সরকারের দাবিতে রাজু ভাস্কর্যে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আয়োজনে এক বিক্ষোভ কর্মসূচিতে এ কথা বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জনমত আছে কি না তা সম্পর্কে বলেন, অভ্যুত্থানে আহতদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন তারা আওয়ামী লীগ চায় কিনা? ধানমন্ডির ৩২ ভেঙে ফেলতে মানুষের অংশগ্রহণ দেখে বোঝেন না মানুষ কী চাচ্ছে? আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা সবাই আপনাদের সহযোদ্ধা, তাদেরকে এতো বোকা মনে করবেন না।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে সরকার শিগগিরই পদক্ষেপ নেবে : আসিফ মাহমুদ

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন (এলজিআরডি) ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে বর্তমান সরকার শিগগিরই পদক্ষেপ নেবে।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথমত এটা অত্যন্ত ইতিবাচক যে, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও এক ধরনের ‘ঐকমত্য’ তৈরি হচ্ছে। দেশের মানুষ তৎকালীন ক্ষমতাসীন ওই দলের অগণতান্ত্রিক এবং একগুয়েমী মনোভাব ও কার্যকলাপ মেনে নিতে পারেনি বলেই ৫ আগস্টের আগে ও পরে তাদের মধ্যে দলটি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে ‘ঐকমত্য’ প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন ঐকমত্য তৈরি হলে সরকারের জন্য যে কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সহজ হবে। আসিফ মাহমুদ গতকাল শুক্রবার বার্তা সংস্থা বাসসকে দেওয়া এক সাক্ষৎকারে একথা বলেন।

রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে সরকার সহসাই কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি, সাধারণ মানুষ কিংবা রাজনৈতিক দল; যে বা যারাই হই না কেনো, আমরা এ দেশের জনগণকে ‘রিপ্রেজেন্ট’ করি। ফলে, ৫ আগস্টের পরে জনগণের যে আকাক্সক্ষা ও চাওয়ার জায়গা আছে, সেগুলোকে প্রাধান্য দেয়াটাই আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিৎ।

অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়াও ৪টি আইন রয়েছে, যেখানে সরকার নির্বাহী আদেশে যে কোনো দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে, এটার লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্কটা (আইনি কাঠামো) কী হবে, এ বিষয়ে সরকার এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

তিনি বলেন, বিচারিক প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই জুলাই আগস্টের গণহত্যার সঙ্গে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে দলীয়ভাবে নিষিদ্ধ করা, নিবন্ধন বাতিল করাসহ যে কোনো ব্যবস্থা সরকার গ্রহণ করতে পারে। তবে বিষয়টি যেহেতু আইনের বাস্তয়নের সঙ্গে যুক্ত, সেক্ষেত্রে সরকার প্রয়োজনীয় সকল প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার বিষয়ে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসবে।

 

  • আ.লীগ
  • রাজনীতি
  • #