বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর সহিংস হামলার ঘটনা বেড়েছে

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ৭ দিন আগে

দেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলা বাড়ছে উল্লেখ করে তা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা বৈশ্বিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ)।

সংগঠনটি বলছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আশা দেখা দিয়েছিল যে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে অগ্রগতি হবে। কিন্তু সাংবাদিকেরা এখনো অরক্ষিত রয়ে গেছেন। তাদের ওপর নিয়মিতই হামলার ঘটনা ঘটছে। আরএসএফ তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ আহ্বান জানিয়েছে।

বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, চলতি ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর গুরুতর হামলা বেড়েই চলেছে। পুলিশের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। তাদের লাঠিপেটা ও হাতুড়িপেটা করা হয়েছে। কোনো কোনো গণমাধ্যমের বার্তাকক্ষও আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।

সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়ে সতর্ক করে প্যারিসভিত্তিক সংগঠনটি বলেছে, ‘এসব ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় আনতে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আমরা। পাশাপাশি সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

চলতি মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনাগুলো তুলে ধরা হয়েছে আরএসএফের বিবৃতিতে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ১২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম প্রতিদিনের কার্যালয়ে কয়েক শ ব্যক্তির হামলার চেষ্টার বিষয়টি এসেছে। শরীয়তপুরের একটি ক্লিনিক নিয়ে প্রতিবেদন করায় ৩ ফেব্রুয়ারি দৈনিক সমকালের স্থানীয় প্রতিনিধি সোহাগ খানকে হাতুড়িপেটা ও তাঁকে ছুরিকাঘাতের বিষয়টিও এসেছে আরএসএফের বিবৃতিতে।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজের জাভেদ আখতারের ওপর বিএনপির প্রায় ২০ জন সমর্থকের হামলার বিষয়টি তুলে ধরেছে আরএসএফ। সংগঠনটি বলছে, তাকে সহযোগিতা করতে এলে আরও দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা হয়। পরদিন ঢাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুরের সময় কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর বিক্ষোভকারীদের হামলার বিষয়টিও এসেছে বিবৃতিতে।

আরএসএফ বলছে, সাংবাদিকদের ওপর পুলিশও সহিংস হামলা চালাচ্ছে। ৯ ফেব্রুয়ারি ছয় সাংবাদিকের ওপর পুলিশের হামলার বিষয়টি উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ঢাকায় ছাত্রদের একটি বিক্ষোভে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় পুলিশ ওই ছয় সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। দাঙ্গা পুলিশের সদস্যরা তাদের লাথি দেন এবং লাঠিপেটা করেন। এ ঘটনায় আহত সাংবাদিকেরা বলেছেন, পরিচয়পত্র দেখানোর পরও তাঁদের ওপর হামলা হয়।

আরএসএফের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ডেস্কের প্রধান সিলিয়া মার্শিয়ে বিবৃতিতে বলেছেন, ‘বিগত কয়েক দিনে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর একের পর এক গুরুতর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা দেশটিতে উদ্বেগজনকভাবে গণমাধ্যমের ওপর সহিংসতা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে। দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় তাদের (সাংবাদিকদের) আক্রমণ করা হচ্ছে। প্রতিবেদন প্রকাশের কারণে প্রতিশোধমূলক শারীরিক হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে সাংবাদিকদের। এ ছাড়া বিক্ষোভকারীরা বার্তাকক্ষ আক্রমণ করছে। এসব হামলার জন্য দায়ী সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করা এবং এ ধরনের সহিংসতা বন্ধ ও গণমাধ্যমকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানাচ্ছে আরএসএফ।’

প্রতিবেদনের বিষয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সংগঠনটির এ বক্তব্যের সঙ্গে তিনি একমত নন। আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো সাংবাদিকদের অধিকার হরণ করেছে। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে পাঁচজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এরপর ব্যক্তিগত পর্যায়ে কিছু ঘটনা ঘটেছে। সেগুলোর প্রতিটি ঘটনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

  • বাংলাদেশ
  • রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস
  • সহিংস হামলা
  • সাংবাদিক
  • #