চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পুরাতন শামসুন নাহার হলটি ছাত্র হলে রূপান্তর করে ফজলুল কাদের চৌধুরীর নামে নামকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে চবির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধীর অভিযোগ তুলে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন। একইসঙ্গে এ হলটির নাম পদার্থবিজ্ঞানী ড. জামাল নজরুল ইসলামের নামে নামকরণের দাবি জানিয়েছে তারা।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টায় নগরের ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান সংগঠনটির চবি সংসদের নেতারা।
এ সময় লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ইফাজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ফজলুল কাদের চৌধুরী ও তার ছেলে রাজাকার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রধানতম দালাল হয়ে কাজ করেছিলেন। চট্টগ্রামে শান্তি কমিটি, রাজাকার বাহিনী, আল বদর ও আল শামস বাহিনী গঠনে তিনি ভূমিকা পালন করেন।
তিনি বলেন, এছাড়া একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনী গণহত্যা শুরু করার পর মুসলিম লীগের শীর্ষনেতা মানিক মোহাম্মদ কাসিমকে সঙ্গে নিয়ে ফজলুল কাদের চৌধুরী গভর্নর টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করেন। এতে তিনি কীভাবে পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনীকে সহযোগিতা করা যায় এবং তৎকালীন পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার সংগ্রাম ধূলিসাৎ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি আরো বলেন, ফজলুল কাদের চৌধুরীর গুডস হিলের বাড়িটি চট্টগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের নির্যাতনের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো। ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর নৌযানে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় আনোয়ারা উপজেলায় গহীরা উপকূলে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে তিনি। পরে তাকে বাঙালির বিরুদ্ধে ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠনের অভিযোগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী করা হয়।
হলটির নাম বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলামের নামে করার দাবি জানিয়ে ছাত্র ইউনিয়ন নেতা বলেন, যে মানুষটা কখনো চায়নি বাংলাদেশ নামে একটা রাষ্ট্রের জন্ম হোক, যিনি সরাসরি মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল- তার নামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নির্মিতব্য আবাসিক হলের নামকরণের সিদ্ধান্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অবিলম্বে স্বাধীনতাবিরোধী ফজলুল কাদের চৌধুরীর নাম বাতিল করতে হবে। এই হলের নাম বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম ঘোষণা করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি সুদীপ্ত চাকমা, সাধারণ সম্পাদক ইফাজ উদ্দিন আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক নয়ন কৃষ্ণ সাহা, শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সোহেল রানা, চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক শুভ দেবনাথ প্রমুখ।
এর আগে, গত শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৫৯তম সিন্ডিকেট সভায় তিনটি হলসহ ছয়টি স্থাপনার নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া সভায় পুরাতন ও পরিত্যক্ত শামসুন নাহার হলটির নামকরণ করা হয় ফজলুল কাদের চৌধুরী হল।