বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক সূচক : বাংলাদেশের ২৫ ধাপ অবনতি

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ১ সপ্তাহ আগে

লন্ডনভিত্তিক দ্য ইকোনমিস্ট সাময়িকীর ইকোনমিক ইনটেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক সূচক প্রকাশ করেছে। সূচকে আগের বছরের তুলনায় বাংলাদেশের ২৫ ধাপ অবনতি ঘটেছে। বিশ্বের ১৬৫টি দেশ ও দুটি অঞ্চলের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ইআইইউ এই সূচক প্রকাশ করেছে।

নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও বহুদলীয় ব্যবস্থা, সরকারের কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং নাগরিক অধিকারের ওপর ভিত্তি করে এই সূচক প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্বের ১৬৫ দেশ ও দুটি অঞ্চলের গণতন্ত্র পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে ১০ স্কোরের ভিত্তিতে এই সূচক তৈরি করা হয়। এবারের সূচকে ২৫ ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১০০তম। ২০২৪ সালে বিশ্বের আর কোনও দেশ গণতন্ত্রের সূচকে বাংলাদেশের মতো এত পেছায়নি।

পূর্ণ গণতন্ত্র, ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র, মিশ্র শাসনব্যবস্থা এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা— এই চার শ্রেণিতে সূচক তৈরি করা হয়েছে। ইকোনমিস্টের মতে, কোনও দেশের গড় স্কোর ৮ এর বেশি হলে পূর্ণ গণতন্ত্র, ৬ থেকে ৮ হলে ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র, ৪ থেকে ৬ হলে মিশ্র গণতন্ত্র এবং ৪ এর নিচে হলে সেই দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা জারি রয়েছে।

২০২৩ সালে ইআইইউয়ের সূচকে ৫ দশমিক ৮৭ স্কোর নিয়ে ৭৫তম স্থানে ছিল বাংলাদেশ। ২০২২, ২০২১ ও ২০২০ সালে এই সূচকে ৫ দশমিক ৯৯ স্কোর নিয়ে মিশ্র শাসনব্যবস্থার দেশের তালিকায় ছিল বাংলাদেশ। একই সূচকে ২০১৯ সালে ৮৮তম স্থানে বাংলাদেশর স্কোর ছিল ৫ দশমিক ৫৭।

২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক সূচক প্রকাশ করে ব্রিটিশ এই সাময়িকী। ওই বছর বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৬ দশমিক ১১। ২০০৭ সালে ৫ দশমিক ৫২, ২০০৮ সালে ৫ দশমিক ৮৭, তারপরের তিন বছর বাংলাদেশের স্কোর একই ছিল; ৫ দশমিক ৮৬।
২০০৬ সালে প্রকাশিত প্রথম গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশের তালিকায়। ওই বছর বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৬ দশমিক ১১। এর পরের বছর গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে বাংলাদেশ মিশ্র শাসনব্যবস্থার দেশের তালিকায় ঢুকে যায়। তখন থেকেই ইকোনমিক ইনটেলিজেন্স ইউনিউটের বিচারে মিশ্র শাসনব্যবস্থার দেশ রয়েছে বাংলাদেশ।

মিশ্র শাসনব্যবস্থার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যেসব দেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়, সেসব দেশকে মিশ্র শাসনব্যবস্থার বলা হয়। এ শাসনব্যবস্থায় বিরোধী দলের ওপর সরকারের চাপ, বিচারব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ, সাংবাদিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি ও হয়রানি করা হয়। এছাড়া দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার, দুর্বল আইনের শাসন, দুর্বল নাগরিক সমাজ এই শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের গণতন্ত্র সূচকে বিশ্বের যেকোনও দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি অবনতি ঘটেছে বাংলাদেশের। দেশটির স্কোর ১ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট কমে ৪ দশমিক ৪৪-এ দাঁড়িয়েছে। এছাড়া পাকিস্তান ও দক্ষিণ কোরিয়ারও সূচকে উল্লেখযোগ্য অবনতি ঘটেছে। ২০২৪ সালে সবচেয়ে খারাপ গণতন্ত্রের ১০টি দেশের মধ্যে রয়েছে এই দুই দেশ।
বাংলাদেশের বিষয়ে ইআইইউ বলছে, পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর অপসারণ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ২০২৪ সালে যেকোনো দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় স্কোর পরিবর্তনের রেকর্ড হয়েছে বাংলাদেশের। বাংলাদেশ ১৬৭টি দেশের মধ্যে ২৫ ধাপ পিছিয়ে যৌথভাবে ১০০তম স্থানে নেমে গেছে। বাংলাদেশের সমান স্কোর নিয়ে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বেনিনও ১০০তম অবস্থানে রয়েছে।

৯ দশমিক ৮১ স্কোর নিয়ে সূচকে গত বারের মতো সবার ওপরে আছে নরওয়ে। নিউজিল্যান্ড ২০২৩ সালের মতো এবারের সূচকে দ্বিতীয় স্থানে আছে। সুইডেন আছে তৃতীয় স্থানে। এরপরই চতুর্থ অবস্থানে আছে আইসল্যান্ড।

গত বছরের মতো এবারও সূচকের একদম তলানিতে জায়গা করে নিয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান। স্বৈরশাসকের অধীনে থাকা মিয়ানমার ১৬৬তম স্থানে আছে। এছাড়াও বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন কোরীয় দ্বীপের উত্তর কোরিয়া ১৬৫তম স্থানে আছে

  • ২৫ ধাপ
  • অবনতি
  • বাংলাদেশ
  • বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক সূচক
  • #