জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর যেখানে জনগণের রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক, নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত হওয়ার কথা, সেখানে প্রতিনিয়ত জানমালের নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়ছে বলে উল্লেখ করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সহিংসতা, বৈরী আচরণ, বিশ্বখ্যাত পণ্ডিতদের নাম পরিবর্তনের মতো ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে এই কমিটি প্রশ্ন করেছে, সরকার কাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব দিয়েছে?
রোববার গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির পক্ষে কমিটির সদস্য আনু মুহাম্মদের পাঠানো বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, সারাদেশে খুন, ধর্ষণ, মব সহিংসতা, হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক তৎপরতা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে, নারীর চলাফেরা, খেলা ইত্যাদির ওপর আক্রমণ হচ্ছে। এমনকি প্রকাশ্যে দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন লেখক-শিক্ষককে হত্যার হুমকি দিয়ে তা ব্যাপক প্রচার করার পরও হুমকিদাতার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আবরার হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিসহ বিভিন্ন গুরুতর অপরাধীদের জেল থেকে পালানোর খবর পাওয়া যাচ্ছে। কক্সবাজারের সমিতি পাড়ায় নিরস্ত্র জনগণের ওপর বিমানবাহিনীর গুলিবর্ষণের ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।
এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টার জবাবদিহি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি বলেছে, সংবাদমাধ্যমকে এসব ঘটনা যথাযথভাবে মানুষকে জানানোয় সক্রিয় হতে হবে।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত উল্লেখ করে বলেছে, সেখানেও নারীর প্রতি বৈরী আচরণ ও সহিংসতা থেমে নেই। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দলবদ্ধ সহিংসতার প্রতিবাদ করায় ৯ নারী শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার এবং তাঁদের প্রতি প্রক্টরের ঘৃণ্য আচরণ কার্যত যৌন নিপীড়নের পক্ষে প্রশাসনের অবস্থান নির্দেশ করে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবনের নাম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সক্রিয় নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর নামে রাখায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। তারা দ্রুত প্রক্টর পরিবর্তন এবং নামকরণ ও ছাত্রী বহিষ্কারের এসব অন্যায় সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে। এ ছাড়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বখ্যাত পণ্ডিত, বিজ্ঞানী, দার্শনিক ও কবিদের নাম বিভিন্ন ভবন থেকে বাদ দেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে কমিটি বলেছে, কাদের সরকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব দিয়েছে, তা চিন্তা করে তারা উদ্বিগ্ন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সত্যেন বসু, জগদীশ চন্দ্র বসু, জীবনানন্দ দাশ, লালন সাঁই, প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, জি সি দেব, ডা. আলীম চৌধুরী, তাজউদ্দীন আহমদ প্রমুখ ব্যক্তির প্রতি যথাযথ সম্মান জানানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি বলেছে, নিরাপত্তা বিধানের কথা বলে সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা, কিংবা যৌথ বাহিনীর একের পর এক অভিযান জনগণের নিরাপত্তার বদলে হয়রানি ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বৃদ্ধি করেছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর বিগত কয়েক মাসের কর্মকাণ্ডে এটা স্পষ্ট যে বর্তমান সরকার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মর্মবস্তু ধারণ করতে ক্রমাগত ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। অস্বীকারের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে পরিস্থিতির গুরুত্ব স্বীকার করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষে সরকারের দায়িত্বশীল ও সক্রিয় ভূমিকা দাবি করা হয়েছে বিবৃতিতে।