যুবদল নেতা পরিচয়ে চাঁদা চেয়ে না পেয়ে ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীরকে গুলি করে হত্যা

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ৯ ঘন্টা আগে

‘যুবদল নেতা’ পরিচয়ে চাঁদা চেয়ে না পেয়ে পরিকল্পিতভাবে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমকে (৫৫) গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্বে ছিলেন উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের শীর্ষ সন্ত্রাসী আরাফাত মামুন। নিজেকে ‘যুবদল নেতা’ পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি করে আসছিলেন।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল ইসলাম। নিহত জাহাঙ্গীর আলম হত্যা মামলায় অন্যতম আসামি আরাফাত মামুন (৪৮) ও তার সহযোগী বিপ্লব বড়ুয়াকে (৩৫) গ্রেফতার এবং অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

গত মঙ্গলবার (৪ মার্চ) রাত আড়াইটার দিকে বাগোয়ান ইউনিয়নের গরিবউল্লাহ পাড়ার মামার বাড়ি থেকে এ দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। মামুনের কাছ থেকে একটি বিদেশি রিভলবার, রিভলবারভর্তি পাঁচ রাউন্ড গুলি ও একটি রামদা এবং বিপ্লব বড়ুয়ার কাছ থেকে একটি দেশীয় তৈরি এলজি ও দুটি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় রাউজান থানার এসআই কাউছার হামিদ বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে একটি মামলা করেন।

জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘মামুন পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের গরীব উল্লাহপাড়ায় তার মামার বাড়িতে সহযোগী বিপ্লবকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। গ্রেফতারের সময় তিনি পুলিশকে গুলি করার চেষ্টা করে এবং ঘরের পেছনের দরজা দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিল। আমরা ভিকটিমের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছে, বিভিন্ন সময়ে ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু কত টাকা সেটা বলেনি তারা। তবে চাঁদার জন্যই ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।’

তিনি বলেন, ‘রাউজান উপজেলায় অস্ত্রের ঝনঝনানি দীর্ঘদিনের। এটা যে ৫ আগস্টের পর বেড়েছে এমন নয়। আগেও ছিল। রাউজানকে শান্তির জনপদে পরিণত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত তাদের তালিকা করা হচ্ছে। শিগগিরই সেনাবাহিনীসহ যৌথ অভিযান চালানো হবে।’

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘গ্রেফতার আরাফাত মামুন রাউজান উপজেলার শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অন্যতম। ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হত্যায় সরাসরি জড়িত ছিল। ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা সিসিটিভির ফুটেজ দেখে মামুনের জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেও হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে মামুন। বিস্তারিত জানতে তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে আটটি মামলা রয়েছে। ৫ আগস্টের পর রাউজানে গোলাগুলির যেসব ঘটনা ঘটেছে, এর মধ্যে কয়েকটি ঘটনায় মামুন জড়িত ছিল বলেও আমরা তথ্য পেয়েছি।’

ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হত্যার ঘটনায় এ দুজনসহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। আগে রমজান আলী ও গিয়াস উদ্দিন নামে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। চার জনই বিএনপির রাজনৈতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। গ্রেফতার আরাফাত মামুন ও বিপ্লব বড়ুয়া রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের বাসিন্দা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মামুন নিজেকে যুবদলের নেতা হিসেবে এলাকায় পরিচয় দেন। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকারের ছবি দিয়ে এলাকার বিভিন্ন সড়কে তোরণ নির্মাণ ও পোস্টার ছাপিয়ে প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। তবে যুবদলে তার কোনও পদ-পদবি নেই বলে জানিয়েছেন দলীয় নেতারা। গ্রেফতার বিপ্লব বড়ুয়াও যুবদলের রাজনীতিতে সক্রিয়। তিনি আরাফাত মামুনের অন্যতম সহযোগী হিসেবে এলাকায় পরিচিত।

গত ২৪ জানুয়ারি রাউজানের নোয়াপাড়া ইউনিয়নের নিরামিষপাড়ায় জুমার নামাজ পড়তে মসজিদে যাওয়ার পথে ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তার ছেলে মাকসুদ আলম বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

  • চাঁদা
  • ব্যবসায়ী
  • যুবদল নেতা
  • হত্যা
  • #