দুই মাসে নির্যাতিত ২৯৪ নারী, ধর্ষণের শিকার ৯৬

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ৭ ঘন্টা আগে
প্রতীকী ছবি

চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২৯৪ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৯৬ জন, যার মধ্যে ৪৪ জন শিশুও রয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র- আসক এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে সারাদেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৩৯ জন নারী। এদের মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২১টি এবং দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৮ জন।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এর ওয়েবসাইট ও আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) গবেষণা প্রতিবেদনে নারী নির্যাতনের নানা তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

ফেব্রুয়ারি মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৫৭টি, এর মধ্যে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১৭টি, ধর্ষণের পর হত্যার দুইটি ঘটনা ঘটেছে। এদের মধ্যে পাঁচ জন প্রতিবন্ধী কিশোরী ও নারীও রয়েছেন।

ফেব্রুয়ারিতে ধর্ষণের শিকার ৫৭ জনের মধ্যে ১৬ জন শিশু, ১৭ জন কিশোরী রয়েছেন। অন্যদিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তিন জন কিশোরী ও ১৪ জন নারী, ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন দুই জন নারী। এ ছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা ১৯টি, যৌন হয়রানি ২৬টি, শারীরিক নির্যাতনের ৩৬টি ঘটনা ঘটেছে এই মাসে।

মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন এমএসএফ এর প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় ছিল দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি। ফেব্রুয়ারি মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বেশি।

এ ছাড়া পরিবারিক সহিংসতা ও শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা বিগত মাসগুলোর মতো একই ধারাবাহিকতায় ঘটেছে, যা ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা, তা দৃশ্যমান হয়নি। ফলে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা ঘটেছে, যা জাতীয় জীবনে অন্যতম প্রধান উদ্বেগ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

২৭ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক গ্রুপ- ইউএনএফপি এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ নারী জীবনের কোন না কোন সময় শারীরিক, যৌন নির্যাতনসহ নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হন।

জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে যে ধরনের ফোন আসে, সেই তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নারীর প্রতি হয়রানি, নিপীড়ন, আর সহিংসতার অভিযোগ জানাতে বা সাহায্য চেয়ে ফোন কলের সংখ্যা প্রতিবছরই বাড়ছে।

বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী ডয়চে ভেলেকে বলেন, নির্বাচিত সরকারের সময় প্রতিকারের একটা চেষ্টা আমরা দেখতে পাই। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে সেই ধরনের কোন চেষ্টাও নেই। বরং কখনও কখনও নিপীড়কদের পুনর্বাসন আমরা দেখতে পাচ্ছি।

এমন পরিস্থিতিকে নারীর অধিকারের পথে প্রধান অন্তরায় বলে মনে করেন তিনি। সালমা আলী বলেন, আমি মনে করি, সরকারের দায়িত্বশীলদের মুখের কথা না, কাজের মধ্যে আমরা এর বাস্তবায়ন দেখতে চাই। দিন দিন দেশে নারীর অধিকার সংকুচিত হচ্ছে।

যৌন আক্রমণ থেকে রেহাই পাচ্ছে না কেউ

বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত গত কয়েকদিনের সংবাদ পর্যালোচনা করে নিচের সংবাদগুলো পেয়েছে ডয়চে ভেলে। শিশু, গর্ভবতী নারী, বিশেষভাবে সক্ষম নারী, কেউই রেহাই পাননি যৌন নির্যাতন থেকে।

৬ মার্চ: মাগুরায় বোনের বাড়ি বেড়াতে এসে ‘ধর্ষণের শিকার’ শিশু (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)

৭ মার্চ: চিপস কিনে দিয়ে প্রতিবন্ধী তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ (বাংলা ট্রিবিউন)

৮ মার্চ: খাবার ও বেলুনের লোভ দেখিয়ে দুই শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ, বৃদ্ধ গ্রেপ্তার (প্রথম আলো)

৮ মার্চ: ফরিদপুরে সাইকেলে ঘোরানোর কথা বলে শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ, কিশোর আটক (যমুনা টেলিভিশন)

৮ মার্চ: শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ, সালিসে দেড় লাখ টাকা জরিমানা, বাকি ৫৮ হাজার (আজকের পত্রিকা)

৯ মার্চ: এবার গাজীপুরে ৮ বছরের শিশুকে ধর্ষণ, ভিডিও ধারণও করলো ধর্ষক (ঢাকা ট্রিবিউন)

৯ মার্চ: সীতাকুণ্ডে সৈকতে বন্ধুকে বেঁধে রেখে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে মায়ের মামলা (আজকের পত্রিকা)

৯ মার্চ: নরসিংদীতে ৩ দিন আটকে রেখে গর্ভবতী নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ (যমুনা টেলিভিশন)

২০২৪ সালে ধর্ষণের শিকার ৪০১ নারী

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য সংরক্ষণ ইউনিটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সারা দেশে ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট ৪০১ জন নারী। এর মধ্যে ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ৩৪ জন এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন সাত জন। ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছেন ১০৯ জন। এর মধ্যে একজনকে ধর্ষণচেষ্টার পর হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া ২০২৪ সালে ২১ জন নারী গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

আসকের পরিসংখ্যান থেকে আরও জানা যায়, ২০২৪ সালে যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছেন অন্তত ১৬৬ জন নারী। উত্ত্যক্তকরণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন দুই জন ও খুন হয়েছে তিন জন নারী। এ ছাড়া ২০২৪ সালে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে মোট ৫২৩ জন নারী। এর মধ্যে নির্যাতনের কারণে মারা গেছেন ২৭৮ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ১৭৪ জন।

এমএসএফ এর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালে এক হাজার ১৫১ জন নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২৮১ জন নারী ও ৩৩১ জন শিশু ও কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। দলগত ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৮২ জন নারী, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে সাত জনকে, ধর্ষণের চেষ্টার শিকার হয়েছেন ১০৮ জন ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৩৮ জন।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময় নারী নির্যাতনের মাত্রা কমলে আমরা খুব খুশি হতাম। কিন্তু এটা কমার কোনো লক্ষণ দেখছি না। বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি, সমাজে নারী বিদ্বেষী মনোভাব বাড়ছে। নারীবিরোধী গোষ্ঠী আবার তৎপর হয়ে উঠেছে। তারা ধর্মকে নারীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে, নারীর চলাচলে বাধা দিচ্ছে, নারীর পোশাকের প্রতি আঙুল তুলছে, ধর্মকে হিংসা‑বিদ্বেষের কারণ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার যিনি নারী দিকে আঙুল তুলছেন তাকে ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। এগুলো তো ভালো লক্ষণ না।

সূত্র :  ডয়চে ভেলে
  • ধর্ষণ
  • নারী
  • #