টিউশনি করা ছাত্ররা এখন ৫ কোটি টাকার গাড়িতে চড়ে : বুলু

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ ঘন্টা আগে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নিয়ে গড়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, একজন ছাত্র ৫ আগস্টের আগে যারা হলে থাকত, টিউশনি করত- তারা হঠাৎ এতো টাকার মালিক হয়ে গেলেন। তিন-চার-পাঁচ কোটি টাকার গাড়িতে চড়েন; আগে পিছে আট-দশটা-বিশটা কোটি টাকার গাড়ি থাকে- তাদের জন্য যাতায়াতের ব্যবস্থা থাকে…এই যে একটা অশনিসংকেত জাতির জন্য।  মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপির পরিকল্পক মশিউর রহমান যাদু মিয়ার মৃত্যুবার্ষিকীতে আয়োজিত আলোচনা সভায় বুলু এ মন্তব্য করেন।

এনসিপির আত্মপ্রকাশে প্রশাসনকে ব্যবহারের পাশাপাশি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা সারাদেশ থেকে লোকজন আনা হয় বলে উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বুলু বলেন, এই দলটি যেদিন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সমাবেশ করে, মনে হয় যেন একটা রাজকীয় সংবর্ধনা হচ্ছে। দেশের ইতিহাসে আর কোনো রাজনৈতিক দলের এমনভাবে আত্মপ্রকাশ ঘটে নাই। ডিসিদের, প্রশাসনকে ব্যবহার করে অসংখ্য গাড়ির ব্যবস্থা করে মানুষ ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছিল- কোটি কোটি টাকার খরচ করা হয়েছে; এটা কীভাবে… প্রশ্ন উঠেছে সর্বত্র।

লোকজন এই দলটিকে ‘কিংস পার্টি’ বলছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা ড. ইউনূসের উদ্দেশে বলেন, আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি- আপনার সরকারের উপদেষ্টা ছিল, তারা ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল গড়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। অনেকে বলেছিলেন- আপনার নেতৃত্বে কিংস পার্টি হচ্ছে। পরে এক উপদেষ্টা সরকার থেকে বেরিয়ে এসে দল গড়লেন।
জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, আমি সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, জামায়াত ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে ১৭৫ দিন হরতাল করেছিল, সেদিন তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন করেছিল। সেই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা দেশনেত্রী সংবিধানে সংযোজন করেন জনগণের কল্যাণের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য।

বুলু বলেন, ৫ আগস্টের পর আমরা কী দেখলাম? জামায়াতের আমির, তিনি নাকি একসময়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন, হঠাৎ বলে দিলেন, দেশে যা ঘটেছে যারা যে অন্যায় করেছেন- আমরা সবাইকে মাফ করে দিলাম। আরে, আপনি মাফ করে দেওয়ার কে? জামায়াতের এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে।

তিনি বলেন, ছাত্রশিবিরের নেতারা বৈষম্যবিরোধীদের সাথে ছিলেন, আত্মগোপন থেকে তারা আত্মপ্রকাশ করলেন। বৈষম্যবিরোধীরা যারা নতুন দল গঠন করলেন, তারা হঠাৎ করে বক্তব্য দিয়ে বসলেন, আমরা সাতচল্লিশের পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে চাই, আমরা একাত্তর মানি না। যারা একাত্তর মানে না, বায়ান্ন মানে না- তারা জিয়াউর রহমানকেও মানে না।

তিনি আরও বলেন, একাত্তর হল আমাদের স্বাধীনতার মূল স্তম্ভ, আমাদের ভিত্তি; একাত্তর হলো ৩০ লক্ষ শহিদের রক্তের বিনিময়ে এই বাংলাদেশ। অতএব একাত্তর যারা মানে না- আমি মনে করি, তাদের এদেশের মানুষের কাছে ভোট চাওয়ার অধিকার নাই এবং ভোটে প্রার্থী হওয়ারও যোগ্যতা নাই, অধিকারও নাই।

দেশের আইনশৃঙ্খলার বেহাল দশা নিয়ে চরম হতাশা প্রকাশ করে বুলু বলেন, এভাবে দেশ চলতে পারে না। প্রতিদিন কী ঘটছে, আপনারা দেখছেন। মব জাস্টিসের নামে যেকোনো মানুষের বাড়িতে হামলা হচ্ছে, যেকোনো মানুষের সম্পদ লুণ্ঠন হচ্ছে, যেকোনো মানুষ যেকোনো জায়গায় খুন হচ্ছে, মারা যাচ্ছে…আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এতো অবনতি! দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে, বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না। এই অবস্থার পরিবর্তন আনতে হলে দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার দরকার, নির্বাচিত সরকার দরকার।

ড. ইউনূসের সরকারের কর্মপরিকল্পনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের এতো কাজ করার ম্যান্ডেট নেই। তাদের উচিত- অতি দ্রুত ন্যূনতম সংস্কার করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন- এটাই জনগণ প্রত্যাশা করে আছে। আমি বলতে চাই যত দ্রুত নির্বাচন দেবেন- তত দ্রুত দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।

ভাসানী স্মৃতি সংসদের সভাপতি জিয়াউল হক মিলুর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক নাদিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, কৃষক দলের তকদীর হোসেন, মো. জসিম, ভাসানী স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক ন্যান্সি রহমান।

  • গাড়ি
  • ছাত্র
  • টিউশনি
  • বরকত উল্লাহ বুলু
  • #