জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার মহাদান ইউনিয়নে সরকারি জলাশয় দখল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে টানা তিন দিন ধরে সংঘর্ষ, হামলা ও দেশীয় অস্ত্রের মহড়া চলছে।শুক্রবার (২১ মার্চ) বিকেলে জেলা বিএনপির জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল আওয়াল এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার-উস-সাদাত লাঞ্জু একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মহাদান ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির দুটি গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর সরকারি জলাশয় ‘তালতলা দহ’ দখল নিয়ে বিরোধ নতুন মাত্রা পায়।
তালতলা দহ ১৪২৮ থেকে ১৪৩৩ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে ইজারা দেওয়া হয়। আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের নেতা খলিলুর রহমান এটি নিয়ন্ত্রণ করতেন। পরবর্তীতে উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার-উস-সাদাত লাঞ্জুর নেতৃত্বে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন লিটন ও সাবেক ইউপি সদস্য ইসাহাক আলী জলাশয়টির নিয়ন্ত্রণ নেন।
এদিকে, জেলা বিএনপির জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল আওয়ালের পক্ষের ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল ওয়াহাবের নেতৃত্বে জলাশয়টি পুনর্দখলের চেষ্টা হয়।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) বিকেলে আব্দুল ওয়াহাবের অনুসারীরা সানাকৈর বাজার থেকে মোটরসাইকেল বহর নিয়ে তালতলা দহ এলাকায় মহড়া দেয়।
মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, আব্দুল ওয়াহাবের লোকজন জলাশয়ে গিয়ে পাঁচটি মাছ ধরার নৌকা ভাঙচুর, দুটি জালে আগুন ও লুটপাট চালায়। পরে পাল্টা হামলায় আনোয়ার-উস-সাদাত লাঞ্জু ও সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল ওয়াদুদের বাড়ি, মোটরসাইকেল ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালানো হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন।
শুক্রবার সকাল থেকে আবারও দফায় দফায় মহড়া হয়। সানাকৈর বাজারে বিএনপির দলীয় কার্যালয়, অধ্যাপক আব্দুল আওয়ালের বাড়ি ও কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
বিকেলে সানাকৈর বাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আব্দুল আওয়াল বলেন, “রিফিউজি আনোয়ার-উস-সাদাত লাঞ্জু ও বহিষ্কৃত নেতা আব্দুল ওয়াদুদ গং এলাকায় চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস চালাচ্ছে। ছাত্রলীগের সহযোগিতায় তারা বিএনপির কার্যালয় ও নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে।”
অন্যদিকে, উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার-উস-সাদাত লাঞ্জু পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, “আব্দুল আওয়াল জনপ্রিয়তা হারিয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন। তালতলা দহ দখল নিতে তিনি আমাদের আটটি বাড়ি, ছয়টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছেন।”
ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল ওয়াহাব বলেন, আব্দুল ওয়াদুদ একজন মাদক ব্যবসায়ী। তিনি ৫ আগস্টের পর থেকে এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে হামলা করে দলীয় প্রধানের ছবি ভাঙচুর করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্যে জেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল কবির শামীমকে ফোন করা হলে তার ফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।
জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইয়াহিয়া আল মামুন বলেন, সংঘর্ষের কারণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা চলছে। এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।