সুনামগঞ্জে অর্ধকোটি টাকার পাথর, সিন্ডিকেট করে ৮ লাখ টাকায় নিয়ে নিলেন বিএনপি নেতারা

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ৬ দিন আগে

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তে খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রায় অর্ধকোটি টাকার পাথর বিএনপি নেতারা মাত্র ৮ লাখ টাকায় নিলামে কিনে নিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের নিলামে অংশগ্রহণ করতে না দিয়ে তারা নিজেরাই সিন্ডিকেট করে বাজার দরের চেয়ে অনেক কম মূল্যে নিলাম নিয়ে গেছেন। এতে সরকার বিপুল রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে জব্দকৃত পাথর যথাস্থানে রেখে অবৈধভাবে খনন করে আরো বিপুল পাথর উত্তোলনেরও প্রস্তুতি নিয়েছেন নিলামকারী বিএনপি নেতাকর্মীরা। নিলামের অজুহাতে নিলামকৃত পাথরের সঙ্গে এখন নতুন করে আরো বিপুল পাথরও উত্তোলন করা হবে বলে স্থানীয়দের আশঙ্কা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে তাহিরপুর সীমান্তের নয়াছড়ায় পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে ভেসে আসা পাথর ও চুনাপাথর এবং বিশ্বম্ভরপুরের ধোপাজান নদী থেকে অবৈভভাবে উত্তোলিত বালু বিভিন্ন সময়ে জব্দ করা হয়। জব্দকৃত এসব খনিজ সম্পদ নিলাম দিতে গত ২০ মার্চ খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মো. মামুনুর রশিদ স্বাক্ষরিত এক উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে দেখা গেছে তাহিরপুর উপজেলার শান্তিপুর মৌজায় ১নং সরকারি খাস খতিয়ানভূক্ত নয়া ছড়ায় পাহাড়ি ঢলের সাথে আসা ২৭ হাজার ৩৫০ ফুট পাথর এবং ৭ হাজার ২২৫ ঘনফুট চুনাপাথর মজুদ রয়েছে। এই পাথর আজ সোমবার অপেন নিলামের তারিখ ঘোষনা করা হয়। এছাড়াও একই বিজ্ঞপ্তিতে ধোপাজান নদী থেকে অবৈধভাবে উত্তোলিত ৬০ হাজার ঘনফুট বালু একই দিনে নিলাম করার তারিখ ঘোষণা করা হয়।

এদিকে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে উন্মুক্ত নিলামে তাহিরপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আনিসুল হকের লোকজন সিন্ডিকেট করে নিলামে অংশ নেয়। অন্যদের নিলামে অংশ নিতে তারা বাধা প্রধান করে ও হুমকি ধমকি দেয়। উন্মুক্ত নিলাম তদারকি করেন আনিসুল হকের ঘনিষ্টজন খ্যাত তাহিরপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বাদল মিয়া। এছাড়াও বিএনপির অন্য বলয়ের নেতা জুনাব আলী চেয়ারম্যানের লোকজনও এতে যুক্ত ছিলেন।

নিলাম কার্যক্রমে যুক্ত প্রশাসনের উপস্থিত সংশ্লিষ্টরা জানান, সিন্ডিকেট করে উন্মুক্ত নিলামে অংশ নেন ১১জন। তারা প্রচলিত বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক মূল্য হাকেন। যার ফলে প্রশাসন বাধ্য হয়েই অল্পমূল্যে পাথর বিক্রি করতে হয়েছে। আমরা অনেক চেষ্টা করেও দাম তুলতে পারিনি।

ব্যবসায়ীরা জানান, চুনাপাথর বর্তমানে ১৮০ টাকা ফুট বিক্রি হচ্ছে। আর দেশিয় বোল্ডার পাথর ১৫০-১৬০-১৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে প্রতি ফুট। কিন্তু নিলামে অংশগ্রহণকারীরা সব মিলিয়ে ২৭ হাজার ৩৫০ ফুট পাথর এবং ৭ হাজার ২২৫ ঘনফুট চুনাপাথর মাত্র ৮ লাখ ৩২ হাজার টাকায় দাম হাঁকেন। রাজস্বের স্বার্থে প্রশাসন অর্ধ কোটি টাকার পাথর ওই মূল্যেই বিক্রি শেষ পর্যন্ত সিন্ডিকেটের হাতে তোলে দেয়।

এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন যে স্থানে পাথর মজুদ আছে এখন নিলামের বৈধতা দেখিয়ে বিএনপি নেতারা দীর্ঘদিন এখানে রেখে নতুন করে পাথর উত্তোলন করার সুযোগ নিবেন। তারা এ থেকেও হাতিয়ে নিবেন মোটা অংকের টাকা।

তাহিরপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বাদল মিয়ার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

নিলাম তত্ত্বাবধানকারী খনিজ খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মো. মামুনুর রশিদ বলেন, অংশগ্রহণকারীরা ন্যয্য দাম হাঁকেননি। বাজারে বেশি থাকলেও উন্মুক্ত নিলামে তাদের হাঁকা দামেই আমাদেরকে পাথর বিক্রি করতে হয়েছে। তবে বাজার মূল্য এর চেয়ে বেশি এটা স্বীকার করেন তিনি।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাশেম বলেন, খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পরিচালকের সামনেই নিলাম হয়েছে। নিলামে ১১ জন অংশ নিয়েছিলেন। এর চেয়ে বেশি মূল্য না পাওয়ায় নিলামে অংশগ্রহণকারী সর্বোচ্চ দরদাতাকেই নিলাম দেওয়া হয়েছে।

  • অর্ধকোটি টাকা
  • পাথর
  • সুনামগঞ্জ
  • #