আওয়ামীপন্থি ৬১ আইনজীবী কারাগারে

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ১ দিন আগে

আওয়ামী লীগপন্থি ৬৪ আইনজীবীর আগাম জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি আবু সাঈদ সাগরসহ ১৯ আইনজীবীর জামিন আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ জনই নারী আইনজীবী।

গতকাল রোববার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিব শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। একসঙ্গে এত আইনজীবীকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনা নজিরবিহীন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এত আইনজীবীকে এভাবে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাবে।

এর আগে সকালে ৯৩ আইনজীবী আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। তবে আদালতে কয়েকজন সশরীরে হাজির ছিলেন না। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জামিন শুনানি শুরু হলে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে জানান, তাদের মক্কেলরা হাইকোর্ট থেকে আট সপ্তাহের জন্য আগাম জামিন পেয়েছেন। আগাম জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। আদালতের

আদেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে তারা আত্মসমর্পণ করে মামলায় জামিন আবেদন করেছেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এর বিরোধিতা করে বলা হয়, অভিযুক্ত আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ গুরুতর। তাদের জামিন আবেদন খারিজ করে কারাগারে পাঠানো উচিত। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিকেল ৫টার দিকে বিচারক আসামিপক্ষের জামিন আবেদন খারিজ করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে রাত ৮টার দিকে তাদের প্রিজনভ্যানে করে কারাগারে নেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট আদালতের এজলাসে ৬১ আইনজীবীকে পাওয়া যায়। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে তিনজন পালিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন ওই আদালতের পিপি ওমর ফারুক ফারুকী। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এরপর আদালতের আদেশ অনুযায়ী ওই তিনজন ছাড়া বাকি ৬১ জনকে কারাগারে পাঠানো হয় বলেও জানান ঢাকা মহানগরের এই পিপি।

কারাগারে যাওয়া উল্লেখযোগ্য আইনজীবীর মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান মানিক, গাজী শাহ আলম, মাহবুবুর রহমান, আসাদুর রহমান রচি, সাইবার ট্রাইব্যুনালের পিপি নজরুল ইসলাম শামীম ও মোরসেদ হোসেন শাহীন, লিটন মিয়া ও মাহফুজুর রহমান চৌধুরী। আবু সাঈদ সাগর ছাড়া অন্য যারা জামিন পেয়েছেন, তারা হলেন সালেহা আক্তার শিল্পী, আফরোজা ফারহানা অরেঞ্জ, জেসমিন আক্তার, তাসলিমা ইয়াসমিন নদী, শিখা ইসলাম, মোকাররমা মিতা, শায়লা পারভীন পিয়া ও সালমা হাই টুনি। তারা সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বেশির ভাগই আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন সময় দায়িত্ব পালন করেছেন।

এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহ্‌দীন মালিক বলেন, এগুলো ঢালাও মামলা। এসব মামলায় শত শত আসামি আছেন। এগুলো অতীতের মতো বহুলাংশে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব মামলায় অভিযুক্তদের সংশ্লিষ্টতার বিচার না করে শুধু এজাহারে নাম থাকার ভিত্তিতে এভাবে কারাগারে পাঠালে ন্যায়বিচারের ব্যাপারে আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাবে। এর পরিণতি দেশের জন্য অমঙ্গলজনক হতে পারে।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম কে রহমান বলেন, এত আইনজীবীকে কারাগারে পাঠানো নজিরবিহীন। তারা তো সবাই ঢাকা বারের সদস্য। একজন বারের সদস্যের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ যাচাই-বাছাই না করে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কারাগারে পাঠানো কতটুকু সমীচীন, সেটি বিবেচনা করা উচিত। এসব আইনজীবী তো উচ্চ আদালত থেকে আগাম অন্তর্বর্তী জামিন নিয়েছিলেন। জামিন পেলে তারা তো পালিয়ে যেতেন না। উচ্চ আদালতের আদেশ নিম্ন আদালতের বিবেচনায় নেওয়া উচিত ছিল।

মামলা সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গত ৪ আগস্ট আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের ওপর হামলা, চেম্বার ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় আওয়ামী লীগপন্থি ১৪৪ আইনজীবীর বিরুদ্ধে গত ৬ ফেব্রুয়ারি সিএমএম আদালতে মামলা করেন ঢাকা বারের কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী বাবু। আদালত বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করে অভিযোগটি কোতোয়ালি থানায় এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার আদেশ দেন। মামলার পর হাইকোর্ট থেকে আট সপ্তাহের আগাম অন্তর্বর্তী জামিন নেন ১১৫ আইনজীবী। গতকাল আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন তারা। আজ সোমবার তাদের জামিনের মেয়াদ শেষ হবে।

  • আইনজীবী
  • আওয়ামীপন্থি
  • কারাগার
  • #