বাধা উপেক্ষা করে ঢাকায় লাখো মানুষের গণজমায়েতের মাধ্যমে সমাবেশ করেছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত। ফিলিস্তিনসহ মুসলিম বিশ্বের নিপীড়িত মুসলমানদের পক্ষে সংহতি জানাতে এই সমাবেশ করা হয়। শনিবার রাজধানীর প্রেস ক্লাবে সকাল ১০টা থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত সমাবেশের অনুমতি থাকলেও সমাবেশ করতে দেওয়া হয় ৪০ মিনিট।
এর আগে সকাল থেকেই দলে দলে সমাবেশস্থলে আসেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারীরা। প্রেসক্লাব থেকে দৈনিক বাংলা অপর দিকে গুলিস্থান জিরো পয়েন্ট, অন্যদিকে প্রেসক্লাব থেকে দোয়েল চত্বর অপর দিকে মৎস্য ভবন পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল পুরো জমায়েত। এ সময় লাখো জনতা ‘ ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’ বলে শ্লোগান দিতে থাকেন। ভোর থেকে বেলা সোয়া ১১টা পর্যন্ত প্রেসক্লাবের আশপাশের সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অভিযোগ, অনুমতির নামে প্রশাসন দুই দিন যে নাটক করেছে, তা একেবারেই দুঃখজনক। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। অনেক নাটকের পর সমাবেশ করতে দেওয়া হয় প্রেস ক্লাবের সামনে। লাখো মানুষের সমাবেশের জন্য একটি মঞ্চ পর্যন্ত তৈরি করতে দেওয়া হয়নি। নানা টালবাহানা, নাটকের পর এমন জায়গায় স্থান নির্ধারণ করা করেছে যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষের মিডিয়া কভারেজ করা সম্ভব নয়। যে জায়গায় এরপরও মানুষ এসে উপস্থিত হয়েছে।
এর আগে এই সমাবেশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সমাবেশের অভিযোগ তুলে রাত থেকেই ব্যাপক ধরপাকড় চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সমাবেশে আসতে পথে পথে বাধাও দেওয়া হয়। এতো বাধা উপেক্ষা করে সমাবেশ সফলের জন্য সকল পীর মাশায়েখ, আলেম ওলামা, সাজ্জাদানশীন, সর্বস্তরের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত।
সমাবেশ থেকে আয়োজকরা ৬টি দাবি উত্থাপন করেন- জাতিসংঘের সরাসরি হস্তক্ষেপে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করতে হবে; ইসরায়েলের হামলায় ফিলিস্তিনের যত কাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে সকল কিছুর আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের সরাসরি হস্তক্ষেপে ইতোমধ্যে যত হত্যা হয়েছে সকল হত্যাকাণ্ড ও হামলার তদন্তপূর্বক বিচার নিশ্চিত করতে হবে; ইন্ডিয়ার লোকসভায় পাস হওয়া অসাংবিধানিক ও মুসলিমবিরোধী ওয়াকফ বিল লোকসভায় বাতিল ঘোষণা করতে হবে; ৫ আগস্ট থেকে এই পর্যন্ত মাজারে যত হামলা, অগ্নিসংযোগ হয়েছে সবগুলো ঘটনায় বিভাগীয় তদন্ত কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং সকল রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া সমাবেশ থেকে তিনটি অঙ্গীকার গ্রহণ করা হয়- ইসরায়েল ও ইন্ডিয়াসহ সকল প্রকার বৈশ্বিক আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার ভূমিকা জারি রাখব; পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগসহ সকল প্রকার দেশীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই জারি রাখব এবং বাংলাদেশের মুসলমানদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সমাজ, সংস্কৃতি ও গোষ্ঠী স্বার্থে যে কোনো সময় যেকোনো মূল্যে আমরা ময়দানে নামতে প্রস্তুত থাকব, ইনশাআল্লাহ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ফিলিস্তিনের মজলুম মুসলমানদের ওপর ইসরায়েলের চরম বর্বরতা ও নৃশংসতা আর সহ্য করা যায় না। ইসরায়েলের এ বর্বরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা অব্যাহত রাখার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তারা। বক্তারা বলেন, যতদিন প্রাণ থাকবে, ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মুসলিমদের পক্ষে কথা বলা আমরা বন্ধ করবো না।
মাজারে হামলার প্রসঙ্গে বক্তারা বলেন, ৫ আগস্ট থেকে দেশে অসংখ্য মাজারে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে, যা সুস্পষ্টভাবে জুলুম ও অমানবিক। বক্তারা সতর্ক করেন, ভবিষ্যতে যদি কোনো মাজারে হামলা হয়, তাহলে সম্মিলিতভাবে তা প্রতিরোধ করা হবে। একইসঙ্গে, ভারতে মুসলিমদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থাপনায় হামলার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানানো হয় এবং ঘোষণা দেওয়া হয়, সেখানে হামলা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ থেকেও প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
পরে দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে সংহতি সমাবেশ শেষ হয়। আধিপত্যবাদবিরোধী মুসলিম ঐক্য মঞ্চের সভাপতি ও মুসুরি খোলা দরবার শরীফের পীর শাহ্ হাসানুজ্জামান সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। এতে বক্তব্য দেন ইসলামি বক্তা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান আরিফ, আয়োজক কমিটির উপাধ্যক্ষ মুফতি আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক, আনম মাসউদ হোসাইন আল কাদেরী, অধ্যক্ষ আবু জাফর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন এবং সৈয়দ মুহাম্মদ হাসান আল আযহারী প্রমুখ।