গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা রুবেল মিয়াকে (৩২) ঘরে প্রবেশ করে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা করেছেন নিহতের মা ফাতেমা বেগম। পুলিশ এজাহারভুক্ত ১২নং আসামি জিহাদ হোসেন মুন্নাকে গ্রেফতার করেছে। রবিবার (২৭ এপ্রিল) বিকালে কাপাসিয়া থানার ওসি মুহম্মদ আবদুল বারিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে শনিবার (২৬ এপ্রিল) বিকালে রুবলের মা ফাতেমা বেগম ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৩-৪ জনকে আসামি করে কাপাসিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় উপজেলার বারিষাব ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি তাইজুদ্দিনসহ দলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা রয়েছেন।
মামলায় আসামিরা হলেন তানভীর (২৫), মাহমুদুল (২২), মতিউর রহমান (৩০), সাব্বির (৬০), হাসান (১৯), জুনায়েদ (১৮), রাজীব (১৮), জুলহাস (২৫), আল আমিন (২০), তাইজুদ্দিন (৫০), মোছাদ্দেক (৩৫) ও জিহাদ হোসেন মুন্নাসহ তাদের ৩/৪ জন সহযোগী। মামালা রুজুর পর পুলিশ জিহাদ হোসেন মুন্নাকে গ্রেফতার করে।
রুবেল মিয়া উপজেলার বারিষাব ইউনিয়নের বারাব গ্রামের চাঁন মিয়ার একমাত্র ছেলে। তিনি ওই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাতে বসতবাড়িতে প্রবেশ করে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে আসামিরা। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাত ৮টায় গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
রবিবার বিকালে রুবেল মিয়ার স্ত্রী ফারজানা বলেন, আমরা গরিব মানুষ। আমার স্বামী সারাদিন রোদে পুড়ে ধান কেটেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরে আমি, আমার স্বামী, ছেলে ও শাশুড়িকে নিয়ে একই গ্রামের পাশের হিন্দু বাড়িতে বিয়ের দাওয়াতে যাই। রাতেই বিয়ে বাড়ী থেকে আমার সকলেই বাড়িতে চলে আসি। এ দিন রাত ১১টার দিকে হঠাৎ ১২/১৪ জন বিএনপি নেতা ঘরে প্রবেশ করে আমার স্বামীকে মারধর শুরু করে। আপনারা কেন আমার স্বামীকে মারধর করতেছেন জানতে চাইলে বলে, তোর স্বামী আওয়ামী লীগ করে, এই জন্য মাইরা ফেলবো। আমি তাদের পায়ে ধরেছি, তারা আমার কোনও কথা শোনেনি। আমার স্বামীর কোনও দোষ নাই।
তিনি বলেন, শুধুই আওয়ামী লীগ করে বলে তারা আমার স্বামীকে মাইরা ফেলাইছে। আমাদের চোখের সামনে স্বামীর নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হইছে। মারধরের পর টাকা জোগাড় করতে না পেরে তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে পারিনি। তিন দিন পর শুক্রবার হাসপাতালে নিছি, সেই দিন হাসপাতালেই মারা গেছে। আমার ছেলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। আমার শাশুড়ি বৃদ্ধা। আমার কী গতি হবে? আমি এখন কী করবো? আমার সংসার কেমনে চলবে? আমি হত্যাকারীদের বিচার চাই।
মামলার এজাহার ও নিহতের মা ফাতেমা বেগম বলেন, শত্রুতার জেরে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাত ১১টার দিকে ১২ আসামিসহ তাদের সহযোগী অজ্ঞাত আরও ৩-৪ জন আসামি লাঠিসোঁটা নিয়া আমার ঘরের পূর্ব ভিটায় অনধিকার প্রবেশ করে আমার ছেলে এবং আমার পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা করে। এ সময় সব আসামিরা বসতঘরে প্রবেশ করে দরজা ভেতর থেকে আটকে ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করে পাঁচ হাজার টাকার ক্ষতি সাধন করে। আমার ছেলে রুবেল বাধা দিলে আসামিরা হাতে থাকা শক্ত কাঠের রোল দিয়া হত্যার উদ্দেশে ছেলের শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়িভাবে মারধর করে ঘরের মেঝেতে ফেলে দেয়।
পরে আসামিরা আমার ছেলের বুকে, পেটে ও পিঠে উপর্যুপরি লাথি ও মুড়া দিতে থাকে। একপর্যায়ে ছেলের মুখ ও কান দিয়ে রক্ত ঝরে। ছেড়ে দেওয়ার জন্য আমি ও ছেলের স্ত্রী ফারজানা আসামিদের হাতে পায়ে ধরি। তারপরও তারা আমার ছেলেকে না ছেড়ে মারধর করতে থাকে। টাকা-পয়সা না থাকায় প্রথমে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করি। অবস্থার উন্নতি না হলে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) সকালে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ভর্তি করি। পরে রাত ৮টায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল কাপাসিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি মোশাররফ হোসেন মাঝি বলেন, আসামি তাজুউদ্দীন কাপাসিয়া উপজেলার বারিষাব ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি। সে আমাকে ফোন করে বলছে, এলাকায় একটা মামলার ঝামেলায় পড়ে গেছে। আমার মিটিং থাকায় বিস্তারিত জানতে পারিনি। ওই এলাকায় স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা রুবেল মিয়ার বাড়িতে গিয়ে মারপিট করছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে খোঁজ নেবো।
বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা রুবেল মিয়া হত্যার সঙ্গে জড়িত কি না জানতে চাইলে কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আজিজুর রহমান পেরা বলেন, আমি অসুস্থ, এখন ঢাকায় আছি, হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে এসেছি। এখনও এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনও তথ্য জানা নেই।
কাপাসিয়া থানার ওসি মুহম্মদ আবদুল বারিক জানান, রুবেল মিয়া নিহতের ঘটনায় ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৩-৪ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা রুজু হয়েছে। তাদের মধ্যে এজাহারভুক্ত আসামি জিহাদ হোসেন মুন্নাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেফতার আসামিকে রিমান্ড চাওয়া হবে। আসামি তাইজুদ্দিনের পরিচয় পাওয়া গেছে। সে উপজেলার বারিষাব ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি। নিহতের লাশ গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে।
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন