সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিল, চেয়ারম্যানকে অপসারণসহ ৪ দফা দাবি পূরণের ঘোষণা দেওয়া হলে আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হবে বলে জানিয়েছেন এনবিআরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাত পৌনে ১২টার দিকে এক বিবৃতিতে এমনটা জানিয়েছে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আন্দোলনের সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
বিবৃতিতে ঐক্য পরিষদ বলেছে, আজ (২২ মে) রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত প্রেস রিলিজের প্রতি এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। প্রেস রিলিজে উল্লিখিত গত ২০ মে মাননীয় অর্থ উপদেষ্টাসহ দুইজন উপদেষ্টার সাথে ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিবৃন্দের আলোচনার বিষয়ে আমরা ওইদিন প্রেস রিলিজ এবং ২১ মে প্রেস রিলিজ ও প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে জানিয়েছি। আমরা ঐ দুই প্রেস রিলিজের বক্তব্যে অটল রয়েছি। তদুপরি, আজকের প্রেস রিলিজে বর্ণিত ওই সভার সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। এর মাধ্যমে এনবিআরের দুই ক্যাডারের দাবি যে যৌক্তিক ছিল, তা প্রেসনোটের (অর্থ মন্ত্রণালয়ের) মাধ্যমে স্বীকার করা হয়েছে, সে জন্য ধন্যবাদ।
বিবৃতিতে বলা হয়, আমাদের মৌলিক চারটি দাবি, ১. জারিকৃত অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে; ২. অবিলম্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে; ৩. রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ জনসাধারণের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে; এবং ৪. জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক প্রস্তাবিত খসড়া এবং পরামর্শক কমিটির সুপারিশ আলোচনা-পর্যালোচনাপূর্বক প্রত্যাশী সংস্থা, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের মতামত নিয়ে উপযুক্ত ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ বলছে, আজকের প্রেস রিলিজে যৌক্তিক দাবিগুলোর অংশবিশেষ পূরণ হলেও আমাদের উপর্যুক্ত মৌলিক চারটি দাবির বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট আশ্বাস পাওয়া যায় নি। অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত প্রেস রিলিজে অধ্যাদেশটি জারি করার পর তা বাস্তবায়নের জন্য অনেকগুলো কাজ রয়েছে এবং এগুলো সময়সাপেক্ষ বলে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, সেগুলো বলার সময় এখন নয়। আমরা এখনও দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাপনা কাঠামো নিয়ে একমত হতে পারিনি। সেই কাজগুলো করার আগে রাজস্ব নীতি সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটি, প্রত্যাশী সংস্থা, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের মতামত নিয়ে একটি উপযুক্ত ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া প্রেস রিলিজে উল্লিখিত আজকের সমঝোতা প্রম্তাব মেনে নেওয়ার বিষয়েও এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ অবগত নয়। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ দৃঢ়তার সাথে বলতে চায়, আজকে আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। উল্লেখ্য, আমাদের বিগত দিনের কর্মসূচিতে কোনো পদ-পদবি হ্রাস বা বৃদ্ধির বিষয়েও আমরা কোনো বক্তব্য প্রদান করিনি, এগুলো আমাদের দাবিও নয়, ছিলও না কোনোদিন।
এনবিআর কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বিবৃতিতে আরও বলেন, আমরা আরও উল্লেখ করতে চাই, আমরা আমাদের কর্মসূচি ধীরে ধীরে যথেষ্ট সময় দিয়ে তীব্র করতে বাধ্য হয়েছি, হঠাৎ করে নয়। কর্মসূচির মাঝে মাঝে আমরা বিরতিও দিয়েছি দেশ ও মানুষের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে। সরকার শুরু থেকেই যদি আমাদের যৌক্তিক দাবিসমূহের বিষয়ে আজকের মতো ভাববার সদিচ্ছা প্রদর্শন শুরু করত, তবে এই সমস্যা অনেক আগেই সুরাহা হয়ে যেত বলে আমরা মনে করি। তবে, দেরিতে হলেও সরকারের এই সদিচ্ছার প্রারম্ভকে আমরা আরেকবার স্বাগত জানাই। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের চারটি যৌক্তিক দাবি পূরণের সুনির্দিষ্ট আশ্বাস আমরা শীঘ্রই পাব।
ঐক্য পরিষদ বলছে, ইতোমধ্যে যে সব বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সেগুলোর জন্য সাধুবাদ জানাই। সাথে আমরা আরও আহবান করছি, আমাদের মূল চারটি দাবিগুলো মানার বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া হোক। দাবি পূরণের ঘোষণা আসার সাথে সাথে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হবে। দাবি পূরণের আগ পর্যন্ত আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি আগামী ২৪ মে শনিবার থেকে চলবে।
কর্মসূচির ফলে করদাতা ও সেবাপ্রার্থীগণের সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ঐক্য পরিষদ জানায়, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ মনে করে, তাঁদের এই সাময়িক ত্যাগ দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে ও রাজস্ব ব্যবস্থার টেকসই সংস্কারে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি, আমরা এটাও জানিয়ে রাখতে চাই, আমাদের দাবি আদায় হলে আমরা নির্ধারিত অফিস সময়ের বাইরে অতিরিক্ত সময়ে কাজ করে অনিষ্পন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করব।