পরিবারের দাবি ‘জুলাই শহীদ’, বৈষম্যবিরোধীরা বলছেন ‘আত্মঘাতী মৃত্যু’

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ১ সপ্তাহ আগে

আগস্টে আওয়ামী সরকার পতনের পর থানা থেকে অস্ত্র লুটের সময় ‘অসাবধানবশত গুলিতে নিহত’ এক যুবককে জুলাই শহীদ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগ তুলেছেন খোদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। তবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদের স্বীকৃতি পাওয়া ইমতিয়াজ হোসেনের পরিবার বলছে, আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন ইমতিয়াজ। গত ৫ আগস্ট থানা থেকে লুট হওয়া গুলিতেই তাকে হত্যা করা হয়।

নোয়াখালী জেলার চাটখিলে ঘটেছে এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাল্টাপাল্টি সরব অনেকেই। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সবশেষ শহীদের স্বীকৃতি পাওয়া ওই যুবকের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দেয় বৈছাআ নেতারা। এরই প্রেক্ষিতে ইমতিয়াজের পরিবারে সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জেলা প্রশাসকে পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে ইমতিয়াজ নিহতের প্রায় ৯ মাস পর মামলা দায়ের করেছে ইমতিয়াজের বাবা হাবিবুর রহমান নোয়াখালী জেলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন। বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাফায়েত উল্যাহ কবির সোমবার (২৬ মে) মামলা দায়েরের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।

ওই মামলায় ইমতিয়াজকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় কর্মী উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি এইচএম ইব্রাহিম, সাবেক পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন মোহাম্মদ উল্ল্যাহ পাটোয়ারীসহ ৫৭ জন আসামি করা হয়েছে।

এদিকে ইমতিয়াজের মৃত্যুকে ‘আত্মঘাতী মৃত্যু’ অ্যাখ্যা দিয়ে গেজেটভুক্ত তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বৈছাআ নেতারা।

ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, ইমতিয়াজ পেশায় কুরিয়ার সার্ভিসের ডেলিভারিম্যান ছিলেন। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের খবরে চাটখিল থানায় ঢুকে অস্ত্র লুট করেন তিনি। পুলিশের অস্ত্র নিজের কোমরে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে স্থান ত্যাগ করার সময় অসাবধানতাবশত একটি বুলেট তার পায়ে লাগে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। তবে সে আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিল না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চাটখিল প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম বলেন, একজন আত্মঘাতী ব্যক্তি কিভাবে জুলাই শহীদ হিসেবে গেজেটভুক্ত হয় তা বুঝতে পারছি না। তাছাড়া তারা জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে ৮ লাখ টাকা পেয়েছে বলে শুনেছি। ইমতিয়াজের পিতা হাবিবুর রহমান আগস্টের পর থেকে মামলার হুমকি দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও আছে। যেখানে আহত যোদ্ধারা চিকিৎসা পাচ্ছে না, সেখানে তারা এভাবে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইমতিয়াজের বাবা হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, থানা থেকে অস্ত্র লুট করেছে কি-না জানিনা। তবে আমার ছেলেকে থানার অস্ত্র দিয়ে অজ্ঞাত কেউ হত্যা করেছে। আমি সুষ্ঠু বিচার চাই।

চাটখিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের শহীদের স্বীকৃতির বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সভায় যাচাই-বাছাইয়ে ইমতিয়াজের নাম বাদ দেওয়া হয়। যে যে মাপকাঠিতে শহীদের স্বীকৃতি পাওয়া যায় তার ভেতর সেটা নেই।

জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ জানান, গেজেট নিয়ে আপত্তি থাকায় ইমতিয়াজের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তার সব সুযোগ সুবিধা বন্ধ রয়েছে।

চাটখিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মামলা সংক্রান্ত আদালতের কোনো চিঠি পাইনি। আদালতের আদেশ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সূত্র : ইত্তেফাক

  • আত্মঘাতী মৃত্যু
  • জুলাই শহীদ
  • #