রাজধানীর ডেমরার একটি হাসপাতালে জটিল গর্ভাবস্থার এক রোগীর চিকিৎসা চলার সময় অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে হত্যা মামলার আসামি এক চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত রোববার রাতে হাজীনগর এলাকার সেবা হাসপাতাল অ্যান্ড ল্যাবে এ ঘটনা ঘটে। গ্রেপ্তারের সময় স্থানীয়রা বাধা দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তি হয় বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানিয়েছে।
গ্রেপ্তার ডা. ইমরান হোসেন অ্যানেস্থেসিয়া একজন বিশেষজ্ঞ। মাতুয়াইল মাতৃসদন ইনস্টিটিউট কর্মরত। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডের দুটি মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ডা. ইমরান হোসেনকে গ্রেপ্তার করে এডিসি বকুল হোসেনের নেতৃত্বে ডিবির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের একটি দল।
এডিসি বকুল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রযুক্তিগত অনুসন্ধানের মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত হই যে, হত্যা মামলার আসামি ডা. ইমরান ডেমরার সেবা হাসপাতালে অবস্থান করছেন। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে আমরা অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করি। গ্রেপ্তারের সময় সামান্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলেও স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে থানায় হস্তান্তর করা হয়।’
সেবা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, অভিযানের সময় ডা. ইমরান তিনি সিজারিয়ান স্কার ইক্টোপিক প্রেগনেন্সি রোগীর অপারেশনের জন্য অ্যানেস্থেসিয়া দিতে অনকলে ছিলেন। রোগীকে ইনজেকশন দেওয়ার পর প্রায় দেড় ঘণ্টা অচেতন অবস্থায় রাখা হলে ঠিক সেই মুহূর্তে গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে সরাসির অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে পড়ে। এ সময় হাসপাতালে কর্মরত ব্যক্তিদের চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এসে পুলিশকে বাধা দেয়। এক পর্যায়ে ডিবি পুলিশের দলের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। পরে ডেমরা থানা পুলিশের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
জানতে চাইলে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘ডা. ইমরান আমাদের নিয়মিত ডাক্তার নন। তিনি অন কলে এসে বিশেষ প্রয়োজনের সময় অ্যানেস্থেসিয়ার কাজ করেন। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা মামলার তথ্য আমাদের জানা ছিল না। এ ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায়ভার বহন করবে না।’
সিজারিয়ান স্কার এক্টোপিক প্রেগনেন্সি (Cesarean Scar Ectopic Pregnancy-CSEP) একটি বিরল ও গুরুতর গর্ভাবস্থার জটিলতা। এক্ষেত্রে পূর্ববর্তী সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের কারণে ভ্রূণ জরায়ুর দেয়ালে তৈরি হওয়া দাগে প্রতিস্থাপিত হয়। এটি সাধারণত জরায়ুর নিচের অংশে ঘটে এবং এটি ‘নন-টিউবাল এক্টোপিক প্রেগনেন্সি’ হিসেবে বিবেচিত হয়। জটিল এই পরিস্থিতিতে রোগীর প্রাণহানির ঝুঁকি থাকে।
পুলিশ বলছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার একটি হত্যা মামলার প্রধান আসামি ডা. ইমরান। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে, যার মধ্যে একটি গত ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় রুজুকৃত গণহত্যা মামলাও রয়েছে। তিনি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং মাতুয়াইল মাতৃসদন ইনস্টিটিউটের আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।