রাজনীতি বা মবের নামে দেশে নাশকতার আর কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বাড়িতে হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় বিএনপি ও এনসিপি নেতাদের সাথে রোববার রাতে রংপুর স্টেডিয়ামের অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পে আলাপকালে তিনি একথা বলেন।
জিএম কাদেরের বাড়িতে হামলার ঘটনায় রবিবার রাত ৯টার দিকে অভিযুক্তদের নিয়ে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুমের সঙ্গে আলোচনায় বসেন বিএনপি ও এনসিপির নেতারা। এ সময় জড়িতদের ব্যাপারে নেতাদের কাছে তাদের নিজ নিজ দলের অবস্থান জানতে চান ওই সেনা কর্মকর্তা।
বৈঠকে বিএনপি ও এনসিপির নেতারা হামলার ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ ও ‘ভুল বোঝাবুঝির ফল’ বলে উল্লেখ করেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না করার প্রতিশ্রুতি দেন। তারা সহিংসতা এড়াতে সব রাজনৈতিক পক্ষকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আনন্দিত। এনসিপি ও বিএনপির প্রতিনিধিরা স্বপ্রণোদিত হয়ে এখানে এসেছেন। তাদের যে সকল কর্মী আবেগী হয়ে হোক বা যেকোনো কারণেই হোক আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার চেষ্টা করেছিল, কিছু কর্মকাণ্ড করেছিল, আমরা তাদের চিহ্নিত করার সুযোগ দিয়েছিলাম। তারা নিজে থেকে এসেছেন। তারা এরকম আর কিছু করবে না ভবিষ্যতে। আমরা আশা করব, তারা তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড যেটা নিয়মের মধ্যে পড়ে সেভাবে চালিয়ে যাবেন। কোন অসুবিধা নেই আমাদের দিক থেকে। বাট (কিন্তু) ভেন্ডালিজম (ভাংচুর), কোনো কিছু নষ্ট করা, কোনো মবের মাধ্যমে অন্যায়ভাবে বাধা সৃষ্টি করা বা এসব কর্মকাণ্ড শুধু রংপুরে নয়, বাংলাদেশের কোথাও করার সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, তখনই আমাকে কঠোর পাবেন যখন আপনি নিয়মের ব্যতয় ঘটাবেন। তো সেটা যেন আমাকে করতে না হয়। আমিও চাই সবসময় আপনার সাথে হাসিমুখে থাকতে। আপনারা জানেন যে আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি যে আমাদের দুটো দল রয়েছে। এনসিপি ও বিএনপি। তাদের প্রতিনিধিরা এসেছে আমাদের ক্যাম্পে। গতকালকে রংপুরে আমরা একটা অভিযানে নেমেছিলাম। সাম্প্রতিক সময়ে যারা কিছুটা অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছিল, তাদেরকে চিহ্নিত করে আমরা আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করেছিলাম, সেই জন্য আমরা সহযোগিতা চেয়েছিলাম। এ দুটো দলের পক্ষ থেকে ফর দ্যাট মেটার যে কেউ আমাদের সহযোগিতা করেন, ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত, স্বপ্রনোদিত হয়ে আমাদের দুটো দলের পক্ষ থেকে যারা কর্ণধার তারা তাদের কর্মী বা সহযোদ্ধা যাই বলেন, তাদের আবেগে হোক, যেকোন কারণে হোক, তারা একটু আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার চেষ্টা করেছিল, কিছু কর্মকাণ্ড করেছিল। যেটা গতকাল মিস্টার সারজিস সাহেব বলে গেছেন যে শান্তির রংপুর, হয়তো তখন ডেফিনেশনটা মিলেনি। কেউ কেউ এটা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করেছিলেন। আমরা তাদেরকে চিহ্নিত করার সুযোগ দিয়েছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ। আপনারা নিজের থেকে এসেছেন। ওরা বুঝতে পেরেছেন। আপনারা বললেন যে তারা এইরকম আর কিছু করবে না ভবিষ্যতে। আপনারা আপনাদের রাজনীতিক কর্মকাণ্ড নিয়মের মধ্যে পড়ে, সেইভাবে আপনারা চালিয়ে যাবেন।
আপনারা দুটো পার্টি এবং আরও যারা আছে, তারা যদি সবাই একমত হন, তাহলে আলহামদুলিল্লাহ। রংপুর কেন, পুরো বাংলাদেশ সুন্দরভাবে এগিয়ে যাবে। আপনারা যেহেতু আপনাদের ভুল বুঝতে পেরেছেন, আমার মনে হয় এটা আমাদের জন্য, সবার জন্য একটা শিক্ষা হয়েছে। শিক্ষার কোনো শেষ নেই। আমরা এই দেশকে বিশেষ করে রংপুরকে যদি সুন্দরভাবে দেখতে চাই, যেটা আপনারা দাবি করেন যে সম্প্রীতি ও শান্তির শহর রংপুর। আজকের পর আমাদের মাধ্যমে যেকোনো সদস্যের মাধ্যমে এমন কোনো কর্মকাণ্ড স্থান পাবে না যার ফলে জান, মালের ক্ষতি হয়। আমি সব সময় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আপনাদের কাছ থেকে সাহায্য চাই। আমরা চাই, আপনারা যারা এগুলো করেন, তাদেরকে চিহ্নিত করে আমাদের সাহায্য করেন। আমরা এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিব। কঠোর ব্যবস্থা নিব।
সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম আরও বলেন, আপাতত ফোকাস একটাই যে রাজনীতির নামে অথবা মবের নামে নাশকতামূলক কোনো কর্মকাণ্ড করার সুযোগ এখন বাংলাদেশে নেই। এটা আপনাদের সঙ্গে যারা আছেন, সবার কাছে বার্তা পৌঁছে দিবেন। তাহলে দেখবেন যে আমরা সবাই একসাথে এগিয়ে যেতে পারব। আপনাদের মধ্যে যে বোধ হয়েছে যে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনার এলাকায় গঠনমূলক ভূমিকা আছে। আপনি যখন ওই কাজটা করবেন, তখন আপনি একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবেন।
তিনি বলেন, আজকের পর থেকে কারো সম্পর্কে ভুল ধারণা থাকার কোনো সুযোগ নাই। গতকাল তো একেক জন একেক রকম ধারণা পোষণ করেছিলেন। আপনারা আপনাদের দলে যারা আছেন তাদেরকে বিষয়গুলো জানিয়ে দিবেন। ভবিষ্যতে যখন আপনারা কোনো কর্মকাণ্ড করবেন-এই বিষয়গুলো খেয়াল করে করবেন। আপনি আপনার কাজ সুন্দরভাবে করতে পারবেন, আমি সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারব। তখনই আপনি আমাকে কঠোর পাবেন যখন আপনি নিয়মের ব্যতয় ঘটাবেন। সেটা যেন আমাকে করতে না হয়। আমিও চাই সব সময় আপনাদের সাথে হাসিমুখে থাকতে। আজকের পর থেকে আমাদের সেই সম্পর্কটা থাকবে।
সেনা কর্মকর্তার বক্তব্যের আগে বৈঠকে বক্তব্য দেন রংপুর মহানগর বিএনপির আহবায়ক শামসুজ্জামান সামু, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর কমিটির আহবায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি প্রমুখ।