অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত : প্রথাবিরোধী এক অর্থনীতিবিদের জীবন, কর্ম ও বর্তমান পরিস্থিতি

: ড. মতিউর রহমান
প্রকাশ: ১৩ ঘন্টা আগে
ছবি : অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত

এ বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্তৃক দায়েরকৃত একটি মামলায় জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এননটেক্স গ্রুপের নামে ২৯৭ কোটি ৩৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৯৬ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমানসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করা হয়েছিল। গ্রেফতারের পর ১১ জুলাই শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এই ঘটনা দেশের অর্থনীতিবিদ মহলে এবং সচেতন সমাজে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। একদিকে তাঁর দীর্ঘদিনের প্রথাবিরোধী কর্মজীবন, গবেষণা ও অবদানের স্বীকৃতি, অন্যদিকে একটি আর্থিক জালিয়াতি মামলায় তাঁর গ্রেফতার, যা তাঁর ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও প্রশ্ন তৈরি করেছে।

এক ভিন্নধারার অর্থনীতিবিদের পরিচয়

ড. আবুল বারকাতকে যারা চেনেন, তারা একবাক্যে স্বীকার করবেন তিনি ‘মূলস্রোতের বিপরীতে একজন ভিন্নধারার অর্থনীতিবিদ’। গতানুগতিকতার বাইরে, প্রথাবিরোধী এক চিন্তাধারার পথিক তিনি। তাঁর লেখা ও গবেষণায় সবসময় সাধারণ মানুষের কল্যাণ, জীবন সমৃদ্ধি ও সার্বিক উন্নয়নের কথা উঠে আসে। কোনো ভয়ভীতি বা প্রলোভন তাঁকে তাঁর এই চিন্তা ও ভাবনা থেকে বিচ্যুত করতে পারে না। যুক্তি দিয়ে সত্য উদ্ঘাটন এবং তাতে অটল থাকা তাঁর দৃঢ় চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। তাঁর পাণ্ডিত্যের পরিধি সুবিস্তৃত। সত্য প্রকাশে অটলতা এবং পাণ্ডিত্য – উভয় কারণেই তিনি ক্ষমতাবান ও সুবিধাবাদীদের কাছে অপ্রিয় ও বিরাগভাজন। একমাত্র সাধারণ মানুষের স্বার্থ ও ভালোবাসার কাছেই তিনি পরাস্ত হন, কারণ তিনি মনেপ্রাণে তাদের কল্যাণকামী।  তিনি একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।

গবেষণায় অসামান্য অবদান ও দূরদর্শী বিশ্লেষণ

ড. আবুল বারকাত মানুষের অধিকার-ভিত্তিক উন্নয়ন-সংশ্লিষ্ট অনেক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থের প্রণেতা। অধ্যাপক আবুল বারকাত ৮০০টিরও অধিক মৌলিক গবেষণা কর্ম সম্পাদন করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে প্রায় ৫০টি গবেষণাগ্রন্থ, শতাধিক জার্নাল প্রবন্ধ, প্রায় ২০০ গবেষণা মনোগ্রাফ এবং ১৩০টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উপস্থাপিত গবেষণাপত্র’। তাঁর গবেষণা কর্মগুলো বাংলাদেশের উন্নয়ন নীতি প্রণয়নে এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

তাঁর কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ

‘বড় পর্দায় সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র: ভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে’ (২০২০): করোনা মহামারীর শুরুতে তিনি এর বিশ্বব্যাপী বিপর্যয় সম্পর্কে অনুধাবন করে এই মূল্যবান অভিসন্দর্ভটি রচনা করেন। এই গ্রন্থে তিনি করোনাকালে শ্রেণি কাঠামোর বিপজ্জনক পরিবর্তন, তিন কোটি মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের দরিদ্র হওয়া এবং তিন কোটিরও বেশি মানুষের প্রায় নিঃস্ব হওয়ার কথা তুলে ধরেছেন। এছাড়া বিপজ্জনক আয়-বৈষম্য, সম্পদ বৈষম্য, শিক্ষা বৈষম্য ও স্বাস্থ্য বৈষম্য বৃদ্ধির কথাও তিনি বিশদভাবে তুলে ধরেছেন এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য সুস্পষ্ট পথ বাতলে দিয়েছেন।

তাঁর ২০২০ সালের বিশ্লেষণগুলি পরবর্তীতে বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যানে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। এই বইয়ে তিনি জম্বি কর্পোরেট, রেন্টসিকার, পরজীবী ও লুটেরাদের কথা স্পষ্টভাষায় তুলে ধরেছেন। আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানের জনক অধ্যাপক নোয়াম চমস্কি এই বইয়ের জন্য তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

আর্সেনিক দূষণ নিয়ে গবেষণা : তিনিই এদেশের প্রথম অর্থনীতিবিদ যিনি খাবার পানিতে আর্সেনিক দূষণের সামাজিক-অর্থনৈতিক অভিঘাত নিয়ে নিবিড় গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে, ‘আর্সেনিকোসিস দারিদ্র্যের রোগ।’ খাবার পানি থেকে আর্সেনিক দূরীকরণে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ‘সনো ফিল্টার’ আবিষ্কারেও তিনি সহকর্মী ছিলেন, যা বিশ্বব্যাপী গ্রেইঞ্জার চ্যালেঞ্জ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার লাভ করে।

মৌলবাদের অর্থনীতি : তিনিই প্রথম এদেশে মৌলবাদের অর্থনীতি নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বিশ্লেষণ করেছেন। এই গবেষণার জন্য তাঁকে ২০০৪ সাল থেকে একাধিকবার জঙ্গিগোষ্ঠীর হত্যার হুমকিও পেতে হয়েছে।

উন্নয়ন ভাবনা ও নিজস্ব অর্থায়ন : তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন যে, ‘বাংলাদেশে নগরায়ন হচ্ছে আসলে বস্তিয়ায়ন প্রক্রিয়া’, এবং ‘খানায় বিদ্যুতায়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব।’ তিনিই প্রথম গভীর বিশ্লেষণপূর্বক দেখিয়েছেন যে পদ্মা সেতুসহ অনেক জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো বিনির্মাণ নিজস্ব অর্থায়নেই সম্ভব। তাঁর এই গবেষণাই পরবর্তীতে পদ্মা সেতু নির্মাণে নিজস্ব অর্থায়নের ভিত্তি স্থাপন করে, যা ২০২১ সালে দৃশ্যমান বাস্তবে রূপ নেয়।

তাঁর গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল সুবিস্তৃত, যার মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বিনিয়োগ আবহ, শিল্পঅর্থায়ন, মানব উন্নয়ন, নারী, আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উন্নয়নের অধিকার, জমি-জলা অধিকার, বিশ্বায়ন ও উন্নয়ন, জ্বালানি-বিদ্যুৎ, দারিদ্র্য বিমোচন, জাতীয় বাজেট ও দারিদ্র্য, দারিদ্র্যের রোগ, কল্যাণ অর্থনীতি, ক্ষুদ্রঋণ, ভূমিহীনতা ও গ্রামীণ দারিদ্র্য, জনসংখ্যা প্রক্ষেপণ, শিশু দারিদ্র্য, যুব দারিদ্র্য, বয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে দারিদ্র্য, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য, উন্নয়ন ও মানব উন্নয়নের রাজনৈতিক অর্থনীতি, ভূমি-পানি-জ্বালানি ও উন্নয়ন প্রসঙ্গ, মানবাধিকার ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের অধিকার, টেকসই উন্নয়ন বিশ্লেষণ, ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণ, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, সামাজিক ক্ষেত্রে বিশ্লেষণভিত্তিক গবেষণা, উন্নয়নে নারী, আঞ্চলিক জ্বালানি নিরাপত্তা, চেতনায়ন ও কল্যাণমুখী মানসকাঠামো বিনির্মাণ প্রক্রিয়া, দুর্ভিক্ষ, জনমিতিক বিশ্লেষণ, মানব উন্নয়নে বৈষম্য, বিশ্বায়নের অধীন কৃষি ও বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা, উৎপাদন পদ্ধতি বিতর্ক, বাংলাদেশে আত্মকর্মসংস্থান, বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণ ও অভিঘাত, অর্পিত সম্পত্তি আইনের রাজনৈতিক-অর্থনীতি, খাসজমির রাজনৈতিক-অর্থনীতি, মানব বঞ্চনার রাজনৈতিক-অর্থনীতি, ভূমি মামলার রাজনৈতিক-অর্থনীতি, সংবিধান ও উন্নয়ন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

পেশাগত ও সামাজিক নেতৃত্ব

ড. আবুল বারকাত দেশ-বিদেশের অনেক পেশাজীবী ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির একটানা চারবার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এবং তিনবার নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান (২০১০-২০১২) এবং জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান (২০১৭-২০২০) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগ প্রতিষ্ঠা ও জাপানের সর্বোচ্চ খেতাব

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগ প্রতিষ্ঠা এবং বাংলা ভাষাভাষী শিক্ষার্থীদের জাপান-বিষয়ক বহুমুখী অধ্যয়ন ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ করে দিতে তাঁর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২২ সালের নভেম্বরে জাপান সরকার তাঁকে তাদের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব ‘অর্ডার অব দ্য রাইজিং সান, গোল্ড রে উইথ নেক রিবন’-এ ভূষিত করে। ১৮৭৫ সালে সম্রাট মেইজি দ্য গ্রেট কর্তৃক প্রবর্তিত এই খেতাব জাপানের ইতিহাসে প্রথম রাষ্ট্রীয় খেতাব। অধ্যাপক বারকাত এই বিভাগের উন্নয়নে মেধা, পরিশ্রম, সময় ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, কোনো কাজ অর্ধেক মন নিয়ে করলে সফল হওয়া যায় না। তাঁর এই ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলেই একটি জরাজীর্ণ সেন্টার থেকে এটি বিশ্বমানের বিভাগে উন্নীত হয়েছে।

অন্যান্য পদ

তিনি সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইসরি বোর্ড (২০২১-২০৩০), ট্রান্সফরমেশন, ইন্টিগ্রেশন অ্যান্ড গ্লোবালাইজেশন ইকোনমিক রিসার্চ (TIGER)এর মেম্বার, এবং চেয়ারম্যান অব দ্য বোর্ড– জোসেফ রামোস-হোরটা (১৯৯৬ নোবেল লরিয়েট ইন পিস) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জার্মানির লিস্টব্রুক নামক সংস্থার বাংলাদেশের অবৈতনিক সম্মানিত ট্রাস্টি হিসেবেও তিনি দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর একক উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ‘হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার (এইচডিআরসি)’ আজ বিশ্বমানের এক গবেষণা প্রতিষ্ঠান।

সম্মাননা ও স্বীকৃতি

গণমানুষের অর্থনীতিবিদ হিসেবে খ্যাত অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের একজন প্রথিতযশা অধ্যাপক ছিলেন। অর্থনীতিতে প্রথাবিরোধী, শেকড়-সন্ধানী এবং জনহিতৈষী গবেষণার জন্য তিনি একাধিকবার পুরস্কৃত হয়েছেন। ইউজিসি স্বর্ণপদক (২০১৭): ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত এই সম্মাননা তাঁর গবেষণার গভীরতা ও তাৎপর্যকে নির্দেশ করে। বিচারপতি ইব্রাহিম স্মারক স্বর্ণপদক (২০০৪-২০০৫): সামাজিক গবেষণায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে এই সম্মাননা প্রদান করে। মার্কেন্টাইল ব্যাংক পুরস্কার (২০০৯): অর্থনীতি ও অর্থনীতিবিষয়ক গবেষণায় তাঁর অনন্য অবদানের জন্য তিনি এই পুরস্কার লাভ করেন।

‘মুজিব স্বর্ণপদক’ (২০২১):  মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে অর্থনীতিতে অনন্য সাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি কর্তৃক প্রবর্তিত এই পদক তাঁকে প্রদান করা হয়। এটি তাঁর অবদানের একটি যথার্থ মূল্যায়ন বলে বিবেচিত হয়েছে।

জনতা ব্যাংকে অবদান ও বিতর্ক

২০০৯ সালে আবুল বারকাত জনতা ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন। জনতা ব্যাংকে তাঁর অর্জন ছিল অনেক, যার মধ্যে পরিচালন মুনাফা সর্বোচ্চকরণের পাশাপাশি দীর্ঘদিনের অস্থায়ী (ক্যাজুয়াল) কর্মচারীদের স্থায়ীকরণ, করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডের দেশব্যাপী সম্প্রসারণ, ভূমিহীন-প্রান্তিক কৃষকদের জন্য স্বল্পমেয়াদি সুদমুক্ত ঋণ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তাঁর সময়ে ব্যাংকটি সার্বিক দিক দিয়ে উন্নতি লাভ করে।

তা সত্ত্বেও মেয়াদান্তে তাঁকে অনেক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়। একটি রেন্টসিকার, পরজীবী গোষ্ঠী তাঁকে জড়িয়ে ভ্রান্ত ও অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে তাঁর সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা চালায়। কিন্তু তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে এসব ভিত্তিহীন প্রচারণার বলিষ্ঠ প্রতিবাদ জানান, যার কোনো প্রত্যুত্তর মেলেনি।

একজন গণমানুষের অর্থনীতিবিদ

আবুল বারকাত হলেন সেই অর্থনীতিবিদ যিনি সর্বদা দেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করেন এবং তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট। তিনি সাধারণ মানুষের কথা বলেন, তাদের মতোই জীবনযাপন করেন। সেজন্যই তিনি ‘গণমানুষের অর্থনীতিবিদ’ হিসেবে খ্যাত।  প্রতি মুহূর্তে তিনি এদেশে বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক আলোকিত সমাজ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছেন। মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণার মাধ্যমে তিনি স্বদেশ ও জনগণের কল্যাণে অবিরাম কাজ করে চলেছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘আবুল বারকাত পিস অ্যান্ড প্রোগ্রেস ফাউন্ডেশনের’ মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র, কন্যাদায়গ্রস্ত মাতা-পিতা, জটিল রোগে আক্রান্ত ও অন্যান্য মহান উদ্যোগে নীরবে-নিভৃতে সহযোগিতা করে চলেছেন।

২০২১ সালের ১ লা মে দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে প্রিয়তমা পত্নীর অকাল মৃত্যুর পরও তিনি মনোবল হারাননি। এখনও প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ ঘণ্টাই তিনি কাজের মধ্যে ডুবে থাকেন। সাধারণ খাদ্য দিয়ে দুপুর ও রাতের খাবার খান। রিকশা বা ভাড়ায় চালিত যানবাহনে চলাচল করেন। সাধারণ পোশাক পরেন। অথচ জ্ঞানচর্চার যে ভূবনে (গবেষণাকর্ম) তিনি বিচরণ করেন, সেখানে অর্থের কোনো অভাব নেই। কিন্তু অর্থের মোহ তাঁকে কখনই তাঁর স্থির কর্তব্য থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি।

বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা

সম্প্রতি এননটেক্স গ্রুপের নামে ২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় তাঁর গ্রেফতার এই বিতর্কের নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই গ্রেফতারকে বাংলাদেশের আপামর জনগোষ্ঠী গভীর উদ্বেগের সাথে  এবং এটিকে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ নাগরিকের প্রতি অন্যায় ও আইনি প্রক্রিয়ার লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে। তাদের মতে, তাঁর গ্রেফতার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক এবং এটি দেশে আইনের শাসনের অনুপস্থিতিকেই আরও জোরালোভাবে প্রমাণ করেছে। তাঁর গ্রেফতারে  দেশ ও বিদেশের বোদ্ধা মহলও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং দ্রুত মুক্তির জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন।

অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের গ্রেফতারের ঘটনাটি তাঁর দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের বিপরীতে একটি অপ্রত্যাশিত মোড়। তাঁর দীর্ঘদিনের কর্ম ও গবেষণায় তিনি বারবার অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন, প্রান্তিক মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন। তাঁর গবেষণা, সততা, ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা তাঁকে একজন সত্যিকারের জনহিতৈষী অর্থনীতিবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এমন একজন জ্ঞানতাপসের প্রতি চলমান আইনি প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হবে এবং তাঁর অবদান যথাযথভাবে স্বীকৃত হবে, এটাই দেশের মানুষ প্রত্যাশা করে।

লেখক : গবেষক ও উন্নয়নকর্মী

  • অধ্যাপক
  • অর্থনীতিবিদ
  • ড. আবুল বারকাত
  • প্রথাবিরোধী
  • #