ইচ্ছাপূরণে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়া দাফন সাবেক সেনাপ্রধান হারুনকে

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ১ সপ্তাহ আগে

মৃত্যুর আগেই পরিবারের লোকজনকে জানিয়েছিলেন তাকে যেন সাধারণ মানুষের মতো দাফন করা হয়। তাই উপজেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি থাকলেও সাবেক সেনাপ্রধান এম হারুন-অর-রশীদকে দাফন করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই। সোমবার (৪ আগস্ট) দিবাগত রাত ১০ টায় চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ধলই ইউনিয়নের কাটিরহাট হাধুরখীল মাদরাসা মাঠে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পারিবারিক কবরস্থানে বাবা ডা. মাহামুদুল হকের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

মৃত্যুর আগে মরণোত্তর চক্ষু দানের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন হারুন-অর-রশীদ। কিন্তু মৃত্যুর পর নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ায় তার চোখ দান করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া পরিবারের ইচ্ছায় তার মরদেহ ময়নাতদন্তও করা হয়নি।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন বলেন, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সাবেক সেনাপ্রধানকে দাফন করতে আমাদের সবধরনের প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু ভাইসহ পরিবারের লোকজনকে আমাদেরকে জানিয়েছেন তার ইচ্ছে ছিল স্বাভাবিকভাবে যাতে দাফন করা হয়। জানাজা শেষে তাকে সাধারণ লোকের মতো দাফন করা হয়েছে।

সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসের একটি কক্ষে হারুন-অর-রশীদের মরদেহ পড়ে থাকার খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। মরদেহ উদ্ধারের পর পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। এরপর দুপুর ৩টা ২০ মিনিটের দিকে তার মরদেহ সেনাবাহিনীর একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) চট্টগ্রামে নেওয়া হয়। তার ইচ্ছে ছিল চোখ দান করার। কিন্তু চিকিৎসকরা তার মরদেহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন মৃত্যুর পর একটি নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেছে। এ কারণে তার চোখ নেওয়া আর সম্ভব হয়নি।

বিকেল সোয়া ৫টার দিকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের শহীদ ক্যাপ্টেন জসিম হলে সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যদের অংশগ্রহণে হারুন-অর-রশীদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

১৯৪৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ধলই ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন হারুন-অর-রশীদ। সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব দেয়। ২০০০ সালের ২৪ ডিসেম্বর লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে উন্নীত হয়ে সেনাবাহিনীর প্রধান নিযুক্ত হন হারুন। ২০০২ সালের ১৬ জুন পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্বে ছিলেন। অবসরে যাওয়ার পর সরকার তাকে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ফিজির রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বও দিয়েছিল।

২০০৬ সালে মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং কোম্পানি ডেসটিনিতে যোগ দেন হারুন-অর-রশীদ। প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগে ২০১২ সালে তাকে কারাগারে যেতে হয়। পরবর্তীতে জামিনে মুক্তি পান তিনি। ২০২২ সালের ১২ মে ডেসটিনির গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের দায়ে দুদকের এক মামলায় হারুনকে চার বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত।

জানা গেছে, মৃত্যুর আগে রোববার চট্টগ্রামে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেন হারুন-অর-রশীদ। এরপর ক্লাবের গেস্ট হাউসের ৩০৮ রুমে তিনি রাত্রিযাপন করেন। সোমবার চট্টগ্রাম আদালতে একটি মামলায় তার হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকালে তার মোবাইলে ফোন করা হলেও অপর প্রান্ত থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। তার কক্ষের দরজার সামনে ডাকাডাকিতেও সাড়া মিলছিল না। একপর্যায়ে কক্ষের বারান্দায় থাকা গ্লাস ভেঙে বিছানায় তার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।

হারুনের মরদেহ পাওয়ার পর চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসে গিয়েছিলেন ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীন। এসময় তিনি জানান, ডেসটিনির আর্থিক কেলেঙ্কারির একটি মামলায় চট্টগ্রাম আদালতে সোমবার ধার্য তারিখ ছিল। একারণে আমাদের সঙ্গে তার (হারুন) আদালতে যাওয়ার কথা ছিল। তবে সময় হয়ে যাওয়ার পরও তিনি আসছিলেন না। তাকে ফোন করেও পাওয়া যাচ্ছিল না। বিষয়টি গেস্ট হাউসে জানানোর পর কর্তৃপক্ষ তাকে কক্ষে পড়ে থাকতে দেখে। খবর পেয়ে চট্টগ্রাম সিএমএইচের চিকিৎসকদের একটি দল আসে। তারা এসে দেখে, তিনি আর বেঁচে নেই।

  • ছাড়া
  • দাফন
  • রাষ্ট্রীয় মর্যাদা
  • সাবেক সেনাপ্রধান
  • #