এনায়েতপুরে ১৫ পুলিশ হত্যা : এক বছরেও শেষ হয়নি তদন্ত

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ২ সপ্তাহ আগে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলা চালিয়ে ১৫ পুলিশ সদস্যকে হত্যার তদন্ত শেষ হয়নি এক বছরেও। তদন্ত কর্মকর্তার ভাষ্য, সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন না পাওয়ায় তদন্ত রিপোর্ট দিতে দেরি হচ্ছে। ঘটনার ২১ দিন পর গত বছরের ২৭ অগাস্ট এনায়েতপুর থানার এসআই আব্দুল মালেক বাদী হয়ে এ মামলা করেন।

এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ চার নেতার নাম উল্লেখ করে পাঁচ থেকে ছয় হাজার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয় সেখানে।

ৎমামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৪ অগাস্ট দুপুর ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা এনায়েতপুর থানার সামনে সমবেত হয়। এ সময় ওসি আব্দুর রাজ্জাক হ্যান্ডমাইকে সমবেত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দেন।

বক্তব্যে ওসি রাজ্জাক বলেন, ‘এই থানা আপনাদের সাধারণ জনগণের। আপনারা থানার কোনো ক্ষয়ক্ষতি করবেন না।’ এ কথায় ছাত্র-জনতা থানা এলাকা থেকে চলে যায়।

এরপর আওয়ামী লীগ নেতা আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চুর নেতৃত্বে এজাহারনামীয় আসামিসহ পাঁচ থেকে ছয় হাজার ‘দুষ্কৃতকারী’ দেশীয় অস্ত্র হাতে থানায় হামলা চালায়। তখন আত্মরক্ষায় পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে। পরে আসামিরা পুলিশের কোয়ার্টার ও ওসির বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়।

আগুন দেখে পুলিশ সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এ সময় আসামিরা থানায় ঢুকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে প্রথমে সাত পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে। এরপর তারা থানা ভবনে ঢুকে পুলিশের ব্যবহারের সরকারি অস্ত্র ও জনসাধারণের জমা দেওয়া বেসরকারি অস্ত্র ও গুলি লুট করে। এরপর তারা সেসব আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে থানার ভেতর ও বাইরে থাকা অফিসার ও ফোর্সদের দিকে এলোপাতাড়ি গুলি করে।

এজাহারে বলা হয়,সে সময় থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাকসহ পুলিশ সদস্যরা থানার পাশে বাবু মিয়ার বাড়িতে আশ্রয় নেন। আসামিরা সেখানেও হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে। হামলার সময় নারী কনস্টেবল রেহেনা পারভীনকে মারধর করে এবং টানা-হেঁচড়া করে তার শ্লীলতাহানি করা হয়। ওই ঘটনায় পর বিকালে সেনাবাহিনীর একটি দল থানা এলাকায় পৌঁছে হতাহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে হাসপাতাল ও মর্গে পাঠায়।

১৫ পুলিশ হত্যা, কী বলছেন তদন্ত কর্মকর্তা

৪ অগাস্ট বেলা ১২টার দিকে এনায়েতপুর থানায় হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, অস্ত্র ও গুলি লুট এবং কর্মরত পুলিশ সদস্যদের মারধর করা হয়। এতে ১৩ পুলিশ ঘটনাস্থলে এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়। এছাড়াও থানায় কর্মরত সকল পুলিশ সদস্যরা কমবেশি আহত হন।

এনায়েতপুর থানার নিহত ১৫ পুলিশ সদস্য হলেন- ওসি আব্দুর রাজ্জাক, এসআই রইস উদ্দিন খান, তহছেনুজ্জামান, প্রনবেশ কুমার বিশ্বাস, নাজমুল হোসাইন, আনিসুর রহমান মোল্লা, এএসআই ওবায়দুর রহমান, কনস্টেবল আব্দুস সালেক, হাফিজুর ইসলাম, রবিউল আলম শাহ, হুমায়ন কবির, আরিফুল ইসলাম, রিয়াজুল ইসলাম, শাহিন উদ্দিন ও হানিফ আলী।

২৭ অগাস্ট এনায়েতপুর থানার এসআই আব্দুল মালেক বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। পূর্ব ক্ষোভের কারণে আওয়ামী লীগ নেতারা এ হামলা চালিয়েছে বলে এজাহারে লেখা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এনায়েতপুর থানার এসআই ফরিদ উদ্দিন বলেন, প্রায় দুই মাস হল এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছি। এর আগে পরিদর্শক কামাল হোসেন ও এসআই আনোয়ারুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করেছেন। সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহতদের ময়নাতদন্ত করা হয়। ওই ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এখনো হাতে পাইনি। বিস্ফোরকের আলামত উদ্ধারের পর সেগুলো পরীক্ষার জন্য ঢাকায় সিআইডিতে পাঠানো হলেও সেই প্রতিবেদন এখনো পাওয়া যায়নি। যে কারণে মামলার প্রতিবেদন তৈরিতে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। উল্লেখিত প্রতিবেদনগুলো প্রাপ্তি সাপেক্ষে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।

মামলা ও গ্রেপ্তার

থানা ও আদালত পুলিশ বলছে, এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জেলায় মোট নয়টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় চারটি, এনায়েতপুর থানায় আন্দোলনে নিহতের ঘটনায় তিনটি এবং ১৫ পুলিশ হত্যা ও থানায় হামলা এবং অস্ত্র লুটের ঘটনায় একটি এবং উল্লাপাড়া থানায় একটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এজাহারভুক্ত আসামির সংখ্যা ৬৭২ জন। অজ্ঞাতপরিচয় আসামির সংখ্যা ৫ থেকে ৬ হাজার। এর বাইরে অতীতের ঘটনার জেরে এবং গত এক বছরে নানা সময়ের ঘটনা মিলে জেলায় মোট ২৯টি রাজনৈতিক মামলা হয়েছে।

রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে ২৯টি মামলাগুলোর মধ্যে সিররাজগঞ্জ সদর থানায় ছয়টি, কাজিপুরে দুটি, উল্লাপাড়ায় তিনটি, তাড়াশে চারটি, কামারখন্দে একটি, রায়গঞ্জে তিনটি, এনায়েতপুর থানায় তিনটি, শাহজাদপুর থানায় তিনটি, সলঙ্গা থানায় তিনটি ও বেলকুচি থানায় একটি মামলা হয়েছে।

এসব মামলায় এ পর্যন্ত সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরী, তানভীর ইমাম, চয়ন ইসলাম, আব্দুল আজিজ, জেলা পরিষদের অপসারিত চেয়ারম্যান শামীম তালুকদার লাবু ও উল্লাপাড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সেলিনা মির্জা মুক্তি ও সিরাজগঞ্জ বারের সাবেক পিপি আব্দুর রহমানসহ ১৬৩ জন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন।

দুই থানার ১৪ অস্ত্রের হদিস নেই

এনায়েতপুর ও হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে এখনও ১৪টি উদ্ধার হয়নি। অস্ত্র লুটের ঘটনায় করা দুই মামলায় এ পর্যন্ত ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এনায়েতপুর থানার ওসি আনারুল ইসলাম বলেন, গত বছরের ৪ অগাস্ট এনায়েতপুর থানায় হামলা, ভাঙচুর, অস্ত্র লুট ও ১৫ পুলিশ সদস্য হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় এ পর্যন্ত সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্র এখনও উদ্ধার হয়নি।

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুর রউফ বলেন, গত বছরের ৪ অগাস্ট থানায় হামলা, ভাঙচুর ও ২৫টি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়ান্ত্র লুটের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ১৭টি আগ্নেয়ান্ত্র উদ্ধার হলেও বাকিগুলো এখনও উদ্ধার হয়নি।

সূত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

  • ১৫ পুলিশ
  • এনায়েতপুর
  • তদন্ত
  • হত্যা
  • #