বিদেশি বাংলাদেশি মিশন থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর নেপথ্যে কী

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ৫ minutes ago
ছবি : রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন

বাংলাদেশ সময় শনিবার (১৬ আগস্ট) দিনগত মধ্যরাত থেকেই আলোচনা শুরু। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাস ও কনস্যুলেট অফিস থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছবি সরানোর মৌখিক নির্দেশনা পাঠিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই নির্দেশনা পাওয়ার পর এরই মধ্যে কয়েকটি দেশের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আবার অনেক দূতাবাস জানিয়েছে তারা ৫ আগস্টের পরপরই এসব ছবি সরিয়ে ফেলেছে।

কয়েকটি দূতাবাস বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কেউ এ বিষয়ে মুখ খোলেননি। দিনভর সাংবাদিকরা অপেক্ষা করেও কারও কাছ থেকে কোনো বক্তব্য মেলেনি।

এক সভা শেষ অপেক্ষমান সাংবাদিকদের এড়িয়ে রোববার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বের হয়ে যান পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম। অন্য বিষয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেও রাষ্ট্রপতির ছবিসংক্রান্ত প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাহ আসিফ রহমানও।

তবে প্রশ্ন উঠেছে সরকারের পতনের এক বছরেরও পরে কেনইবা হঠাৎ করে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর এই নির্দেশনা দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রাষ্ট্রপতি অপসারণ বা পদত্যাগ করছেন কি না এমন প্রশ্ন রেখে রোববার সকাল থেকেই অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিতে থাকেন।

তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ৮২টি মিশন ও উপমিশন রয়েছে। তারমধ্যে ওয়াশিংটন, দিল্লি, বেইজিংসহ ৬৫টির বেশি মিশন ও উপমিশন থেকে গত বছরের ৫ আগস্টের সরকার পরিবর্তনের পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছবি সরিয়ে ফেলা হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সংবিধান অনুযায়ী শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টানানোর বাধ্যবাধকতা থাকলেও রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ছবি টানানো ছিল একটা রেওয়াজ। এখন ‘কারও ছবি থাকবে না’–সেই নীতির বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

মূলত গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিদেশে অবস্থিত দূতাবাসে শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অপসারণ করা হয়। ফলে বাকি মিশনগুলো থেকেও সরানোর জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নতুন এই নির্দেশনা পাঠানো হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্য এক সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের মালয়েশিয়া সফরের সময় কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসে এবং রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে রাষ্ট্রপতির ছবি থাকার বিষয়টি আলোচনায় আসে। অন্য দূতাবাসে ছবি সরানো হলেও এখানে কেন সরানো হয়নি, সেই প্রশ্ন ওঠে। এরপরই সবগুলো মিশন থেকে ছবি সরানোর উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়টি সামনে আসে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গুঞ্জন শোনা যায়, গত ১১ আগস্ট রাষ্ট্রীয় সফরে জেনেভায় যান পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি জেনেভা দূতাবাসে রাষ্ট্রপতির ছবি দেখতে পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাবেন বলেও মন্তব্য করেন।

যদিও এ ধরনের কোনো মন্তব্য বা অসন্তোষ প্রকাশ করার কথা সরাসরি তিনি সাংবাদিকদের কাছে অস্বীকার করেছেন। রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমি জেনেভা দূতাবাসে রাষ্ট্রপতির কোনো ছবি দেখিনি। এ নিয়ে আমি কোনো মন্তব্যও করিনি বা মন্ত্রণালয়কে কিছু জানাইনি।

চলতি মাসে অন্তর্বর্তী সরকার বছর পূর্ণ করেছে। এ সময়ে রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিনের থাকা না-থাকা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন উঠেছে। আচমকা বিদেশে বাংলাদেশি মিশন থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি নামিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আর এটি করা হয়েছে টেলিফোন নির্দেশনায়।

বছর ব্যবধানে কেন রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর প্রসঙ্গ আসছে, তা নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে এর কারণ হিসেবে কয়েকটি বিষয় সামনে আসছে। তবে এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি বিষয়ে প্রাধান্য দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট সূত্র।

নতুন করে রাষ্ট্রপতির ছবি নামিয়ে ফেলার নির্দেশনার পর এরই মধ্যে বাকি মিশনগুলো থেকেও রাষ্ট্রপতির ছবি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ইউরোপের একটি মিশনে পদায়নরত এক কূটনীতিক জানান, এ মিশনে রাষ্ট্রপতির ছবি ছিল। নতুন নির্দেশনা পাওয়ার পর শনিবার বিকেলে মিশন থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানো হয়েছে।

সাবেক এক রাষ্ট্রদূত বলেন, রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে সরকারি আদেশে রাষ্ট্রপতির ছবি ব্যবহারের নির্দেশনা ছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মিশনগুলোতে অফিশিয়াল পোর্ট্রেট সরবরাহ করত। আর এই পোট্রেট কিন্তু তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্বাচন করে দেওয়া হত। মিশন বলে কথা না সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনগুলোর জন্য একই ছবি নির্বাচন করা হতো। কেউ চাইলেও রেনডমলি ছবি নির্বাচনের সুযোগ ছিল না। হঠাৎ করে শুধু মিশন থেকে ছবি সরানোর নির্দেশনা হবে, এমনটা হওয়ার কথা না। হলে সরকারি অন্য অফিসেও একই নির্দেশনা হওয়ার কথা।

রোববার রাতে প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘সরকারি দপ্তরে পোট্রেট ব্যবহার শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার নিরুৎসাহিত করছে। অলিখিতভাবে জিরো পোট্রেট নীতি বজায় রেখেছে। তারপরও কেউ কেউ সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধানের ছবি নিজ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করেছে। সেগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে এমন কোনো লিখিত নির্দেশনা কোনো দপ্তর কিংবা মিশনকে দেওয়া হয়নি। তারপরও দেখা যাচ্ছে আজ এটা নিয়ে বাজার গরম করে ফেলা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সময় ঘোষণা করার পর রাজনীতি নিয়ে ঘোঁট পাকানোর সুযোগ কমে আসছে। কাটতি ধরে রাখার জন্য ছোট খাটো অনেক বিষয়কেও এখন তাই পাহাড়সম করে তোলা হচ্ছে।’

সাবেক রাষ্ট্রদূত মাহফুজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, রাষ্ট্রপতির ছবি রাখা না রাখা পুরোপুরি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিদ্ধান্ত। এটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিষয় না। নতুন কোনো নিয়ম হয়েছে কিনা-আমার জানা নেই, তবে মন্ত্রিপরিষদের আগের সিদ্ধান্ত ছিল যে কোনো সরকারি অফিসে রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকারপ্রধানের ছবি টাঙাতে হবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নির্দেশনা না পেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ধরনের নির্দেশনা দিতে পারে কিনা- এমন প্রশ্নে মাহফুজুর রহমান বলেন, বলে না থাকলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বলার কথা না। তবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত মৌখিক নির্দেশ কেন, সেটা আমার বোধগম্য নয়।

  • ছবি
  • বাংলাদেশি মিশন
  • রাষ্ট্রপতি
  • #