আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান এএফএম শাহীনুল ইসলামকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মঙ্গলবার সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
তিনি বলেন, ‘তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিএফআইইউ-প্রধান ছুটিতে থাকবেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এর আগে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের একটি অংশ অবিলম্বে তাঁকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গভর্নর বরাবর স্মারকলিপি দেয়।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর এবং দুইজন নির্বাহী পরিচালকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিকে সহায়তা করবেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট অন্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
সোমবার শাহীনুল ইসলামের একাধিক আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। শাহীনুল ইসলাম এটিকে ভুয়া দাবি করলেও প্রাথমিকভাবে ফ্যাক্ট চেক করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ভিডিও সঠিক বলে জানতে পেরেছে। আবার গতকাল তিনি অফিসে আসেননি। এমন এক সময়ে এই ভিডিও সামনে এসেছে যখন বিতর্কিত পরিবহন ব্যবসায়ী এনা পরিবহনের মালিক খন্দকার এনায়েত উল্লাহর অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের পর সেখান থেকে ১৯ কোটি টাকা উত্তোলনের সুযোগ দিয়েছেন তিনি। এ ক্ষেত্রে অনৈতিক কিছু হয়েছে কিনা, সে বিষয়েও তদন্ত করছে দুদক। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দল এসব অভিযোগও খতিয়ে দেখবে।
সূত্র জানিয়েছে, গত নভেম্বর মাসে এনা পরিবহনের মালিক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ও তাঁর পরিবারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ৫০টি অ্যাকাউন্টে ১২০ কোটি টাকা ফ্রিজ করে বিএফআইইউ। তবে চলতি বছরের এপ্রিলে ব্যাংক আল-ফালাহর চারটি অ্যাকাউন্ট পুনরায় ফ্রিজ না করে প্রায় ১৯ কোটি টাকা উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হয়। এনায়েত উল্লাহ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক থাকার সময় বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাস থেকে দৈনিক ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা চাঁদা হিসেবে এ অর্থ জমা করেন– এমন অভিযোগের তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের আবেদনে গত ২৭ মে ১২০ কোটি টাকা ফ্রিজ করার আদেশ দেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত। অথচ দুদক এখন জানতে পেরেছে, এসব হিসাবে আছে আসলে ১০১ কোটি টাকা। অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে বাকি টাকা উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিগত সরকারের সময়ে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত আরও অনেকের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের পর সেখান থেকে অর্থ উত্তোলনের সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।