মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতের পর রাখাইনের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মংডু শহর নিয়ন্ত্রণ নেয় আরাকান আর্মি। এরপর থেকে বঙ্গোপসাগরের জলসীমা নিয়ন্ত্রণে নেয় তারা, এতে ঘটছে অপহরণের ঘটনা।সম্প্রতি সময়ে সাগরে আরাকান আর্মির দৌরাত্ম্য আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এই পরিস্থিতিতে গত ২২ দিনে সাতটি ট্রলারের ৫৬ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি।
স্থানীয়রা জানান, গত ৫ আগস্টের পর থেকে আরাকান আর্মির দৌরাত্ম্য বেড়েছে। সম্প্রতি মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীসহ আরও কয়েকটি স্বশস্ত্র সংগঠনের সঙ্গে আরাকার আর্মির নতুন করে সংঘাতের খবর পাওয়া গেছে। এরপর সাগরে তাদের তৎপরতা বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে ২২ দিন পেরিয়ে গেলেও ধরে নেওয়া জেলেদের এখনও মুক্তি দেয়নি। অপহরণ হওয়া জেলেরা জীবিত আছে নাকি মারা গেছে, তাও জানেনা পরিবারগুলো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিয়ানমারের রাখাইন সীমান্ত আরাকান আর্মির দখলে যাওয়ার পর থেকে নাফনদী ও সাগরে তাদের তৎপরতা বেড়েই গেছে। এতে প্রায় সময় আরাকান আর্মির হাতে আটক হচ্ছে মাছ ধরতে যাওয়া বাংলাদেশি জেলেরা। তার মধ্যে চলতি মাসের ৫ আগস্ট থেকে ২৭ আগস্ট পযর্ন্ত ৭ টি ট্রলার ৫৬ জেলেকে আরাকান আর্মি আটক করেছে। এই পরিস্থিতিতে আরাকান আর্মি হাতে আটক হওয়া জেলেদের খবর না পেয়ে দিশেহারা পরিবার। বিভিন্ন মাধ্যমে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। তবে তাদের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রিত কিছু পেজের আটককৃতদের ছবি প্রকাশ করছে আরাকান আর্মি। এতে পরিবারগুলো আটক হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হচ্ছেন।
শাহ পরীরদ্বীপ জালিয়াপাড়ার মারিয়া খাতুন বলেন, ৫ আগস্ট আমার স্বামী মোহাম্মদ ইলিয়াস ও দুই ছেলে আক্কেল আলী, মোহাম্মদ ইসলাম ফিশিং ট্রলারসহ নাফ নদীতে মাছ ধরতে যায়। পরে খবর পেয়েছি নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে আরাকান আর্মি ট্রলারসহ মোট ৫ জনকে ধরে নিয়ে যায়। ২২ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও তারা ফিরে আসেনি।
তিনি আরও বলেন, মাছ ধরে ঘর-সংসারের খরচ যারা জোগাড় যারা করতেন তারা এখন নেই, এক দিকে স্বামী, সন্তান নেই, অপরদিকে সংসারে চলছে দুঃখ দুর্দশা। এরকম কঠিন অবস্থায় সংসার চালানো কষ্ট হচ্ছে।
শাহ পরীরদ্বীপ মাঝের পাড়া হাবিবা বেগম বলেন, গত ২৩ আগস্ট আরাকান আর্মি ১২ জন ধরে নিয়ে গেছে। সেখানে আমার স্বামী মো. আমিনও রয়েছে। এখনও পযর্ন্ত তারা কেউ বাড়ি ফিরতে পারেনি।
শাহ পরীর দ্বীপ ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাঝি বলেন, নাফ নদী ও সাগর থেকে আগস্ট মাসে ৭টি ট্রলার ও ৫৬ জেলেকে আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে গেছে। এ বিষয় আমরা কোস্ট গার্ড, বিজিবি ও উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। ২২ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও আটকরা ছাড়া পায়নি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহেসান উদ্দিন বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে জেনেছি প্রায় সময় সাগর থেকে মাছ ধরে ফেরার পথে আরাকান আর্মির হাতে জেলেরা আটক হচ্ছেন। বিশেষ করে আগস্ট মাসে ৫৬ জন জেলে আটকের বিষয়টি জানার পরে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শাহ পরীরদ্বীপ নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় বার বার যে সমস্যা হচ্ছে। তবে জেলেদেরকে এসব এলাকা দিয়ে চলাচল করতে সর্তকতা বজায় রাখতে হবে এবং সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে।