এক শিক্ষার্থীর মুখ চেপে ধরেছেন একজন পুলিশ সদস্য। এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিতে থাকা ওই শিক্ষার্থীর নাম রাফিদ জামান খান। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরে বাংলা হলের শিক্ষার্থী। পড়েন ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের তৃতীয় বর্ষে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে রাফিদ জামান খান বলেন, পেছন থেকে একজন পুলিশ তাঁর মুখ চেপে ধরে মাটিয়ে ফেলে দেন। ঘটনার পরে ভিডিও দেখে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন, যিনি ফেলে দিয়েছিলেন, তিনি ছিলেন ডিসি মাসুদ আলম।
রাফিদ আরও বলেন, ‘মাটিতে ফেলার পরে আমাকে আসলে খুবই আনপ্রফেশনালভাবে ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়েছে। আমাকে তারা বুট দিয়ে লাথি মেরেছে। পিটাইছে। এমনকি একজন সদস্য হেলমেট দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করছেন।’
গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে পদযাত্রার সময় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে আন্দোলনরত প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল, জলকামান ছোড়ে। একপর্যায়ে লাঠিপেটা করে। এ সময় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম একজন শিক্ষার্থীর মুখ চেপে ধরেছেন—এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই ছবি ও খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
তবে গতকাল ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে গণমাধ্যমকে জানানো হয়, সম্প্রতি রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মাসুদ আলমকে নিয়ে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এক ছাত্রের মুখ চেপে ধরার একটি ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ছবিটি এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি এবং বাস্তবতাবিবর্জিত বলে দাবি করে ডিএমপি।
তবে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত খবরে বলছে, ডিসি মাসুদ আলমের আন্দোলনকারীর মুখ চেপে ধরার ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি নয়। প্রকৃতপক্ষে আসল ছবিকেই এআই দিয়ে তৈরি বলে প্রচার করেছে ডিএমপি।
তথ্য যাচাইকারী বা ফ্যাক্ট চেক প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাব আজ তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলছে বুয়েট শিক্ষার্থীর মুখ চেপে ধরার ছবিটি এআই দিয়ে বানানো নয়।
রাফিদ বলেন, ছবিটিতে যে শিক্ষার্থীকে দেখা যাচ্ছে সেটি তিনি। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘এটা কোনোভাবেই এআই জেনারেটেড না।’ ঘটনার দিন যখন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে পৌঁছান, তখন আর সামনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে জানান রাফিদ।
তিনি বলেন, ‘পুলিশের সঙ্গে কোনো ধরনের ধস্তাধস্তিতে জড়াব না। এ জন্য সড়কে বসে পড়ি। যেন পুলিশের কাছে মনে না হয় যে আমরা অ্যাটাকিং পজিশনে আছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘একপর্যায়ে পুলিশ টিয়ারশেল (কাঁদানে গ্যাসের শেল) নিক্ষেপ করে। আমি যেখানে ছিলাম তার কিছুটা পেছনে টিয়ারশেলটা পড়ে। এরপরে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেডও নিক্ষেপ করা শুরু করে। টিয়ারশেল পড়ার পর আন্দোলনকারী অনেকে পিছু হটে। আর সামনে থাকারা আটকে পড়ে যায়। তখন পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে।’
রাফিদ আরও বলেন, ‘ওই অবস্থায় আসলে আমি ওখানে আটকা পড়ে গিয়েছিলাম। আমি একটু ডিসওরিয়েন্টেড হয়ে পড়ছিলাম। তো তারপরে দেখি যে আমাকে একটানা মারা হচ্ছে। আমার পেছন থেকে মারতেছে।’
প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় গত বুধবার রাতে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
সূত্র : প্রথম আলো