ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে মেঘনা নদীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) অপহরণের চেষ্টা ও হত্যার হুমকির অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে থানায় মামলা করা হয়েছে। ইউএনওর গাড়ি চালক মো. জীবন মিয়া (৩২) বাদী হয়ে এই মামলা করেন। আশুগঞ্জ থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) আবু হেনা মো. মোস্তফা রেজা মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় পাশের উপজেলা ভৈরবের বিএনপি সভাপতি রফিকুল ইসলামের ভাই মো. তারেক মিয়াসহ (৫০) ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হল ভৈরব পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের যুবদল সভাপতি রাজু আহমেদ (৪০), ভৈরব উপজেলা বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদুল হক ইমন (৪২), মো. লাদেন (২৮), মো. মানিক মিয়া (২৫), মো. মাসুদ মোল্লা (৩৮) ও মো. সোহান মিয়া (৩৬)।
এর আগে, আজ সকালে মেঘনা নদীর আশুগঞ্জের সীমানার ভেতরে এসে অবৈধভাবে ড্রেজার চালিয়ে বালু উত্তোলন করার সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাফে মোহাম্মদ ছড়া। এসময় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে দুজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হল কিশোরগঞ্জের ভৈরবের আব্দুর রশিদের ছেলে আহমদ আলী ও নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার শাহজাহান মিয়ার ছেলে আমজাদ হোসেন। এছাড়া বালু উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত ৪টি ড্রেজার ও ৫টি বাল্কহেড জব্দ করা হয়। সেসময় সেখানে অভিযানে থাকা ইউএনও এবং তার সঙ্গে থাকা লোকজনের ওপর চড়াও হয় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে জড়িতরা।
আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাফে মোহাম্মদ ছড়া বলেন, ‘মেঘনা নদীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের ভৈরব অংশে পৃথক দুটি বালু মহাল ইজারা দেওয়া হয়েছে। আমি ও ভৈরবের ইউএনও তাদের সীমানা ইতোমধ্যে বুঝিয়ে দিয়েছি। অভিযোগ ছিল আশুগঞ্জের চরসোনারামপুর এলাকায় জাতীয় গ্রিডের বৈদ্যুতিক টাওয়ারের কাছাকাছি ড্রেজারে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে রাতের আঁধারে। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী সরকারি কোনো স্থাপনার এক কিলোমিটারের ভেতরে কেউ বালু উত্তোলন করতে পারে না। সেই তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলবার সকালে আমার নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলে এর সত্যতা পাওয়া যায়।’
ইউএনও আরও বলেন, ‘ভৈরবের ইজারাদার আশুগঞ্জের অংশে বৈদ্যুতিক টাওয়ারের কাছে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছিল। সেখান থেকে ৫টি ড্রেজার ও ৫ টি বাল্কহেড জব্দ করা হয়। পাশাপাশি দুজনকে একবছর করে সাজা দেওয়া হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত থেকে ফেরার পথে ইজারাদার ও ভৈরব উপজেলা বিএনপির সভাপতির ভাই তারেকের নেতৃত্বে ৭/৮ জন স্পিডবোট দিয়ে এসে আমি যে ড্রেজারে ছিলাম সেটিসহ আমাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে ড্রেজারের সাথে লাগানো স্পিডবোট দিয়ে আমরা চলে আসি। তারা জব্দ করা একটি ড্রেজার ও দুটি ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় আমরা আশুগঞ্জ থানায় মামলা জমা জমা দিয়েছি।’
মামলার অভিযোগে বলা হয়, অভিযানে জব্দকৃত প্রতিটি ড্রেজার ও বান্ধহেডে একজন করে পুলিশ ও আনসার সদস্য রেখে এগুলোকে আশুগঞ্জ তীরে আনা হচ্ছিল। উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পুলিশের এএসআই, এটিএন বাংলার সাংবাদিক ইসহাক সুমন ও মামলার বাদী গাড়িচালক মো. জীবন মিয়া সবার পেছনে থাকা মো. মামুন মিয়ার মালিকানাধীন ‘মরিয়ম’ নামের ড্রেজারে ছিলেন। ড্রেজারটি আশুগঞ্জ নদী তীরের কাছাকাছি আসার পর তারেকের নেতৃত্বে অন্যরা একটি স্পিডবোটে করে এসে ওই ড্রেজারে ওঠে। তারা জোরপূর্বক ড্রেজারটি ভৈরবের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় মো. রাজু মিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ তার সংঙ্গীদের হত্যার হুমকি দেয় এবং ভৈরব থেকে লোক এনে ক্ষতি করবে বলে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এসময় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে দুর্ব্যবহার করে এবং জব্দকৃত দুটি ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। তাদের মারমুখী আচরণে আমরা ভীত হয়ে আমাদের সাথে থাকা স্পিডবোটে করে আশুগঞ্জে ফিরে আসি। এরপর জব্দকৃত ‘মরিয়ম’ নামের ড্রেজারটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়।