রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক (নুরাল পাগল) নামের এক ব্যক্তিকে মাটি থেকে কয়েক ফুট উঁচুতে কবর দেওয়ায় আপত্তি তুলেছে একটি পক্ষ। শরিয়তবিরোধী অভিযোগ তুলে বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছে জেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
গত ২৩ আগস্ট ভোরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় নুরুল হকের মৃত্যু হয়। ওই দিন দরবারে এলাকাবাসীর অংশগ্রহণে প্রথম জানাজা ও ভক্তদের অংশগ্রহণে দ্বিতীয় জানাজা পড়ান হয়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী কয়েক ফুট উঁচুতে তাঁকে দাফন করা হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ হন স্থানীয় আলেম সমাজ।
গতকাল বুধবার দুপুরে রাজবাড়ী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে আলেমরা হুঁশিয়ারি দেন, আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কবর স্বাভাবিক করতে হবে। না হলে ১২ সেপ্টেম্বর জুমা নামাজের পর ‘মার্চ ফর গোয়ালন্দ’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হল। এর মাধ্যমে কবর ও দরবার গুড়িয়ে দেওয়া হবে। এর আগে আগামীকাল শুক্রবার পাঁচ উপজেলায় তৌহিদী জনতাকে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাজবাড়ী জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির ও রাজবাড়ী-১ আসনের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. নুরুল ইসলাম, ডা. আবুল হোসেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ চৌধুরী আহসানুল করিম হিটু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ রাজবাড়ী জেলা শাখার সেক্রেটারি আরিফুল ইসলাম, জাতীয়তাবাদী ওলামাদল জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আনাস খান, খেলাফত মজলিসের জেলা শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. ইউসুফ নোমানী, রাজবাড়ী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য সচিব মোবাইদুর রহমান মিরাজ, চেম্বার অব কমাসের্র পরিচালক মো. নাসির মিয়া, এনসিপির সংগঠক আব্দুল্লাহ আল মামুন, খেলাফত যুব মজলিসের সভাপতি মুফতি আবু তাহের, খেলাফত মজলিসের সহ-সভাপতি আ. গাফফার, ইমাম হাফেজ মাওলানা আ. কুদ্দুস মিয়াসহ আরও অনেকে। পরে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
এসময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রাজবাড়ী জেলা ইমাম কমিটির সভাপতি হাফেজ মাওলানা মো. ইলিয়াস আলী মোল্লা। তিনি বলেন, আশির দশকে নূরাল পাগল নিজেকে ইমাম মেহেদী দাবি করেন।
আন্দোলনের মুখে ১৯৯৩ সালে মুচলেকা দিয়ে এলাকা ছাড়েন। পরে আবার দরবারের কার্যক্রম চালু করেন। মৃত্যুর আগে তিনি কাবা শরীফের আদলে উঁচু বেদি নির্মাণ করেন। গত ২৩ আগস্ট মৃত্যুর পর ওই বেদিতে বিশেষ কায়দায় দাফন করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, তাকে দক্ষিণমুখী মাথা দিয়ে দাফন করা হয়েছে, যা ইসলামী শরীয়তের পরিপন্থী।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় কবর স্বাভাবিক করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এজন্য সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সমাধান না হলে বিক্ষোভ এবং কবর গুঁড়িয়ে দেওয়ার কর্মসূচি পালন করা হবে।
এ বিষয়ে নুরুল হকের পরিবারের সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, নুরুল হক কখনো নিজেকে ইমাম মেহেদী দাবি করেননি। তাঁর ওসিয়ত মোতাবেক কিছুটা উচুঁ করে ইসলামের বিধান মেনে দাফন করা হয়েছে। গোয়ালন্দ দরবার শরীফে শরিয়তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো কার্যকলাপ হয় না। এরই মধ্যে আলেম উলামাদের বিভিন্ন দাবির প্রেক্ষিতে দরবারে বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। কবর নিচু করার যে কথা বলা হয়েছে, সেটাও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। একটি মহল দরবারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ছড়াচ্ছে।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদুর রহমান জানান, আলেম-ওলামাদের দাবির প্রেক্ষিতে গোয়ালন্দ দরবার শরীফ কর্তৃপক্ষ আমাদের আশ্বস্ত করেছে, নুরুল হকের কবর নিচু করার কাজ তারা এরই মধ্যে শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবারের মধ্যে তাদের এই কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এলাকায় যাতে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে ব্যাপারে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
সূত্র : সমকাল