কক্সবাজার শহরের বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে শুক্রবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ‘ডিসি গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০২৫ ’ এর ফাইনাল ম্যাচ। তবে ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই কয়েক হাজার দর্শক স্টেডিয়ামের গেট ভেঙে মাঠে ঢুকে পড়েন। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দর্শকদের সরানোর চেষ্টা করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকালে কক্সবাজার জেলা শহরের বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুরো স্টেডিয়াম এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। চারপাশে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।
খেলায় প্রধান অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মাহবুব উল আলম। সংঘর্ষের পর তাঁকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠের ভেতর থেকে লোকজন সরানোর চেষ্টা করলে ধাক্কাধাক্কি ও লাঠিচার্জ হয়। এরপর বিক্ষুব্ধ দর্শকেরা গ্যালারি, দরজা-জানালার কাচ ও প্রেসবক্স ভাঙচুর করেন। বাইরে কাঠ ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এতে অন্তত ৩০ জন আহত হন, যাঁদের মধ্যে ১০–১২ জনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ যৌথভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
দর্শকদের অভিযোগ, স্টেডিয়ামটির সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা হচ্ছে মাত্র ১০ হাজার দর্শকের। ইজারাদার সিন্ডিকেট ধারণ ক্ষমতার তিনগুণ বেশি প্রায় ৩০ হাজার দর্শকের কাছে টিকিট বিক্রি করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
একেকটি টিকিট ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গ্যালারিতে বসার স্থান না পেয়ে গেইট ভেঙে বেলা আড়াইটার দিকে পুরো মাঠ দখলে নেন দর্শকরা। এতে খেলার জায়গাটিও খালি ছিল না।
আয়োজক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, খেলা পরিচালনার জন্য আগে থেকেই পর্যাপ্ত সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন রাখা হয়নি। দর্শকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ভাঙচুর শুরু করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি এক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু মাঠে থাকা দর্শকদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাঠি চার্জ করলে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো জসিম উদ্দিন চৌধুরী জানান, স্টেডিয়ামে খেলা শুরুর আগেই গ্যালারি ছাড়িয়ে খেলার মাঠটিও দর্শকদের দখলে চলে গিয়েছিল। দর্শকদের সরাতে গিয়েই এসব ঘটনা ঘটে।
গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা ছিল শুক্রবার। রামু ও টেকনাফ উপজেলা একাদশের মধ্যে বেলা ৩টায় ফাইনাল ম্যাচ শুরু হওয়ার কথা। সকাল ৭টা থেকে স্টেডিয়ামে গিয়ে টিকিট সংগ্রহ শুরু করেন দর্শকরা। টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারিত থাকলেও দর্শকের উপস্থিতি দেখে ক্রমাগত বাড়তে থাকে। বেলা ২টা পর্যন্ত আয়োজক কমিটির অতিরিক্ত মূল্যে ধারণক্ষমতার তিনগুণ টিকিট বিক্রি করে দেয়।