জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ছাত্রদলসহ ৫টি প্যানেল নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। ফের নির্বাচন কমিশন গঠন করে তফসিল ঘোষণাসহ পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে অনেকে। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দীর্ঘ ৩৩ বছর পর জাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে প্রথম ভোট বয়কট করে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল।
ছাত্রদলের বর্জনের পর বর্জনের তালিকায় যুক্ত হয় বামপন্থি সংগঠনের চার প্যানেল। এই চারটি প্যানেল হলো- ‘সম্প্রীতির ঐক্য’, ‘সংশপ্তক পর্ষদ’, ‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’ ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আংশিক প্যানেল। বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী তাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। অভিযোগের তীর প্রশাসন ও নির্বাচন আয়োজকদের বিরুদ্ধে। রয়েছে পক্ষপাতিত্বেরও অভিযোগ। আট প্যানেলের পাঁচটি ভোট বর্জন করায় এই নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই পাঁচটি প্যানেলের প্রার্থীরা পুনর্নির্বাচনের দাবিও তুলেছেন।
এদিকে অনিয়মের অভিযোগ তুলে জাকসু নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন বিএনপিপন্থি ৩ শিক্ষক। তারা হলেন অধ্যাপক নাহরীন ইসলাম খান, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক শামীমা সুলতানা।
ড. নাহরীন ইসলাম খানের অভিযোগ, ভোট প্রদানের পর আঙুলে অমোচনীয় কালি ব্যবহার করার কথা থাকলেও যে কালি দেয়া হচ্ছে তা উঠে যাচ্ছে। এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছেন বলে দাবি তার।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের বরাতে কালি ব্যবহার না করারও অভিযোগ তোলেন এই শিক্ষক। তিনি বলেন, ভোটের নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে হাতে ব্যালট পেপার ও হাতে কালি দেয়ার কথা। এরপর বাক্সে ভোট প্রদান। কিন্তু ভোট দেয়ার পর এক্সিট করার সময় বাইরে থেকে কেউ হাতে কালি লাগিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
জাকসু)ও হল সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রদল। বৃহস্পতিবার রাত সোয়া নয়টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই মিছিল বের করে সংগঠনটি। মিছিলটি ক্যাম্পাসের নতুন কলাভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে জাকসু নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ের সামনের সড়ক হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ চত্বরের দিকে যায়। এ সময় ‘বয়কট বয়কট, জাকসু বয়কট’, ‘প্রহসনের জাকসু, বয়কট বয়কট’- এমন শ্লোগান দেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
এর আগে বেলা পৌনে ৪টায় ভাসানী হলে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় ছাত্রদল। জামায়াতে ইসলামীর কোম্পানি থেকে নেওয়া ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে এবং তাতে কারচুপির পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ করে বিএনপির এই ছাত্রসংগঠন।
এদিকে ভোট বর্জনের প্রতিক্রিয়ায় ইসলামী ছাত্রশিবির বলছে, ভোট বর্জন গণতন্ত্রের জন্য সুন্দর নয়। ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত শিবির ভোটের মাঠে থাকবে। শিক্ষার্থীরা যে রায় দেবে, সেটি তারা মেনে নিতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, এবারের নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ১১ হাজার ৮৯৭ জন। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫ পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছিলেন ১৭৭ প্রার্থী। বামপন্থি, শিবির, ছাত্রদল ও স্বতন্ত্রদের সমর্থিত মিলিয়ে সর্বমোট আটটি প্যানেল ছিল এবারের জাকসু নির্বাচনে।