সেপ্টেম্বরে ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ৮ ঘন্টা আগে

আগস্টে কমলেও সেপ্টেম্বেরে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে বাংলাদেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এতে খাদ্য খাতের চেয়ে খাদ্যবহির্ভূত খাতের ভূমিকাই বেশি। সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এই চিত্র উঠে এসেছে।

বিবিএসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বরে জাতীয় পর্যায়ে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৮.৩৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গত আগস্টে ছিল ৮.২৯ শতাংশ। আর গত বছরের সেপ্টেম্বরে এই হার ছিল ৯.৯২ শতাংশ।

গত সেপ্টেম্বরে খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে যথাক্রমে ৭.৬৪ ও ৮.৯৮ শতাংশ, যা আগস্টে ছিল যথাক্রমে ৭.৬০ ও ৮.৯০ শতাংশ। আর গত বছরের সেপ্টেম্বরের এই হার যথাক্রমে ১০.৪০ ও ৯.৫০ শতাংশ।

এদিকে গ্রামীণ পর্যায়ে গত সেপ্টেম্বরে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮.৪৭ শতাংশ, যা আগস্টে ছিল ৮.৩৯ শতাংশ। এই হার ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ছিল ১০.১৫ শতাংশ।

গত মাসে গ্রামে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে যথাক্রমে ৭.৫৪ ও ৯.৪০ শতাংশ, যা আগস্টে ছিল যথাক্রমে ৭.৫০ ও ৯.২৮ শতাংশ এবং গত বছরের সেপ্টেম্বরে ছিল যথাক্রমে ১০.৩৮ ও ৯.৯১ শতাংশ।

আর শহর পর্যায়ে গত মাসে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮.২৮ শতাংশ, যা আগস্টে ছিল ৮.২৪ শতাংশ। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ছিল ৯.৮৩ শতাংশ।

গত মাসে শহরে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে যথাক্রমে ৭.৯৪ ও ৮.৫১ শতাংশ, যা গত আগস্টে ছিল ৭.৮৭ ও ৮.৪৯ শতাংশ। এই হার ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ছিল যথাক্রমে ১০.৫০ ও ৯.৩৮ শতাংশ।

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের আগস্টে দেশের সামগ্রিক (পয়েন্ট টু পয়েন্ট) মূল্যস্ফীতি ছিল ৮.২৯ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯.৩ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত খাতে ৭.১ শতাংশ। খাদ্যশস্য, পেঁয়াজ, চাল, তেল ও ডিমের দাম স্থিতিশীল হলেও শাকসবজি, মাংস ও দুধজাত পণ্যের দাম উচ্চ থাকার কারণে সামগ্রিক সূচকে উল্লেখযোগ্য চাপ রয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের বাজার তদারকি ও খাদ্য মজুত বাড়ানোর উদ্যোগ কিছুটা ফল দিয়েছে, তবে কাঠামোগত ব্যয়বৃদ্ধি ও মুদ্রার অবমূল্যায়ন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে নীতিগত সুদহার অপরিবর্তিত রেখে মুদ্রাসরবরাহ সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে— যাতে দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রকাশিত এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭ শতাংশ, গত অর্থবছরে গড় বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতি ছিল ১০ শতাংশে— যা অন্তত ২০১৩ সালের পর সর্বোচ্চ। একই সময়ে মালদ্বীপ ও পাকিস্তানে এই হার ৪.৫ শতাংশ, নেপালে ৪.১ শতাংশ এবং ভারত ও ভুটানে আরও কম।

এডিবি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। তবে সেই সঙ্গে সতর্ক করে বলেছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সেটিও হবে সর্বোচ্চ হার।

অবশ্য দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক অর্থনীতি ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার পথে এগোচ্ছে। তবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মতো দেশে খাদ্য ও জ্বালানি খাতে মূল্যস্ফীতি এখনও বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে আছে। বিপরীতে, ভারত ও শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতা দেখাচ্ছে— কঠোর মুদ্রানীতি, কার্যকর বাজার তদারকি এবং উৎপাদন উৎসাহমূলক নীতি গ্রহণ করলে মূল্যস্ফীতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে খাদ্য ও জ্বালানির অভ্যন্তরীণ ব্যয়ই মূল চালক হিসেবে কাজ করছে। অপরদিকে, ভারতে কৃষি উৎপাদনের ধারাবাহিকতা ও বাজার ব্যবস্থাপনার দক্ষতা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করছে। শ্রীলঙ্কা ব্যয় সংকোচন ও কঠোর নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত পুনরুদ্ধারে সফল হয়েছে।

  • ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি
  • #