নতুন করে উত্তেজনা আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে। আফগান সরকারের দাবি, গত শনিবার রাতে তাদের প্রতিশোধমূলক হামলায় পাকিস্তানের ৫৮ সেনাসদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। পাকিস্তানের তরফে তাদের ২৩ সেনা নিহত ও ২৯ জন আহতের কথা স্বীকার করা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশটি বলছে, তাদের পাল্টা অভিযানে ‘দুই শতাধিক তালেবান ও সংশ্লিষ্ট যোদ্ধা’ নিহত হয়েছে। এ ছাড়া আফগান সীমান্তের ১৯টি ফাঁড়ির দখল নিয়েছে তাদের সেনারা।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিমান হামলায় কয়েকজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এর দুই দিন পর গত শনিবার রাতে সীমান্তবর্তী এলাকায় উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গোলাবিনিময় শুরু হয়। আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এনায়েতুল্লাহ খোয়ারিজমি বলেন, তাঁর দেশের পক্ষ থেকে এটি ছিল সফল প্রতিশোধমূলক অভিযান।
আফগান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, অভিযানে পাকিস্তানের ২০টি নিরাপত্তা ফাঁড়ি ধ্বংস হয়েছে এবং বহু অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম দখলে এসেছে। এ সময় আফগান বাহিনীরও ৯ সদস্য নিহত ও ১৬ জন আহত হয়েছেন। একপর্যায়ে বন্ধুরাষ্ট্র কাতার ও সৌদি আরবের অনুরোধে রাত ১২টার পর অভিযান বন্ধ করা হয়। তবে আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের যেকোনো চেষ্টা বিনা জবাবে ছেড়ে দেওয়া হবে না বলে জানান মুজাহিদ।
পাকিস্তানের দাবি, কাবুলের উসকানিতে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি বলেন, আফগান হামলা অযৌক্তিক ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। কেননা, তারা বেসামরিক ব্যক্তিদের ওপরও গুলি চালিয়েছে। তাঁর ভাষায়, ‘আফগানিস্তান যদি ইট ছোড়ে, আমরা পাথর ছুড়ে জবাব দেব।’
আফগানিস্তানের অভিযোগ, পাকিস্তানই আইএস-খোরাসানকে আশ্রয় দিচ্ছে এবং খাইবার পাখতুনখাওয়ায় তাদের প্রশিক্ষণকেন্দ্র গড়ে তুলেছে। সম্প্রতি ইরান ও রাশিয়ায় আইএস-খোরাসানের হামলাগুলোর পরিকল্পনাও হয়েছে ওই ঘাঁটিগুলো থেকে। অন্যদিকে পাকিস্তান বলছে, আফগানিস্তান তার মাটিতে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) সদস্যদের আশ্রয় দিচ্ছে, যারা ইতিপূর্বে দফায় দফায় পাকিস্তানে হামলা চালিয়েছে। ভারতের সহযোগিতায় তারা পাকিস্তানে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে।
গতকাল রাতের সংঘর্ষের পর পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তের দুই প্রধান পথ তোরখাম ও চামান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে দুই পাশে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়েছে। সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে গতকালও বিচ্ছিন্নভাবে গুলিবিনিময়ের কথা জানিয়েছে বিবিসি।
এমন সময়ে দুই প্রতিবেশী দেশ এই সংঘাতে জড়িয়েছে, যখন আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি ভারত সফরে গেছেন। ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর এটিই তাঁর প্রথম দিল্লি সফর।