ফরিদপুরের নগরকান্দায় একটি বিচারগানের আসর বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এ সময় প্যান্ডেলও খুলে ফেলা হয়।নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দবির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, বুধবার তালমা ইউনিয়নের রসুলপুর বাজারে বিচারগানের আয়োজন করা হয়েছিল। ‘অনুমতি না থাকায় এবং কিছু মানুষের আপত্তির কারণে’ সন্ধ্যা ৭টায় গিয়ে অনুষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। এ সময় সেখানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুম বিল্লাহ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজকরা বলছেন, তালমা ইউনিয়ন পরিষদের আট নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সলেমান ফকিরের উদ্যোগে এই বিচারগানের আয়োজন করা হয়। দুই দিন ধরে এলাকায় মাইকিংও করা হয়। এজন্য প্যান্ডেল ও মঞ্চও নির্মাণ করা হয়। এ আয়োজন উপলক্ষে প্যান্ডেল প্রাঙ্গণে বিভিন্ন দোকানও বসে। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পর অনুষ্ঠান শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে তা বন্ধ করার নির্দেশ দেয় প্রশাসন।
আয়োজক সলেমান ফকির বলেন, স্থানীয়দের অনুরোধে আমি এক দিনের জন্য এ বিচারগানের আয়োজন করেছিলাম। আমাদের এলাকায় আগে থেকেই এই ধরনের আয়োজন হয়ে আসছে। এখানে আমি কোনো দোষের কিছু দেখি না। কিন্তু হুজুররা বিচারগানের অনুষ্ঠানটিকে ‘যাত্রাপালা’ হিসেবে প্রচার করে এবং ইউএনওকে দিয়ে আমার সব আয়োজন শেষ হওয়ার পরও তা বন্ধ করে দিলেন। প্রশাসনের নির্দেশে প্যান্ডেলটিও খুলে ফেলা হয়েছে। এ আয়োজনের জন্য ইউএনও ও ওসির কাছ থেকে মৌখিক অনুমতি নিয়েছি।
তবে অনুমতির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন নগরকান্দা থানার ওসি রেজাউল করিম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিচারগান আয়োজনের জন্য আমার কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। ইউএনও সাহেব আমার কাছে পুলিশের সহযোগিতা চাইলে, আমি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে সহায়তা করি।
ইউএনও দবির উদ্দিন বলেন, এসব গানের জন্য আগে থেকে অনুমতি নিতে হয়। জেলা প্রশাসক এ অনুমতি দেন। এটি একদিনের ব্যাপার বিধায় আমরা তেমনটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখিনি। তবে বুধবার বিকালে দেড় শতাধিক ব্যক্তি আমার কাছে এসে বলেন, এ আয়োজন ইসলাম পরিপন্থি, এ অনুষ্ঠান বন্ধ করতে হবে। তারা বলেন, এ উদ্যোগ বন্ধ করা না হলে ওই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটতে পারে।
প্রসঙ্গত, ‘বিচারগান’ সম্পর্কে বাংলাপিডিয়ায় বলা হয়েছে, এটি এক প্রকার লোকসঙ্গীত। নির্দিষ্ট একটি বিষয় অবলম্বনে দুটি পক্ষ কথা ও সুরসহযোগে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে এ গান পরিবেশন করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বিচারগান ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত এবং এর পরিবেশনের ধরনও ভিন্ন। ঢাকা ও পূর্ব সিলেটে ‘বাউল গান’, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহে ‘ফকিরালি গান’, যশোরে ‘ধুয়া গান’, খুলনায় ‘শব্দ গান’, কুষ্টিয়ায় ‘ভাবগান’ এবং চট্টগ্রামে ‘কবিগান’ নামে পরিচিত। বর্তমানে মানিকগঞ্জ ও ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকায় বিচারগান পরিবেশিত হয়।
সূত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম