অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার ও কারা হেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) শুক্রবার প্রকাশিত মাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। সংগঠনটির মতে, এ পরিস্থিতি জনজীবনে নিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়ে তুলেছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে নতুন করে সন্দেহের জন্ম দিয়েছে।
এমএসএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অক্টোবরে ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে, যেখানে সেপ্টেম্বর মাসে এ সংখ্যা ছিল ৫২টি। উদ্ধার হওয়া লাশগুলোর বেশির ভাগই নদী, ডোবা, মহাসড়ক, রেললাইন, সেতুর নিচে বা পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া গেছে। অনেক লাশেই গলাকাটা, বস্তাবন্দি বা আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, ‘অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে, যা নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরছে। একই সঙ্গে এসব লাশের পরিচয় উদঘাটনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা উদ্বেগজনক।’
প্রতিবেদন অনুযায়ী, উদ্ধার হওয়া লাশগুলোর মধ্যে রয়েছে-এক শিশু, এক কিশোর, ১১ নারী ও ৫৩ পুরুষ। বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সি পুরুষ ও নারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
এমএসএফ বলেছে, লাশ উদ্ধার করাই দায়িত্ব নয়, বরং তাদের পরিচয় শনাক্ত করে হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াই রাষ্ট্রের কর্তব্য। অন্যদিকে, কারা হেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যাও সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেড়েছে। এমএসএফের তথ্যমতে, অক্টোবর মাসে ১৩ জন বন্দি মারা গেছেন, যা সেপ্টেম্বরের ৮ জনের তুলনায় বেশি। নিহতদের মধ্যে ৬ জন কয়েদি ও ৭ জন হাজতি।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৬ জন, কাশিমপুরে ১ জন, শেরপুরে ১ জন, খুলনা, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ কারাগারে একজন করে বন্দির মৃত্যু হয়। সব মৃত্যুই কারাগারের বাইরে হাসপাতালে ঘটে। এ বিষয়ে এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাশ উদ্ধার করেই দায়িত্ব শেষ করছে, কিন্তু পরিচয় উদ্?ঘাটন ও তদন্তের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। এই দুই ঘটনার বৃদ্ধি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি জনমনে সন্দেহ বাড়িয়েছে।’
রাজনৈতিক সহিংসতা ও গণপিটুনিও বেড়েছে : এমএসএফের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনায় ৫৪৯ জন আহত হয়েছেন এবং ২ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা বিএনপির কর্মী-সমর্থক বলে জানা গেছে। সেপ্টেম্বরে সহিংসতার ঘটনা ছিল ৩৮টি। এ ছাড়া, গণপিটুনির ৪৪টি ঘটনা ঘটেছে অক্টোবরে, যেখানে নিহত হয়েছেন ১২ জন। সেপ্টেম্বরে এ সংখ্যা ছিল ২৪। মানবাধিকার সংগঠনটি বলেছে, ‘গণপিটুনি, রাজনৈতিক সহিংসতা এবং অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের ঘটনা বৃদ্ধি একটি অসহিষ্ণু সমাজ ও আইনের শাসনের দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়।’