সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এবং সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমের জামিন বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। ফলে তাদের কারামুক্তিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
হাইকোর্টের দেওয়া জামিনের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের পৃথক আবেদন খারিজ করে আজ সোমবার বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ অনীক রুশদ হক।
লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না, আইনজীবী এম আবদুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া ও জাকির হোসেন মাসুদ। মঞ্জুরুল আলমের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন, রমজান আলী শিকদার ও আইনজীবী প্রিয়া আহসান চৌধুরী।
এ মামলায় কেন তাদের নিয়মিত জামিন দেওয়া হবে না, সে প্রশ্নে রুল দিয়ে গত ৬ নভেম্বর বিচারপতি এ এস এম আবদুল মোবিন ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ তাদের অন্তর্বর্তী জামিন দেন। পরে এই জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে পৃথক আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
কিন্তু বিচারপতি মো. রেজাউল হকের চেম্বার আদালত জামিন স্থগিত না করে আবেদন দুটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য রাখেন। সেই ধারাবাহিকতায় আজ শুনানির পর দুটি আবেদনই খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত।
সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমের আইনজীবী প্রিয়া আহসান চৌধুরী বলেন, প্রথমে আপিল বিভাগ বলেছেন, হাইকোর্টের আদেশ না আসা পর্যন্ত মঞ্জুরুল আলমের জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি এক সপ্তাহ স্ট্যান্ডওভার (মুলতবি) থাকবে। এই এক সপ্তাহ যাতে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে (মঞ্জুরুল আলমকে) মুক্তি না দেন।
এরপর লতিফ সিদ্দিকীর জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে তার জামিন বহাল রাখা হয়। কিছুক্ষণ পর জানতে পারি মঞ্জুরুল আলমের ক্ষেত্রে আগের আদেশ প্রত্যাহার করে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। অর্থাৎ মঞ্জুরুল আলমের জামিনও বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। এখন তাদের কারামুক্তিতে কোনো বাধা নেই।
প্রসঙ্গত, ‘আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সংবিধান’ শিরোনামে গত ২৮ আগস্ট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘মঞ্চ ৭১’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। সেই অনুষ্ঠানে অংশ নেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে মিছিল নিয়ে একদল ব্যক্তি ডিআরইউ মিলনায়তনে ঢুকে অনুষ্ঠানের আয়োজক এবং অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের ওপর চড়াও হয়। তারা আলোচনা অনুষ্ঠানের ব্যানার ছিঁড়ে আলোচনায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পুলিশের (ডিএমপি) একটি দল এলে অবরুদ্ধকারীরা পুলিশের কাছে লতিফ সিদ্দিকী, শেখ হাফিজুর রহমান, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমসহ অন্তত ১৬ জনকে তুলে দেন।
আটকের ১২ ঘণ্টার বেশি সময় পর গত ২৮ আগস্ট দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়। রাজধানীর শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
গত ২৯ আগস্ট ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ও সাংবাদিক মনজুরুল আলম পান্নার জামিন আবেদন নাকচ করার পর গত ৪ সেপ্টেম্বর ফের তাদের জামিন নাকচ করা হয়। এরপর তারা দায়রা জজ আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর সেখানে জামিন আবেদনটি নাকচ হলে হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন তারা।
সূত্র : কালের কণ্ঠ